ঢাকার চারপাশে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের উত্তরাঞ্চলে যমুনা নদী থেকে বন্যার পানি দ্রুত নামছে। বুধবার যমুনা ছয়টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার তা নেমে আসে তিনটিতে।

একইভাবে পানি কমছে দেশের পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদনদীর। বানের পানি নেমে আসায় দুর্গত অঞ্চলের সংখ্যা কমছে। বর্তমানে ১৩ জেলা বন্যাকবলিত। বুধবারও ১৭ জেলা বন্যাকবলিত ছিল।

উজান থেকে পানি নেমে আসায় চাপ তৈরি হচ্ছে পদ্মাসহ মধ্যাঞ্চলের নদীগুলোয়। বিশেষ করে রাজধানীসহ ঢাকা জেলার আশপাশের নদনদীতে পানিপ্রবাহ ব্যাপক হারে বেড়েছে। এদিকে চাঁদপুরে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, উত্তরের বিভিন্ন দুর্গত এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার ধারা আরও তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে।

মনু নদী ছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীসমূহের পানি হ্রাসের ধারা অব্যাহত থাকতে পারে আরও ৪৮ ঘণ্টা। গঙ্গা ও পদ্মার পানির সমতল স্থিতিশীল আছে। স্থিতিশীল আছে ঢাকার আশপাশের নদীসমূহের পানি। রাজধানী শহরের নিম্নাঞ্চলে চলমান বন্যা পরিস্থিতিও একই রকম আছে। সংস্থাটি আরও জানায়, বুধবার পর্যন্ত ১৭ জেলা ছিল বন্যাকবলিত। বৃহস্পতিবার তা ১৩টিতে নেমে দাঁড়িয়েছে। ১৭ জেলা হচ্ছে : বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নাটোর, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, রাজবাড়ী, চাঁদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নওগাঁ, গাইবান্ধা, জামালপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

এগুলোর মধ্যে প্রথম ১৩টিতে আগামী ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, অন্তত ১৪টি নদী ২০টি স্থানে বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে।

এগুলো হচ্ছে : পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, গুড়, আত্রাই, ধলেশ্বরী, বালু, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, টঙ্গী খাল, কালিগঙ্গা, বংশী, আড়িয়াল খাঁ ও তিতাস। এগুলোর মধ্যে পদ্মা গোয়ালন্দ, ভাগ্যকুল, মাওয়া ও সুরেশ্বর পয়েন্টে প্রবাহিত হচ্ছে বিপদসীমার উপরে। গোয়ালন্দ পয়েন্টে সবচেয়ে বেশি ৭০ সেন্টিমিটার উপরে আছে পানি।

নাটোরের সিংড়ায় গুড় নদী আছে বিপদসীমার ৬৩ সেন্টিমিটার উপরে। যমুনার অন্য শাখা নদী থেকেও একইভাবে পানি খুব কমই কমছে। অন্যদিকে ঢাকার চারপাশের নদীতে বাড়ছে পানি। নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যায় ১৭ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে ২৪ ঘণ্টায়। এই নদীটি আছে বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার উপরে।

বংশী নায়েরহাটে ১৬ সেন্টিমিটার, টঙ্গী খাল ৩৫ সেন্টিমিটার, ডেমরায় বালু ২৫ সেন্টিমিটার এবং মিরপুরে তুরাগ ৪৯ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৬ জুন থেকে দেশে বন্যা চলছে। পরে ১১ জুলাই দ্বিতীয় দফা বন্যা শুরু হয়। আর তৃতীয় দফার বন্যা শুরু হয়েছে ২১ জুলাই। যুগান্তর ব্যুরো, স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

ফতুল্লা (নারায়ণগঞ্জ) : নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় তিন দিনে তিন ইউনিয়নের তিনটি এলাকা ধলেশ্বরীর পানিতে ডুবে গেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় এক হাজার পরিবার। এর মধ্যে দুটি পাকা ও একটি আধা পাকা বাড়ি ভেঙে গেছে। এসব এলাকায় উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা পরিদর্শন করলেও এখনও কোনো ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেনি।

বন্দর (নারায়ণগঞ্জ) : গত দু’দিনে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে বন্দর খেয়াঘাট সংলগ্ন বাজার ও দোকানপাট। ডুবে গেছে বিভিন্ন খেয়াঘাটের যাত্রী পারাপারের জেটি। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে যাত্রীদের। এ ছাড়া প্লাবিত হয়েছে নদীর তীরবর্তী এলাকার ঘরবাড়ি।

বাবুগঞ্জ (বরিশাল) : সন্ধ্যা, সুগন্ধ্যা ও আড়িয়াল খাঁ নদীর পানি বৃদ্ধিতে ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি চরম অবনতি হয়েছে। নদীবেষ্টিত এ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টি ইউনিয়নের চরাঞ্চল এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। তিনটি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। এদিকে বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দফায় মীরগঞ্জ ফেরিঘাট রক্ষা বাঁধের ৪০ মিটার ধসে গেছে। এতে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে।

চাঁদপুর : উজান থেকে নেমে আসা পানি প্রবল আকারে মেঘনা নদী দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পানির স্রোত ও তীব্রতা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই চাঁদপুর ও হাইমচরের বিভিন্ন এলাকা ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে। চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন অঞ্চল, সদর উপজেলার চরাঞ্চলের ইউনিয়নগুলো ও হাইমচর উপজেলায় সেচ প্রকল্পের বাইরের এলাকাগুলো জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার অধিকাংশ বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। রাস্তাগুলো পানিতে তলিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

তবে চাঁদপুর শহররক্ষা বাঁধ অর্থাৎ চাঁদপুর নদীভাঙন প্রতিরোধ বাঁধ ঝুঁকিতে নেই বলে মনে করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী বাবুল আক্তার। তিনি আরও জানান, স্থানীয় এমপি ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বন্যা মোকাবেলা ও চাঁদপুর এবং হাইমচর রক্ষা বাঁধ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তার জন্য সংশ্লিষ্টদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন।

ইতোমধ্যে প্রায় ১৫ হাজার বালিভর্তি জিও ব্যাগ বাঁধ রক্ষায় প্রস্তুত রয়েছে এবং প্রয়োজনে আরও ব্যবস্থা নেয়া যাবে বলে পাউবোর এই নির্বাহী প্রকৌশলী জানান।

এদিকে গত দু’দিন ধরে বিকাল ৫টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চাঁদপুর লঞ্চঘাট, হরিণা ফেরিঘাট, শহরের বঙ্গবন্ধু সড়ক, নিউ ট্রাক রোড, আবদুল করিম পাটওয়ারী সড়ক, কোড়ালিয়া রোড, যুমনা রোড, মাদ্রাসা রোড, পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজ সড়ক, হাফেজিয়া মাদ্রাসা সড়ক, মৈশাবাড়ী রয়েজ রোড, নিতাইগঞ্জ সড়ক, মধ্য শ্রীরামদী, পশ্চিম শ্রীরামদী, সদরের লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন, ইব্রাহীমপুর ইউনিয়ন, হানারচর ইউনিয়ন, চান্দ্রা ইউনিয়ন প্লাবিত হয়।

 

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর