শাকিব মাহিসহ শোবিজের অনেকেই পারিশ্রমিক কমিয়েছেন কণ্ঠশিল্পীরা নারাজ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনাকালে পারিশ্রমিক কমিয়েছেন অভিনয়শিল্পীসহ শোবিজের অনেকেই। তবে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পীরা এ ক্ষেত্রে খুব একটা মনোযোগ দিচ্ছেন না—অভিযোগ চলচ্চিত্র নির্মাতা ও অডিও কম্পানিগুলোর।

করোনার মাঝামাঝি ঘোষণা দিয়ে পারিশ্রমিক কমিয়েছেন শাকিব খান। ৬০ লাখ থেকে ৩০ লাখে নামেন তিনি। শাকিবের এই ঘোষণার পরপরই মাহিয়া মাহিও তাঁর পারিশ্রমিক তিন ভাগের এক ভাগ করেছেন। মুস্তাফিজুর রহমান মানিকের ‘আশীর্বাদ’ ছবির জন্য তিনি ১০ লাখের বদলে নিয়েছেন মাত্র তিন লাখ টাকা। কম যান না রোশানও। একই ছবিতে পাঁচ লাখের বদলে নিয়েছেন মাত্র এক লাখ টাকা। সাইমন-বাপ্পীরাও জানিয়েছেন, ভালো গল্প হলে নামমাত্র পারিশ্রমিকে কাজ করতে রাজি আছেন। এ তো গেল অভিনেতা-অভিনেত্রীর কথা। পারিশ্রমিক কমিয়েছেন নির্মাতারাও। মালেক আফসারী যেখানে ১০ লাখ টাকা নিতেন ছবিপ্রতি, করোনার কারণে ‘ধামাকা’ ছবির জন্য নিয়েছেন মাত্র ছয় লাখ টাকা। কাজী হায়াৎও নিয়েছেন চার লাখ টাকা। শাহীন-সুমন, শামীম আহদের রনিরা ছবি নির্মাণ করছেন দুই থেকে তিন লাখ টাকায়। অথচ কণ্ঠশিল্পীরা! কেউ কেউ পারিশ্রমিক কমানো তো দূরে থাক, উল্টো বাড়িয়েছেন। ২ সেপ্টেম্বরের কথা। ইফতেখার চৌধুরীর ছবি ‘মুক্তি’র টাইটেল গান রেকর্ডিং। পরিচালক নিজেই প্রযোজক। তাই সংগীত পরিচালক  শাহরিয়ার রাফাতও বাজেটে বিশেষ ছাড় দিয়েছেন। নোয়াখালীর ভাষায় গান হওয়ায় নির্মাতা পছন্দ করলেন কণ্ঠশিল্পী ঐশীকে। ১০ হাজার টাকা পারিশ্রমিকে গানটি গাইয়ে নেওয়ার কথা বললেন সংগীত পরিচালককে। কারণ গেল মার্চে বদিউল আলম খোকনের ‘আগুন’ ছবিতে তিনি নিয়েছিলেন ১০ হাজার টাকা। কিন্তু ঘাপলা বাধল ঐশীকে ফোন দেওয়ার পর। তিনি জানালেন, ২০ হাজার টাকার নিচে এখন আর গানে কণ্ঠ দেন না। পরিচালক নিজেই প্রযোজক জানার পর শেষ পর্যন্ত ১৫ হাজারে রাজি হলেন। কণ্ঠও দিলেন ৪ সেপ্টেম্বর।

ঠিক এক মাস আগের ঘটনা। ছয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া ইমন সাহার কাছে সরকারি অনুদানের ছবি ‘আশীর্বাদ’-এর সংগীত করার প্রস্তাব গেল। ছবির দুটি গানের পুরো বাজেট এক লাখ টাকা। একটি গানে অন্তত ইমরান ও কনাকে রাখার আবদার করলেন প্রযোজক। প্রতি গানে ইমরান এখন পারিশ্রমিক নেন ৪০ হাজার আর কনা ২৫ হাজার টাকা। কিভাবে তাহলে এক লাখ টাকায় দুটি গান সম্পন্ন করবেন ইমন? ‘আমি সব সময় ভালো কাজের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করেছি। সরকারি অনুদান পাওয়া ছবিটির সঙ্গেও থাকতে চেয়েছি। কিন্তু একটি গানেই যেখানে শিল্পীদের পারিশ্রমিক ৬৫ হাজার টাকা, সেখানে সংগীতের আনুষঙ্গিক খরচ দেব কোথা থেকে, আরেকটি গানই বা কী করে করব! পরে প্রযোজককে বুঝিয়ে অন্য কণ্ঠশিল্পী নিয়ে গান দুটি করেছি’—বললেন ইমন সাহা।

তবে এই ঘটনা শোনার পর ইমরান বলেন, ‘আমি পারিশ্রমিক বাড়িয়েছি সত্য, কিন্তু ভালো গানও তো করতে চাই। ইমন দাদা আমাকে সরাসরি বললে কখনোই তাঁকে ফেরাতাম না। তিনি গুণী সংগীত পরিচালক। তবে একটা কথা জানিয়ে রাখতে চাই, করোনার এই পরিস্থিতিতে ক্ষেত্রবিশেষে হয়তো কিছুটা পারিশ্রমিক কমাব। তবে এটাকে কেউ সুযোগ হিসেবে নিলে খারাপ লাগবে। নিজের যে পারিশ্রমিক নির্ধারণ করেছি, সেটা আমার অর্জন। এক দিনে তো আর এই জায়গায় আসতে পারিনি। আশা করছি, সামর্থ্যবান প্রযোজকরা কখনোই পারিশ্রমিক কমানোর অনুরোধ করবেন না।’

অনেক দিন ধরেই অডিও কম্পানিগুলো বড় গায়ক-গায়িকার গান প্রকাশ করছে না। সংগীতা, সিএমভি থেকে শুরু করে ধ্রুব মিউজিক স্টেশন—সবাই এখন নতুন শিল্পীদের গান প্রকাশ করতেই বেশি আগ্রহী। এর কিছু কারণও ব্যাখ্যা করলেন ধ্রুব মিউজিকের কর্ণধার ধ্রুব গুহ। তিনি বলেন, “করোনার মধ্যে গানের ‘ভিউ’ আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে। কম্পানিগুলোর এখন টিকে থাকার সময়। অপেক্ষাকৃত অনেক কম টাকায় নতুন শিল্পীদের ভালো মানের গান পাওয়া যায়। ফলে তারকা শিল্পীদের পেছনে দৌড়ানোটা কমতে শুরু করেছে। এই মুহূর্তে তারকা শিল্পীদের উচিত আমাদের সহযোগিতা করা। তাঁদের কিন্তু সামাজিক দায়বদ্ধতাও আছে। পারিশ্রমিক বাড়িয়ে আকাশছোঁয়া করলেন আর কম্পানিগুলো সেটা ছুঁতে পারল না, সেটা হলে উভয়েরই ক্ষতি। শ্রোতারাও বঞ্চিত হবে। সত্যি বলতে, কণ্ঠশিল্পীদের পারিশ্রমিকের বিষয়ে কোনো নীতিমালা নেই। নেই কার্যকর কোনো সংগঠনও। ফলে যে যাঁর মতো পারিশ্রমিক নিচ্ছেন। আমরাই বা বলার কে! তবে আমার বিশ্বাস, ধীরে ধীরে সবাই যাঁর যাঁর করণীয় বুঝতে পারবেন।”

অডিও ও চলচ্চিত্রে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক দাবি করেন গায়িকা ন্যানিস। দুই বছর আগেও গানপ্রতি তিনি নিতেন ৪০ হাজার টাকা। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেকেই তাঁকে দিয়ে গাওয়াতে পারেন না। এ বিষয়ে অবশ্য যথেষ্ট ছাড় দেন আরেক কণ্ঠশিল্পী কনা। তিনি বলেন, ‘এই করোনার মধ্যে অন্তত ১০টি গান নামমাত্র পারিশ্রমিকে গেয়েছি। একটি চলচ্চিত্রে বিনা পয়সায়ও গেয়েছি। এসব করেছি সম্পর্ক ও দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে। দেশের গান বা জনসচেতনতামূলক গান হলেও আমি ছাড় দিই। তবে আমার নির্দিষ্ট একটা পারিশ্রমিক আছে। বাণিজ্যিক চিন্তা-ভাবনা নিয়ে কেউ গান নিয়ে এলে সেটা দিয়েই আমাকে গাওয়াতে হবে। গানই আমার পেশা, আর কিছু তো করি না।’

কিছুদিন আগেও অডিও কম্পানিগুলো একেকটি মিউজিক ভিডিওতে ব্যয় করত ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা। শুটিং হয়েছে ভারত-নেপালের অনেক লোকেশনে। কিন্তু এখনকার বেশির ভাগ গানই স্টুডিওতে, নয়তো এফডিসিতে সেট ফেলে করা হচ্ছে। কারণ একটাই, সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না তেমন। তার ওপর আবার শিল্পীদের পারিশ্রমিক বেশি। তেমনি চলচ্চিত্রেও বেশির ভাগ গান তৈরি হচ্ছে নতুন শিল্পীদের দিয়ে। বাজেট কমানোর জন্যই এ পন্থা অবলম্বন করছেন নির্মাতা ও প্রযোজকরা। ফলে এখনই যদি তারকা শিল্পীরা পারিশ্রমিকের ব্যাপারে চিন্তা না করেন, তাহলে তাঁদের ঝুলিতে গানের সংখ্যা কমতেই থাকবে, তাতে সন্দেহ নেই।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর