সন্তান লাভে যে নিদর্শন পেয়েছিলেন হজরত জাকারিয়া

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জীবনের অন্তিমকালে সন্তান লাভের সুসংবাদ পেয়ে হজরত জাকারিয়া আলাইহিস সালাম তাদের শারীরিক অবস্থার বর্ণনা তুলে ধরেন। আবার এ বয়সে সন্তান লাভের প্রমাণ স্বরূপ নিদর্শনই বা কী হবে, তা জানতে চেয়েছিলেন তিনি। আল্লাহ তাআলা এ সবের উত্তর কুরআনুল কারিমে এভাবে তুলে ধরেন-
قَالَ رَبِّ أَنَّىَ يَكُونُ لِي غُلاَمٌ وَقَدْ بَلَغَنِيَ الْكِبَرُ وَامْرَأَتِي عَاقِرٌ قَالَ كَذَلِكَ اللّهُ يَفْعَلُ مَا يَشَاء – قَالَ رَبِّ اجْعَل لِّيَ آيَةً قَالَ آيَتُكَ أَلاَّ تُكَلِّمَ النَّاسَ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ إِلاَّ رَمْزًا وَاذْكُر رَّبَّكَ كَثِيراً وَسَبِّحْ بِالْعَشِيِّ وَالإِبْكَارِ
‘তিনি বললেন- হে প্রভু! কেমন করে আমার পুত্র সন্তান হবে, আমার যে বার্ধক্য এসে গেছে, আমার স্ত্রীও যে বন্ধ্যা। বললেন- আল্লাহ এমনি ভাবেই যা ইচ্ছা করে থাকেন।
তিনি বললেন, হে প্রভু! আমার জন্য কিছু নিদর্শন দিন। তিনি বললেন, তোমার জন্য নিদর্শন হলো এই যে, তুমি তিন দিন পর্যন্ত কারও সঙ্গে কথা বলবে না। তবে ইশারা ইঙ্গতে করতে পারবে এবং তোমার পালনকর্তাকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করবে আর সকাল-সন্ধ্যা তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষনা করবে।’ (সুরা ইমরান : আয়াত ৪০-৪১)

আয়াতের ব্যাখ্যামূলক অনুবাদ 
হজরত জাকারিয়া আল্লাহ তাআলার কাছে আরজ করলেন, হে আমার পালনকর্তা! আমার ছেলে সন্তান কীভাবে হবে? অথচ আম বার্ধক্যে উপনীত হয়েছি আর আমার স্ত্রীও (বার্ধক্যের কারণে) সন্তান প্রসবের যোগ্য নয়।
আল্লাহ তাআলা (উত্তরে) বললেন- এমতাবস্থায়ই ছেলে জন্ম নেবে। কেননা, আল্লাহ যা চান তাই করেন।
তিনি আরজ করলেন- হে আমার পালনকর্তা! (তাহলে) আমার জন্য কোনো নির্দশন ঠিক করে দিন। (যাতে বোঝা যায় যে, এখন গর্ভ সঞ্চার হয়েছে) আল্লাহ বলেন- তোমার নির্দশন এই যে, তখন তুমি তিনদিন পর্যন্ত মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারবে না (হাত কিংবা মাথায়) ইঙ্গিত করা ছাড়া।
(এ নির্দশন দেখেই বুঝে নেবে যে, এখন স্ত্রীর গর্ভ সঞ্চার হয়েছে। মানুষের সঙ্গে কথা বলার শক্তি রহিত হয়ে যাওয়ার সময়ও তুমি আল্লাহর জিকির করতে সক্ষম হবে। সুতরাং) আল্লাহকে (মনে মনে) খুব বেশি স্মরণ কর। আর (মুখেও) আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করবে সকাল-সন্ধ্যায় (কেননা তখনও আল্লাহর জিকিরের শক্তি পুরোপুরি বহাল থাকবে)। (তাফসিরে মারেফুল কুরআন)

হজরত জাকারিয়া আলাইহিস সালাম আল্লাহ তাআলা শক্তি ও সামথ্যের উপর পুরোপুরি বিশ্বাস ছিল। এর আগে তিনি এর নমুনা প্রত্যক্ষ করে নিজে দোয়াও করেছিলেন। এ ছাড়া দোয়া কবুল হওয়ার বিষয়ও তিনি অবগত ছিলেন।
এত সবের পরেও- أَنَّىَ يَكُونُ لِي غُلاَمٌ ‘কিভাবে আমার ছেলে হবে’ বলার অর্থ কি? এ প্রশ্নের উত্তর এই যে-
এ জিজ্ঞাসা আল্লাহর শক্তি সামর্থ্যের প্রতি সন্দেহের কারণে ছিল না। বরং তিনি ছেলে সন্তান হওয়ার ব্যাপারে জানতে চেয়েছিলেন যে, আমরা স্বামী-স্ত্রী বর্তমানে যে বার্ধক্য অবস্থায় আছি, তা বহাল রেখেই সন্তান দান করা হবে, নাকি এতে কোনোরূপ পরিবর্তন করা হবে?
আল্লাহ তাআলা উত্তরে বলেছিলেন যে, না- তোমরা বার্ধক্যাবস্থায়ই থাকবে আর এ অবস্থাতেই তোমাদের সন্তান হবে। সুতরাং আয়াতের অর্থে কোনো ধরণের জটিলতা নেই।’ (তাফসিরে মারেফুল কুরআন, বয়ানুল কুরআন)

সন্তান জন্মের নির্দশন কী?
প্রতিশ্রুত সেই সুসংবাদ সম্পর্কে বিস্তারিত অবগত হওয়া এবং সন্তান জন্মগ্রহণের আগেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশে আত্মনিয়োগ করার উদ্দেশ্যে হজরত জাকারিয়া আলাইহিস সালাম নিদর্শন জানতে চেয়েছিলেন। আ্লাহ তাআলা তাঁকে এ নিদর্শন দিলেন যে, তিনদিন পর্যন্ত তুমি মানুষের সঙ্গে ইশারা-ইঙ্গিত ছাড়া কথা বলতে সমর্থ হবে না।
আল্লাহ তাআলা হজরত জাকারিয়া আলাইহিস সালামকে এমন নিদর্শন দিলেন যে, তাতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ছাড়া হজরত জাকারিয়া আলাইহি সালামের অন্য কোনো কাজের যোগ্যই থাকবেন না। সুতরাং কাঙ্ক্ষিত নিদর্শনও পাওয়া গেল আর উদ্দেশ্যও পুরোপুরি অর্জিত হলো। এ যেন একই সঙ্গে দুই উপকার লাভ হলো।’ (বয়ানুল কুরআন সূত্রে মারেফুল কুরাআন)

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর