এইচএসসির ফলাফল মূল্যায়নে পরিসংখ্যানিক মডেল

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশে করোনা ছোবল হানার আগেই এসএসসি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিল। এ কারণে এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীরা এইচএসসিতে ভর্তি হয়ে বর্তমানে অনলাইনে ক্লাস করছে। সমস্যা তৈরি হয়েছে এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে। দেশে সাধারণত এপ্রিলের শুরুতে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয় এবং ব্যবহারিক পরীক্ষাসহ তা শেষ হতে প্রায় দু’মাস লেগে যায়। পরীক্ষার্থী এবং এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তির সংখ্যা কয়েক লাখ। তাই করোনা পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ইতোমধ্যে সাত মাস পেরিয়ে গেছে এবং করোনা পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। আসন্ন শীতে দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন। তাই এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া যে আসলেই সম্ভব নয়, তা আমাদের কাছে পরিষ্কার।

করোনা পরিস্থিতিতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ পরীক্ষা না হওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে বা অস্বস্তিতে আছে। এপ্রিলে পরীক্ষা হলে তারা যে ফলাফল করত, দু-এক মাস পরে পরীক্ষা নেয়া যদি সম্ভবও হয়, তবুও তাদের সে ফলাফল অর্জন না করার আশঙ্কা থেকে যায়। কাজেই আমরা কাকে দোষ দেব? করোনাকেই দিতে হয়। তাই বর্তমান সরকার জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের ফলাফল মূল্যায়নের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাকে সাধুবাদ জানানো যায়। তবে ফলাফল মূল্যায়ন নিয়ে আমার একটি পরিসংখ্যানিক দৃষ্টিভঙ্গি আছে। আমি এখানে তা ব্যাখ্যা করতে চাই।

ফলাফল প্রত্যাশীদের জেএসসি ও এসএসসির বিষয়ভিত্তিক ফলাফল আলাদা করে রাখতে হবে, যা তাদের বিষয়ভিত্তিক ফলাফল প্রাক্কলনে ব্যবহার করা যাবে। বর্তমান শিক্ষার্থীদের ফলাফল বাদে বিগত অনেক বছরের জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসির বিষয়ভিত্তিক তথ্য বোর্ডগুলোর সার্ভারে রক্ষিত আছে। বাংলা বিষয়ের কথাই ধরা যাক। বাংলা বিষয়ে এইচএসসির যত তথ্য পাওয়া যাবে, সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের এসএসসি ও জেএসসিরও ততগুলো বাংলা বিষয়ে তথ্য পাওয়া যাবে। এখন এইচএসসির প্রাপ্ত নম্বরকে অধীন বা রেসপনস চলক এবং জেএসসি ও এসএসসির নম্বরকে প্রডিক্টর/স্বাধীন চলক ধরে একটি রোবাস্ট রিগ্রেশন মডেল তৈরি করা যায়। রোবাস্ট বলছি এ কারণে যে, মডেলে ব্যবহৃত কোনো শিক্ষার্থীর জেএসসির নম্বর ৯০ এবং এসএসসির নম্বর ৪০ (যাকে আউটলেয়ার বা অনিয়ন্ত্রিত নম্বর বলা যায়) যেন মডেলকে প্রভাবিত করতে না পারে। এখন প্রাপ্ত রিগ্রেশন মডেলে বর্তমান একজন পরীক্ষার্থীর জেএসসি ও এসএসসির নম্বর বসিয়ে দিলে ওই পরীক্ষার্থীর এইচএসসির প্রাক্কলিত নম্বর পাওয়া যাবে। এভাবে একজন পরীক্ষার্থীর অন্যান্য বিষয়ের নম্বরও পাওয়া যাবে। এটি হবে পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি। এটি একটি আধুনিক, বিজ্ঞানসম্মত ও স্ট্যাটিস্টটিক্যালি গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ প্রাক্কলন পদ্ধতি। ধরা যাক, কোনো শিক্ষার্থীর এইচএসসিতে পরিসংখ্যান বিষয়টি আছে। তখন এইচএসসির পরিসংখ্যানের নম্বরের সঙ্গে জেএসসি ও এসএসসির গণিতের রিগ্রেশন মডেল তৈরি করা যৌক্তিক এবং সে মডেলটি পরিসংখ্যানের নম্বর প্রাক্কলনে ব্যবহার করা যায়। অতঃপর প্রাক্কলিত নম্বরের ভিত্তিতে গ্রেডিং করা যাবে। সরকার এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট কমিটি বিষয়টি ভেবে দেখবে বলে আশা রাখছি। আর সে কারণে উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল নির্ধারণে যে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে, সে কমিটিতে পরিসংখ্যানিক মডেল তৈরিতে বিশেষজ্ঞ অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করছি।

জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলকে কাজে লাগিয়ে এইচএসসির ফলাফল প্রকাশের সরকারি সিদ্ধান্তকে আবারও সাধুবাদ জানাই। তবে তা যেন বিজ্ঞানসম্মত ও নিরপেক্ষ হয়, সেদিকে দৃষ্টি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।

ড. মো. ছিদ্দিকুর রহমান : অধ্যাপক, পরিসংখ্যান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর