প্রবীণদের সময় কাটুক আনন্দে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মানুষের গড় আয়ু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রবীণদের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৯৯০ সালে বিশ্বে প্রবীণদের সংখ্যা ছিল ৫০ কোটি। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১০ কোটিতে।

২০৩০ সালে এর সংখ্যা হবে ১৫০ কোটি এবং ২০৫০ সালে প্রবীণদের সংখ্যা ২০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রবীণদের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। ২০২৫ সালে প্রবীণদের সংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়ে যাবে।

এক বেসরকারি জরিপে জানা যায়, বর্তমানে দেশে প্রায় ৫০ লাখ প্রবীণ অসুস্থ, অসহায়, অবহেলিত, নিঃসঙ্গ ও সেবাহীন জীবনযাপন করছেন। বর্তমান সমাজে সবচেয়ে অবহেলার শিকার এখন অসহায় প্রবীণরাই; কিন্তু ক্রমবর্ধমান বার্ধক্যের অসহায়ত্ব মোকাবেলা করার মতো প্রস্তুতি আমাদের নেই। অসহায় প্রবীণদের কল্যাণের বিষয়ে এখনই আমাদের উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। বার্ধক্য হচ্ছে প্রতিটি মানুষের অবধারিত সমস্যা।

আজকের নবীনই আগামী দিনের প্রবীণ। তাই শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রবীণদের দেখভাল করতে হবে। আর এখন থেকেই নিজেদের স্বস্তিময় বার্ধক্যের প্রস্তুতি নিতে হবে। এর জন্য দরকার গণসচেতনতা, আর এই গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রবীণদের অবহেলা, অযত্ন, দুর্ব্যবহার, নির্যাতন না করা এবং সবার করণীয় বিষয়গুলো পাঠ্যসূচি ও গণমাধ্যম কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে প্রবীণদের প্রতি কিছুটা হলেও সম্মান প্রদর্শন করা হবে।

সামাজিক মূল্যবোধ এবং ধর্মীয় অনুশাসনের অভাবে আমাদের দেশে বৃদ্ধ পিতা-মাতা কত অসহায় অবস্থায় জীবনযাপন করেন, বাইরে থেকে সেটা বোঝা যায় না। অনেক সময় বৃদ্ধ পিতা-মাতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাড়ি পাহারা, সন্তান দেখাশোনা, বাজার করানো, সন্তানকে স্কুলে পাঠানো, ধমক দিয়ে কথা বলা, অপমানজনক আচরণ করা, চিকিৎসা না করানো, বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে আলাদা রাখা, এমনকি শেষ সম্বল পেনশনের টাকা, জমি-জায়গা-বাড়ি পর্যন্ত জোর করে লিখে নেয়া হয়।

অনেক বাবা-মা সন্তান ও পুত্রবধূর কাছ থেকে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। তাছাড়া পারিবারিক বা সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বা দাওয়াতে পরিবারের সব সদস্য অংশগ্রহণ করলেও অনেকে বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে ঝামেলা মনে করে সঙ্গে নিতে চায় না। প্রবীণদের থাকার জায়গাও অনেক সময় নিম্নমানের হয়ে থাকে। অনেক সন্তানের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন অজুহাতে অসুস্থ পিতা-মাতার খোঁজখবর পর্যন্ত নিতে চায় না।

এসব থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার একটাই উপায়- কষ্টের বৃদ্ধাশ্রম নয়, প্রত্যেক উপজেলায় প্রবীণদের আনন্দের সঙ্গে বসবাস করার জন্য ‘আনন্দ কেন্দ্র’ গড়ে তুলতে হবে, যেখানে স্বেচ্ছায় প্রবীণরা থাকতে চাইবেন। উপজেলা শহরের কাছাকাছি কমপক্ষে পাঁচ একর জমির ওপর এই ‘আনন্দ কেন্দ্র’ গড়ে তুলতে হবে। সেখানে থাকবে প্রবীণদের সুচিকিৎসার জন্য হাসপাতাল, ভালো নার্সিং ব্যবস্থা, ভালো মানের খাবার, বিনোদনের ব্যবস্থা, প্রার্থনার জন্য মসজিদ-মন্দির, খেলার মাঠ, ব্যায়ামাগার ইত্যাদি।

থাকবে ভালো আবাসনের ব্যবস্থা। সেখানে যে কোনো প্রবীণ ব্যক্তি স্বেচ্ছায় থাকতে পারবেন। যাদের দেখার কেউ নেই, তারা স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে বা একা থাকতে পারবেন। ধনী প্রবীণরা ভাড়া বা খরচ দিয়ে থাকতে পারবেন। গরিব অসহায় প্রবীণরা সরকারি খরচে থাকবেন।

একই বয়সে অনেকে একসঙ্গে থাকার কারণে প্রবীণরা আনন্দে থাকতে পারবেন। এতে সন্তান, আপনজনেরা দেশে-বিদেশে যেখানেই থাকুক না কেন, বাবা-মা ভালো আছেন ভেবে তারাও নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন। প্রয়োজনে সন্তান, আপনজন বিদেশ থেকে এসে কিছুদিন আনন্দ কেন্দ্রে বাবা-মাকে সঙ্গ দিতে পারবেন। প্রয়োজন হলে প্রবীণ ব্যক্তিরা স্বেচ্ছায় কিছুদিন নিজের বাড়িতে, কিছুদিন আনন্দ আশ্রয়ে থাকতে পারবেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর