বাংলাদেশ সাইক্লোনের পর বন্যা মানবিক সংকটে পড়তে পারে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মানবিক সংকটের মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ। কারণ সুপার সাইক্লোন আম্ফানের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি মৌসুমি বন্যার মুখে পড়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক খবরে এ কথা বলা হয়েছে।

খবরে বলা হয়েছে, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব দ্য রেডক্রস অ্যান্ড রেডক্রিসেন্ট তথ্য অনুযায়ী চলমান বন্যায় বাংলাদেশ, নেপাল ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলের ৯৬ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৫৫০ জন মানুষের।

বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী এরই মধ্যে দেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা বন্যাকবলিত। জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, ১৯৮৮ সালের পর এবারের বন্যা সবচেয়ে দীর্ঘায়িত হতে পারে। এনজিও কোস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, এবার বন্যা মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি অতীতের চেয়ে অনেক ভালো ছিল। কিন্তু স্থানীয় ও জাতীয় সংকটের কারণে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ ভয়াবহ অভাবের মুখে পড়তে পারে। তিনি জানান, ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেগুলোর বেশির ভাগই উত্তরাঞ্চলে এবং সেখানে বন্যা বাড়ছে। এছাড়া কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ইতিমধ্যে মানুষের আয় কমে গেছে।

তিনি বলেন, গত চার মাস ধরে দেশে ‘লকডাউন’ চলায় অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব রয়েছে। গ্রামীণ অঞ্চলের আয়ের প্রায় ৪০ শতাংশই আসত শহর থেকে। কিন্তু হঠাত্ করেই শ্রমিক ও রিকশাওয়ালারা বাড়িতে টাকা পাঠানো বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। খাদ্য নিরাপত্তা ও জ্বালানি ক্রয়ের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে, এই জটিল পরিস্থিতি আমাদের অতিক্রম করতে হবে।

রেজাউল করিম বলেন, মহামারি সংকট মোকাবিলা করতে গিয়ে স্থানীয় সংস্থাগুলোর তহবিলে টান পড়তে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে কৃষকদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে। যাদের ফসল ঘরে তোলার আগেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

জাতিসংঘ বলছে, আগাম তথ্য ও পূর্ভাবাস বিশ্লেষণ করে তারা জীবিকার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের চেষ্টা করছে। যাতে করে জরুরি সহায়তা নির্ধারণ করা যায়। এরই মধ্যে জাতিসংঘের রিজার্ভ তহবিল থেকে গত সপ্তাহে ৫২ লাখ ডলার সমপরিমাণ ত্রাণ ছাড় করা হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এবং জরুরি ত্রাণ সমন্বয়ক মার্ক লোকক বলেছেন, সংকট আঘাত হানার আগেই কিছু করা গেলে বেশি জীবন রক্ষা করা যায় এবং কম অর্থের ক্ষতি হয়। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বেসলি বলেন, বছরের পর বছর বাংলাদেশ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। পানি মানুষের বাড়ি এবং জীবন ভাসিয়ে নেওয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের উন্নতি আর আশাও ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর