বার্সায় মেসির মন যে কারণে বিষিয়ে গেছে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বুরোফ্যাক্সে এক বার্তায় বিশ্ব ফুটবলে বড়সড় এক ভূমিকম্প হয়ে গেল। বার্সেলোনা ছাড়তে চান যে লিওনেল মেসি! ভক্তদের পক্ষে এমন খবর হজম করা মুশকিল। খবর ডালপালা গজিয়েছে সারা দিন। কিন্তু বুরোফ্যাক্স মেসির সিদ্ধান্ত বদলের নতুন কোনো খবর নিয়ে আসেনি। তাই এক দুঃস্বপ্নের দোলাচলে দুলছে তাঁর ভক্তরাও। চুক্তি জটিলতায় এই দোলাচল হয়তো আরো কদিন থাকবে, সুবাদে তাদের মনেও জেগে থাকবে মেসিকে ধরে রাখার প্রত্যাশা। কিন্তু ফুটবল রাজপুত্রের মন যে বিষিয়ে গেছে, মেসি-বার্সার সম্পর্কের শিকড় যে আলগা হয়ে গেছে। আগের পারস্পরিক বিশ্বস্ততার জায়গায় সন্দেহ-সংশয়ের বিষবৃক্ষ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে বলেই ফুটবল রাজপুত্রের রাজসিক গল্পে এসেছে নতুন মোড়।

গল্পে খলনায়ক হয়ে হাজির হয়েছেন জোসেফ বার্তোমেউ। ক্লাবের বাইরে সমর্থকরা জড়ো হয়ে বার্সেলোনা প্রেসিডেন্টের মুণ্ডপাত করছেন, পদত্যাগ দাবি করছেন। সমর্থকরাও ঠিক বুঝতে পারছেন গণ্ডগোলটা কোথায়। চ্যাম্পিয়নস লিগে ৮-২ গোলে হারের পরও হতাশ মেসি ক্লাব ছাড়ার কথা ভাবেননি। হয়তো আশায় ছিলেন। নতুন কোচ রোনাল্ড কোম্যানের সঙ্গে সভার পর যেন চূড়ান্ত হতাশ হয়ে আর্জেন্টাইন তারকা মরিয়া হয়ে ওঠেন প্রাণের বার্সা ছাড়তে। সভায় কোচ কিছু কাঠখোট্টা কথা বলেছেন। কোম্যান যেমন বলেছেন, ‘আগের মতো সুযোগ-সুবিধা আর তুমি পাবে না। এখন দলের জন্য তোমাকে ভাবতে হবে এবং করতেও হবে।’ এমন কথা গায়ে লাগার মতোই, বিশেষ করে যিনি নিজের সেরাটা দিয়ে দশটি লা লিগা আর চারটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতিয়ে রাঙিয়েছেন বার্সেলোনাকে। সভায় আলাপ হয়েছে সুয়ারেস-রাকিতিচসহ দলের অন্যদের ভবিষ্যৎ নিয়েও। এসব কথা সংবাদমাধ্যমে দেখেই নাকি ভীষণ রেগে যান মেসি। সব কথা বাইরে চলে এলে ওসব বিষয় নিয়ে আর ভাবনার সুযোগ থাকে না। আর সুযোগটা যেন ইচ্ছা করেই দিতে চায় না ক্লাব ম্যানেজমেন্ট!

ম্যানেজমেন্ট মানে বার্সা সভাপতি ও তাঁর কিছু অনুসারী। বার্তোমেউ এমন একজন সভাপতি, যিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর ফুটবলারদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য গোপনে একটি কম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তাদের কাজ ছিল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খেলোয়াড়দের নামে কুৎসা রটানোর পাশাপাশি ক্লাব প্রেসিডেন্টের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা। যেন দলের সব ব্যর্থতার দায় গিয়ে পড়ে খেলোয়াড়দের ওপর। এটা জানাজানি হওয়ার পর তারকারা খুব ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। স্পেনে করোনা মহামারিতে খেলোয়াড়দের বেতন কমানো নিয়েও হাওয়া গরম হয়েছিল।

দলের স্বার্থে গত বছর নেইমারকে ফেরানোর তাগিদ দিয়েছিলেন মেসি। কারণ বার্সেলোনা পুরোপুরি মেসিনির্ভর হয়ে পড়েছিল। তিনি ভালো খেললেই দল জেতে, নইলে নয়। সত্যি বললে, জাভি-ইনিয়েস্তার বিদায়ের পর বার্সার ফুটবল দর্শনও খানিকটা হোঁচট খায়। মাঠের খেলার ছন্দঃপতনেই সেটা স্পষ্ট। দর্শনকে এগিয়ে নেওয়ায় মেসির সঙ্গী হতে পারতেন নেইমার। কিন্তু এই ব্রাজিলিয়ান পিএসজিতে চলে যাওয়ায় সেই যাত্রা ভেস্তে যায়। তাই আবার তাঁকে ফিরিয়ে এনে আর্জেন্টাইন মহাতারকা চেয়েছিলেন দলে আরেকটি নির্ভরতার জায়গা তৈরি করতে। তাতে বার্সা সভাপতি সাড়া দিলেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছেন তিনি নেইমারকে এনে দিতে।

এরপর কোচ আরনেস্তো ভালভের্দের বিদায়। স্প্যানিশ সুপার কাপ সেমিফাইনালে হারের পর এই স্প্যানিশ কোচকে বিদায় করা হয় বছরের শুরুতে। ২০১৭-১৮ মৌসুমের ‘ডাবল’ জয়ী এই কোচের উত্তরসূরি হিসেবে বেছে নেওয়া হয় সাদামাটা কিকে সেতিয়েনকে। বার্সেলোনা ম্যানেজমেন্টের এই পছন্দ সবাইকে অবাক করেছিল এবং খেলোয়াড়রাও সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি আট মাসেই বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁর সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতা। দলটাকে সংগঠিত তো করতে পারেনইনি, উল্টো কারণে-অকারণে ফুটবলারদের সঙ্গে হয়েছে তাঁর বিরোধ। ৮-২ এর ধাক্কায় তিনি ছিটকে গেছেন ন্যু ক্যাম্প থেকে।

এখন লিওনেল মেসিও সেই পথে হাঁটার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। কারণ জোসেফ বার্তোমেউয়ের চিন্তার সঙ্গে মিলছে না তাঁর। কয়েক বছর ধরেই মিলছে না। স্প্যানিশ দৈনিক মার্কার জরিপও তা-ই বলছে, বেশির ভাগ মানুষ মনে করছে বার্সা সভাপতির কারণেই নাড়ির বন্ধন ছিন্ন করছেন ছয়বারের বিশ্বসেরা। অথচ ছোটবেলা থেকে বার্সেলোনার সঙ্গে তাঁর বেড়ে ওঠা এবং সেরা হওয়া—সব গল্পের পটভূমি কাতালুনিয়া হলেও অসম্ভব সুন্দর এই গল্পের শেষটা হতে যাচ্ছে বিয়োগান্তক। এ গল্পের নামটা হতে পারে; খলনায়কের আবির্ভাবে নায়কের বিদায়।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর