মৌলভীবাজারে গোপলার কচুরিপানা কৃষকের কান্না

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে হাইল হাওরের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত গোপলা নদীর পাড়ে কৃষক চলাচলের বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় সেই ভাঙ্গা অংশ দিয়ে গত দু বছর ধরে কচুরিপানা প্রবেশ করে আটকা পড়ে কৃষকের জমিতে। ফলে দু বছর ধরে উপজেলার মীর্জাপুর ইউনিয়নের যতরপুর ও শহশ্রী এলাকায় শতাধিক কৃষক বঞ্চিত হচ্ছেন ধান চাষ থেকে।

গত দু বছর নানা আবেদন নিবেদন করেও মেরামত হয়নি বাঁধ। কচুরিপানা পরিস্কারেও আসেনি কোন সহায়তা এমন অভিযোগ শহশ্রী গ্রামের শফিক মিয়াসহ শতাধিক কৃষকের। আর এ অবস্থায় চলমান বছরেও প্রচুর পরিমান কচুরিপানা প্রবেশ করায় আগামী মৌসুমে ধান চাষ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন যতরপুর ও শহশ্রী গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।

মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মুহিত পাল জানান, গত দুই বছর ধরে উপার্জনের একমাত্র উপায় ধান চাষ না করার কারনে গ্রামের কৃষকরা অনেকেই ধার দেনা করে দিন যাপন করছেন। তিনি জানান, গোফলার দুই পাড়ে প্রায় ৮০০ বিঘা জমিতে জমে থাকা কচুরীপানা অপসারন কৃষকদের একার পক্ষে সম্ভব না এখানে সরকারের সহায়তা অতিব জরুরী। একই সাথে স্থায়ী সমাধানের জন্য আগামী শুষ্ক মৌসুমে গোপলা পাড়ের ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ মেরামতও অতি আবশ্যক।

শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাইল হাওরের যতরপুর গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ৮ শত বিঘা জমিতে জমে আছে কচুরিপানা। এই জমি থেকে এখন পানি নামছে। কচুরিপানাগুলো প্রায় দুই তিন বছর ধরে জমে থাকার কারনে এই জায়গাটি কৃষির অনুপযুক্ত হয়ে পরিত্যাক্ত ভুমিতে রুপ নিচ্ছে।

যতরপুর গ্রামের কৃষক মসুদ মিয়া জানান, তাদের গ্রামের ৯৫ ভাগ লোকই কৃষিজীবি। এর মধ্যে অনেকেই বর্গাচাষী। কচুরিপনার কারনে বিগত দুই বছর ধরে পতিত পড়ছে প্রায় ৪শত বিঘা জমি। একই গ্রামের কৃষক আকবর আলী জানান, এখনই কচুরিপানা গুলোকে সরিয়ে না দিলে এবছরও ওই জমি পতিত থাকবে। তিনি জানান, এই গ্রামটি এমনিতেই একটি দারিদ্র পিঁড়িত। এবছরও ক্ষেত করতে না পারলে এতে কৃষকরা পথে বসে যাবেন। তাই সরকারী খরচে এখনই কচুরিপানা নদীতে নামিয়ে দিতে হবে।

যতরপুর গ্রামের কৃষক মসুদ মিয়া আরো বলেন, যতরপুর গ্রামের পাশের হাইল হাওরের এই অংশটিতে তারা বুরে‌্যা ধান চাষ করেন। এই বুরে‌্যা ধানই তাদের উপার্জন এর উৎস। গত দুই বছর ধরে তারা ধান চাষ করতে পারছেন না। বার বার অনেক জায়গায় আবেদন করেও কোন সুরাহা হচ্ছে না। ধান চাষ না করার কারনে তাদের ঘরে খাবার নেই। অনেক কষ্টে দিন যাপন করছেন। সরকারের কাছে অনুরোধ তাদের কৃষদের বাচাতে অতিদ্রুত এই কচুরীপানাগুলো অপসারণ করা হোক।

অপর দিকে শহশ্রী গ্রামের কৃষক কিতাব আলী জানান, হাইল হাওরের শহশ্রী গ্রামের গোফলা নদীর পশ্চিম পাশের বাধটি বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে যাওয়ায় শহশ্রী গ্রামের হাইল হাওরের অংশ ও গ্রামের কৃষি খেতগুলোতে কচুরিপানা বাধের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে খেতের ভিতর জমা হয়েছে। এতে ব্যহত হচ্ছে কৃষি কাজ। তিনি জানান, গত বছর প্রায় ১০ কিয়ার জমি তিনি চাষ করতে পারেননি। যদি কচুরিপানা না সরানো হয় তাহলে এবছরও আশা নেই ।

একই গ্রামের কৃষক রশিদ মিয়া জানান, গোফলার পশ্চিম পাড়ে যতরপুর পাচাউন পুরাতন ফেরীঘাট থেকে বড়ছড়ার মূখ পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার বাঁধের বিভিন্ন অংশ ভেঙ্গে এই কচুরিপানা প্রবেশ করে। এর স্থায়ী সমাধান হচ্ছে এই বাঁধটি মেরামত।

স্থানীয় মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদ এর ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য মোহিত পাল আরো বলেন, আমার ইউনিয়নের এই জায়গাটিতে কৃষকরা একমাত্র ধান চাষাবাদ করেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এখানে পুরো হাইল হাওরের সব কচুরীপানা জমা হয়ে থাকার কারনে শুকনো মৌসুমে কচুরীপানা সরানো সম্ভব হয় না। গোফলা নদীর পশ্চিম পাশের বাধগুলো ঠিক করা হয়না কয়েক বছর ধরে। এই বাধ ভাঙ্গার জন্য শহশ্রী গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ধানের খেতে কচুরীপানা ও ময়লা আর্বজনা জমে চাষ ব্যহত হচ্ছে। এই বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে এগিয়ে আসতে হবে। আর কচুরিপানা অপসারণ কাজটি উপজেলা পরিষদের পক্ষে থেকে অপসারণ করে দিলে কৃষকদের অনেক উপকার হবে।

এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি বলেন, তিনি জায়গাটি পরিদর্শন করে এসেছেন। যতরপুর গ্রামে প্রায় তিন হাজার জনগন রয়েছে যাদের একমাত্র জীবিকা নির্বাহ হয় ধান চাষাবাদ করে। তারা যে জায়গাটিতে ধান চাষ করে সেই জায়গায় গত দু বছর ধরে কচুরিপানা জমা হওয়ার কারনে তারা সেখানে চাষাবাদ করতে পারছে না। যে পরিমান কচুরিপানা জমা হয়েছে তা কৃষকরা সরাতে পারছে না। তাদের পক্ষে এটা সম্ভবও নয়। বিষয়টি তিনি উর্ধতন কর্মকর্তাদের অবগত করবেন।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী জানান, এলাকা থেকে গোপলা নদী খনন প্রকল্প নিতে পারলে একই সাথে খনন এবং বাঁধ মেরামত দুটোই হবে। এ ক্ষেত্রে এলাকা থেকে বাঁধ মেরামত এবং নদী খননের প্রয়োজনীয়তা জানিয়ে আবেদন করতে হবে।

এ ব্যপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, বিষটি খোজ নিয়ে এ ক্ষেত্রে কৃষদের জন্য যা যা করনীয় তিনি সে উদ্যোগ নিবেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর