রামগতিতে জোয়ারে প্রায় দুই কোটি টাকার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের ক্ষয়ক্ষতি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মেঘনা নদীর দুই দফার অস্বাভাবিক জোয়ারে উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের প্রায় দুই কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ, অমাবস্যা ও পূর্ণিমার প্রভাবে মেঘনার জোয়ার স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ থেকে ছয় ফুট বেড়ে উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলীয় এলাকাগুলো প্লাবিত হলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এতে কয়েকশ পুকুর ও ঘেরের দেড় কোটি টাকারও বেশি মাছ জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে। হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল-ভেড়াসহ প্রায় ২০ লাখ টাকার গবাদিপশু জোয়ারে ভেসে এবং পানিতে মারা গেছে বলে দাবি করছেন খামারীরা।

জানা গেছে, পূর্ণিমার প্রভাবে গত ৫ আগস্ট প্রথম দফায় এবং বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও অমাবস্যার প্রভাবে গত বুধবার (২৬ আগস্ট) থেকে দ্বিতীয় দফায় মেঘনার জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ থেকে ছয় ফুট বেড়ে যায়। এতে নদীর তীরবর্তী উপজেলার বালুরচর, সুজনগ্রাম, জনতা বাজার, মুন্সীরহাট, বাংলাবাজার, আসলপাড়া, সবুজগ্রাম, পৌরসভার আলেজান্ডার, সেবাগ্রাম, চরটগবী, চরআলগী, গাবতলী, চরগোসাই, চররমিজ, বড়খেরী, চরগাজী, চরগজারিয়া, চর মুজাম্মেল ও তেলিরচর এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায়।

অস্বাভাবিক এ জোয়ারে অসংখ্য পুকুর ও ঘেরের মাছ পানিতে ভেসে গিয়ে মৎস্য চাষীরা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হন। হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল-ভেড়াসহ গবাদিপশু জোয়ারে ভেসে ও মারা গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন হাজারো মানুষ।

উপজেলার চর রমিজ এলাকার মৎস্য চাষী মো. শরিফ, চর আলেকজান্ডার এলাকার মিনার উদ্দিন, চর আব্দুল্লাহ এলাকার আলী আজগর ও আবুল কাশেম জানান, দু দফার অস্বাভাবিক জোয়ারে তাদের পুকুর ও ঘেরের লাখ লাখ টাকার মাছ পানিতে ভেসে গিয়েছে। জাল দিয়ে মাছ আটকে রাখার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি। এ ছাড়াও অনেকেই ব্যাংকসহ বিভিন্নজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বাণিজ্যিকভাবে মাছচাষ করে আসছেন। মেঘনার এ অস্বাভাবিক জোয়ারে তাদের লাখ লাখ টাকার মাছ ভেসে গিয়ে বিরাট ক্ষতির মধ্যে পড়েছে বলে মাছচাষীরা জানান।

উপজেলার চরআলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন লিটন চৌধুরী জানান, মেঘনার ভাঙনের মুখে পড়ে নদীতে বিলীন হওয়া বেড়িবাঁধ পুনর্নির্মিত না হওয়ায় জোয়ার বাড়লেই উপজেলার মেঘনা নদীর তীরবর্তী এলাকায় সহজেই পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়ে যায়। তিনি বলেন, গত চার যুগের মধ্যে এবারের জোয়ারের পানি সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ সময় ক্ষতিগ্রস্তদের ঘুরে দাঁড়াতে আর্থিক সহায়তা প্রদানসহ জোয়ার থেকে রক্ষায় বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তিনি।

সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন জানান, জোয়ারের পানিতে উপজেলার ৬৯৩টি পুকুর ও খামারের মাছ ভেসে গিয়ে দেড় কোটি টাকারও বেশী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মাছচাষীদের তালিকা তৈরি করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম জানান, জোয়ারে রামগতি উপজেলায় ১২টি ভেড়া, ১০টি মহিষ, এক হাজার ১৪০টি হাঁস ও ৪৫২টি মুরগী ভেসে ও মারা গিয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. রিয়াদ হোসেন জানান, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা সংগ্রহ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল মোমিন জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকাসহ ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর