ভালো নেই বাংলার জ্যাকসন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাংলার জ্যাকসন বিল্লালের কথা আপনাদের সবার নিশ্চয়ই মনে আছে? পপ সম্রাট মাইকেল জ্যাকসন রূপে সজ্জিত হয়ে তারই মতো অবিকল অঙ্গভঙ্গি করে ঘটিগরম চিড়া ও চানাচুর বিক্রি করে এরমধ্যে যিনি সবার কাছে ‘বাংলার জ্যাকসন’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।

দূর থেকে দেখলেই প্রথম ধাক্কায় যে কারোর মনে হতে পারে, এতো পপ সম্রাট মাইকেল জ্যাকসন! তার চুল, পোশাক, সানগ্লাস, নাচের প্রতিটি অঙ্গভঙ্গিও জ্যাকসনেরই মতো। জ্যাকসনের গাওয়া বিখ্যাত সব পপ গানের সঙ্গে খুলনার বিল্লাল ব্যাপারী অনুকরণ করে নাচেন, গানে ঠোঁট মেলান আর বিক্রি করেন মুখোরচক ঘটিগরম চিড়া ও চানাচুর।

ঘটিগরম চিড়া ও চানাচুর বিক্রি করে পরিবারের চার সদস্যের আহার জোটান বিল্লাল। করোনার এই দুর্যোগে সেই বিক্রিবাট্টা কমতে কমতে এখন অনেকটা শূন্যের কোঠায়। জ্যাকসনের কথা মানুষকে স্মরণে রাখার জন্য তাই শত কষ্টের মাঝেও এই পেশা থেকে সরে আসেননি জ্যাকসন ভক্ত।

করোনা দুর্যোগের চারমাসে কেমন আছেন বাংলার জ্যাকস। কিভাবে কাটছে তার দিনগুলো। খুলনা মহানগরীর দৌলতপুরের ভাড়া বাসায় কেমন আছেন তিনি পরিবার নিয়ে?

কেউ কি নিয়েছেন খোঁজ এমন প্রশ্নে বিল্লাল ব্যাপারী বলেন, বিশ্ব জুড়ে করোনা আতঙ্ক। ঘরবন্দী বেশির ভাগ মানুষ। করোনার জেরে পাল্টে গেছে জীবনধারা। আর এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমাদের মতো মানুষের আয় নেই বললেই চলে। সাহায্য তো দূরের কথা কেউ খোঁজও নেয়নি এ সময়ে।

ভালো নেই বাংলার জ্যাকসনতিনি বলেন, করোনার আগে স্বাভাবিক সময়ে অনেক স্টেজ প্রোগ্রাম হতো। কিন্তু করোনা এসে সব বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যবসা বাণিজ্যও ভালো নেই। মানুষ এখন প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হলেও বাইরের কোনো খাবার খায় না। তাই করোনাভাইরাসের এ সময় খুব শোচনীয় অবস্থা আমার। মানুষকে বিনোদন দেয়ার পাশাপাশি আগে মোটামুটি ভালোই  ব্যবসা করছিলাম। কিন্তু সবদিক থেকে বর্তমান সময়ে খুব খারাপ অবস্থায় আছি।

এক কথায় বলতে গেলে আগে যে ভালোটা ছিলাম তা এখন আর নেই। তারপরও শত কষ্ট বুকে চাপা রেখে চেষ্টা করি মানুষকে একটু বিনোদন, একটু আনন্দ দিতে মাইকেল জ্যাকসনের স্মরণে। আমার ভেতরের কষ্ট লুকিয়ে রেখে আমি মানুষকে একটু বিনোদন দিতে চেষ্টা করি। এ জন্যই মানুষের সামনে আসা। মানুষকে বিনোদন দিয়ে আমি ভালো থাকতে চাই। পেটের দায়ের কারণে করোনার এই সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চানাচুর নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছি।

বিল্লাল বলেন, আমি মাইকেল জ্যাকসনের একজন ভক্ত। বাংলাদেশে আমার মতো বিনা পয়সায় আর কেউ এভাবে মাইকেল জ্যাকসনের নাচ দেখাবে কিনা এটা আমার জানা নেই। আমি চেয়েছিলাম মানুষকে একটু বিনোদন দিতে।

তিনি বলেন, অন্যসময় আমার বাসার এলাকা দৌলতপুর থেকে পিকচার প্যালেস মোড় পর্যন্ত আসলে ৫০০-৬০০ টাকা বিক্রি হতো। কিন্তু এখন ৩০-৪০ টাকা বিক্রি হয়। সবাই আমাকে দেখে বলেন মাইকেল ভাই আপনাকে ওই টিভি সেই টিভিতে দেখেছি। আপনি এখনো কেন রাস্তায় রাস্তায় ঘোরেন? আপনার তো অনেক টাকা। আমি বলি ভাই, আসলে সবাই আমাকে নিয়ে শুধু মজাই করেছে। আমি জনপ্রিয়তা পেয়েছি কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে একেবারে অচল। আমি এক থেকে দুইদিন রাস্তায় না নামলে আমার অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে।

বিল্লাল বলেন, আমি সাধারণত খুলনার দৌলতপুর, খালিশপুর, রেলিগেট এলাকায় চানাচুর বিক্রি করি। তবে ভক্ত ও দর্শকদের অনুরোধে মাঝে মধ্যে শহরের বিভিন্ন এলাকায় যাই।

ছবি: ডেইলি বাংলাদেশ

তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকে আমি মাইকেল জ্যাকসনের ভক্ত ও তার সব কয়টি গান অনুসরণ করি। সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন থেকে মাইকেল জ্যাকসনের গানের সঙ্গে নাচের অনুকরণ শুরু করি। তারপর থেকে সেই রকম নাচার চেষ্টা করি। দারিদ্রতার কারণে অষ্টম শ্রেণির পর আর পড়াশুনা না হলেও, আমি ছাড়িনি জ্যাকসনের নাচগান। যে কারণে পেশার মধ্যেও মাইকেল জ্যাকসনের নাচ দেখিয়ে আমি মানুষকে আনন্দ দেই।

এম রহমান নামের জ্যাকসন ভক্ত বলেন, দুর্যোগের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলেছে। তারপরও মানুষের কাছে ঘটিগরম চিড়া ও চানাচুরের দাম বৃদ্ধি করে হতাশ করেননি বিল্লাল। মানুষকে একটু ভালো খাইয়েই তার যতো সুখ। চিড়া ও চানাচুর বিক্রির পাশাপাশি করোনাভাইরাস থেকে সতর্ক থাকতে মানুষকে পরামর্শও দিচ্ছেন তিনি। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই রাস্তায় বিক্রি করছেন চানাচুর।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর