করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কম ঝুঁকিতে ডেঙ্গু রোগীরা: গবেষণা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব রয়েছে এমন সব এলাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের হার কম বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা। সম্প্রতি ব্রাজিলে চালানো এক গবেষণা থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক ব্রাজিলে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে, মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু থেকে আরোগ্য পাওয়া ব্যক্তিরা কিছু মাত্রায় কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করেছেন।

গবেষণাটির এই ফলাফল সত্যি হলে ডেঙ্গুর নিরাপদ ভ্যাকসিন ব্যবহার করে কিছু মাত্রায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। গবেষণাকর্মটি এখনো কোথাও প্রকাশ করা হয়নি। শিগগিরই গবেষণা কর্মটি বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশের জন্য উপস্থাপন করা হবে।

বিশ্বের অন্যতম করোনা কবলিত দেশ ব্রাজিলে প্রায় প্রতিবছরই ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রকোপ দেখা যায়। ফলে ২০১৯ ও ২০২০ সালে ব্রাজিলের যেসব অঞ্চলে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা গেছে সেসব অঞ্চলে করোনাভাইরাস আক্রান্তের হার তুলনা করে দেখেন গবেষকেরা। এতে দেখা যায়, এই বছর কিংবা আগের বছর যেসব এলাকা ডেঙ্গুর তীব্র প্রকোপ প্রত্যক্ষ করেছে সেসব এলাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের হার কম আর সেখানে আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে ধীর গতিতে।

গবেষণাটির ফলাফলে বলা হয়েছে, ‘এই আকর্ষণীয় অনুসন্ধানটি ডেঙ্গুর ফ্লাভিভাইরাস সেরোটাইপস (ডেঙ্গুর অ্যান্টিবডি) এবং সার্স-কোভ-২ (করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি) এর মধ্যে প্রতিরোধগত আন্তঃমিথষ্ক্রিয়ার সম্ভাবনা চমৎকারভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে।’ এতে বলা হয়, ‘যদি সঠিক প্রমাণিত হয় তাহলে এই অনুমানের অর্থ হবে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর হয়ে উঠতে পারে ডেঙ্গু সংক্রমণ কিংবা ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন করোনার বিরুদ্ধেও কিছু মাত্রায় কার্যকর হয়ে উঠতে পারে।’

গবেষণা দলের নেতা ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিগুয়েল নিকোলেলিস বলেন, নতুন এই গবেষণাটি বিশেষ কৌতুহল তৈরি করেছে কারণ আগের গবেষণায় দেখা গেছে যেসব মানুষের রক্তে ডেঙ্গুর অ্যান্টিবডি রয়েছে তাদের কোভিড-১৯ এর অ্যান্টিবডি পরীক্ষায় ভুয়া পজিটিভ ফলাফল এসেছে। এমনকি এসব ব্যক্তি কখনো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হলেও ভাইরাসটির অ্যান্টিবডি পরীক্ষায় তাদের দেহে সেটি (ভুলভাবে) শনাক্ত হয়েছে।

‘এর মাধ্যমে দুটি ভাইরাসের মধ্যে প্রতিরোধগত মিথষ্ক্রিয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, যা কেউ আশা করতে পারেনি কেননা এই দুটি ভাইরাস সম্পূর্ণ আলাদা পরিবারের,’ বলেন অধ্যাপক মিগুয়েল নিকোলেলিস। তবে এই সংযোগ প্রমাণ করতে আরও গবেষণার প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

নতুন এই গবেষণাটি প্রকাশের জন্য শিগগিরই বৈজ্ঞানিক জার্নালে উপস্থাপন করা হবে অধ্যাপক মিগুয়েল নিকোলেলিস বলেন, মূলত ব্রাজিলে এই গবেষণাটি চালানো হয়। তবে ডেঙ্গু এবং করোনাভাইরাসের মধ্যকার একই ধরনের সংযোগ লাতিন আমেরিকা, এশিয়া এবং প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরের কয়েকটি দ্বীপেও পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।

মানচিত্রের নির্দিষ্ট কয়েকটি স্থানে একজনও আক্রান্ত দেখতে না পেয়ে এর সম্ভাব্য ব্যাখ্যা অনুসন্ধান শুরু করে গবেষক দল। পরে ডেঙ্গুর প্রকোপের সঙ্গে করোনার প্রাদুর্ভাব তুলনা করতে গিয়ে সাফল্য পায় দলটি। অধ্যাপক নিকোলেলিস বলেন, ‘এটা ছিল আমাদের জন্য একটি ধাক্কা। সম্পূর্ণ দুর্ঘটনা। বিজ্ঞানে এটা ঘটে, আপনি হয়তো একটি জিনিস খুঁজছেন কিন্তু এমন কোনো কিছু পেয়ে গেলেন যা হয়তো কখনোই কল্পনা করতে পারেননি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর