বন্যামুক্ত আরও ছয় জেলা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় একসঙ্গে ছয় জেলা বন্যামুক্ত হয়। বর্তমানে আরও ছয় জেলায় বন্যা চলছে। বন্যাকবলিত জেলাগুলো হচ্ছে- সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নাটোর, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর।

বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে দেখা দিয়েছে আমাশয়-ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ। বাড়ছে স্যানিটেশন সমস্যা এবং খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। পানি বৃদ্ধির কারণে বিষাক্ত সাপের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় এবং গাদাগাদি করে থাকায় করোনার বিস্তার লাভের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, দেশের যেসব জেলা ৪০ দিনের বেশি বন্যাকবলিত ছিল, ওইসব এলাকার নদ-নদীগুলো বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে না। কিন্তু সেখানকার নিম্নাঞ্চলে এখনও জমে আছে বন্যার পানি। এ কারণে সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি) বলছে, বর্তমানে দেশের ছয়টি জেলা বন্যাকবলিত।

গবেষকরা বলছেন, বিভিন্ন এলাকায় পানি নেমে যাওয়ায় নদীনালা ভরাট হয়ে গেছে। এ কারণে প্রধান নদীগুলো বিপদসীমার উপরে গিয়ে একবার বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে পানি নামতে সময় লাগে। যে কারণে কাগজে-কলমে অনেক এলাকা বন্যামুক্ত হলেও নাগরিকদের কেউ কেউ এখনও পানিবন্দি আছে।

এফএফডব্লিউসি জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা এবং আপার মেঘনা অববাহিকা থেকে বানের পানি হ্রাসের ধারা অব্যাহত আছে। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় আবার ভারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ১০৫ মিলিমিটার এবং অরুণাচলের পাসিঘাটে ৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। দেশের উত্তর এবং পূর্বাঞ্চলীয় বিভিন্ন জেলায় ভারি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ব্রহ্মপুত্রে পানি নেমে যাওয়ার গতি বন্ধ হয়ে গেছে। তবে যমুনার পানি সমতল কমছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় গঙ্গা-পদ্মা এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা ও রাজধানী ঢাকার আশপাশের নদীর পানি হ্রাস পাবে। বর্তমানে সাতটি নদী ৮ পয়েন্টে বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে- গুড়, আত্রাই, ধলেশ্বরী, তুরাগ, টঙ্গী খাল, কালিগঙ্গা ও পদ্মা।

যুগান্তর ব্যুরো, স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গবাদি পশু। বানভাসি মানুষ বন্যার ক্ষতি এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এরই মধ্যে রোগব্যাধি নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছে। নেই চিকিৎসাসেবা সহায়তা। এসব মানুষের কাজ নেই। হাতে নেই টাকাপয়সা। ফলে ঘরবাড়ি মেরামত করা, ভেঙে পড়া নলকূপ ও ল্যাট্রিন সংস্কার নিয়ে পড়েছে বিপাকে। এ অবস্থায় সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হলেও তা ছিল অপ্রতুল। এখনও মানুষ নিজেদের খাদ্য সংকটের পাশাপাশি গবাদি পশুও খাদ্য সংকটে ভুগছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবদুল হাই সরকার জানান, চলতি বন্যায় জেলার ৯টি উপজেলার ৭৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৬টি ইউনিয়নের ৪৭৫টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। জলবন্দি, নদীভাঙন ও পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা আড়াই লাখ। বন্যায় প্রায় ৬৩ হাজার বাড়িঘর পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছে শতশত গবাদি পশু। নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪২ হাজার ২৩৭টি। বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছেন ২৩ জন। এর মধ্যে শিশু ১৮ জন।

নাটোর : চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। পানি কিছুটা কমলেও চরম দুর্ভোগে দিন কাটাতে হচ্ছে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষকে। তাদের ঘরবাড়ি কোনো কিছুই যেন ঠিক নেই। অনেকের ঘরের বেড়া ভেঙে গেছে। খুঁটি নড়বড়ে হয়ে গেছে। কারও ঘরের চাল ভেঙে পড়েছে। ভেসে গেছে ক্ষেতের ফসল ও পুকুরের মাছ।

টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলে বানের পানিতে ভেসে গেছে ৫ হাজার ৩১৬টি পুকুরের মাছ। এতে জেলার ৪ হাজার ৬৮০ মৎস্যচাষীর ২৫ কোটি ৯২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ঋণ ও ধারদেনা করে মাছ চাষ করলেও বন্যায় পুকুর তলিয়ে যাওয়া হতাশায় রয়েছে মৎস্যচাষীরা। এ পর্যন্ত জেলার কোনো ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষীকে এক টাকাও সরকারি সহায়তা দেয়া হয়নি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর