হাওর বার্তা ডেস্কঃ সম্প্রতি ‘করোনা মহামারী মোকাবেলায় ঋণ ও বিনিয়োগে দুর্নীতি প্রতিরোধ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক।
এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় নিজস্ব ক্ষমতা প্রয়োগ করে বাজারে টাকার যে প্রবাহ বাড়াচ্ছে, সেই অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে দর্নীতি বন্ধ ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা পেলেই কেবল দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বাংলাদেশের অর্থনীতি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, করোনা মহামারী মোকাবেলায় অর্থের ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দুর্নীতি বন্ধ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
বিশ্বব্যাংকের উপরিউক্ত মন্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও এক কঠিন সময় পার করছে। করোনার প্রভাবে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমন অবস্থায় বহুজাতিক সংস্থাগুলো থেকে বাংলাদেশ ২৮০ কোটি ডলারের ঋণ গ্রহণ করেছে। এর একটি অংশ দিয়ে করোনা মোকাবেলায় মাস্ক, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীসহ নানা ধরনের সামগ্রী আমদানি করা হয়েছে।
কিন্তু দেখা গেছে, এসব কেনাকাটায় বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে। ওদিকে করোনার প্রভাব মোকাবেলায় যেসব প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন হচ্ছে, সেগুলোয়ও রয়েছে দেশি-বিদেশি ঋণের অর্থের জোগান। এসব অর্থের ব্যবহারের ক্ষেত্রেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। করোনাকালের এ মহাদুর্যোগে এ ধরনের দুর্নীতি চরম অমানবিকতার পর্যায়ে পড়লেও দুর্নীতিবাজরা দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় বিশ্বব্যাংকের মন্তব্যের আলোকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী অনেক আগেই জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। তবে বাস্তব সত্য এই যে, দুর্নীতি বন্ধ হচ্ছে না। তবে আশার কথা, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইতোমধ্যে বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে এবং করোনাকালে সংঘটিত দুর্নীতির একটা বড় অংশের তদন্ত প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে দুদক। আমরা মনে করি, দুদককে আরও কঠোর অবস্থান নিতে হবে। সব ধরনের প্রভাবমুক্ত অবস্থায় দুদক যদি তার কঠোরতা প্রমাণ করতে পারে, তাহলে ভালো ফল মিলবে, সন্দেহ নেই।
করোনা-পরবর্তী বাংলাদেশের অর্থনীতি কী রূপ পরিগ্রহ করবে, তার অনেকটাই নির্ভর করছে দুর্নীতি কতটা দমন করা যাচ্ছে এর ওপর। দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ যুগান্তরকে যা বলেছেন, তা আশাব্যঞ্জক। তিনি বলেছেন, বিভিন্ন সেবা খাতের দুর্নীতি দমনে দুদকের নজরদারি ও তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। যারা দুর্নীতি করছে, তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে কাজ করে যেতে হবে। আমরা মনে করি, দুদক চেয়ারম্যানের এ উপলব্ধিকে যদি বাস্তব রূপ দেয়া যায়, তাহলে দুর্নীতি দমনে তা এক বড় ভূমিকা পালন করবে।