পদ্মায় বিলীন ‘চরাঞ্চলের বাতিঘর’: নদীভাঙন রোধে চাই মহাপরিকল্পনা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চরাঞ্চলের বাতিঘর খ্যাত’ এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় পদ্মাগর্ভে বিলীন হওয়ার ঘটনা দুঃখজনক। উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বন্দরখোলা ইউনিয়নের নূরুদ্দিন মাদবরেরকান্দি গ্রামে স্থাপিত বিদ্যালয়টিতে শিবচর উপজেলার ২৪টি গ্রাম ছাড়াও পার্শ্ববর্তী উপজেলার আরও কয়েকটি গ্রামের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করত। এটি ছিল আধুনিক সুবিধাসমৃদ্ধ চরাঞ্চলের একমাত্র দৃষ্টিনন্দন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় চরাঞ্চলের কয়েকশ’ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ঘিরে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। জানা যায়, চলমান বন্যায় দেশের ২০ জেলায় অন্তত ১৪০০ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের মতো বন্যাপ্রবণ একটি দেশে এ ধরনের অভিজ্ঞতা অবশ্য নতুন কিছু নয়।

সাংবাৎসরিক বন্যায় যে কেবল বিদ্যালয় ভবন ক্ষতির মুখে পড়ে তা নয়; সেতু, কালভার্ট, সড়কসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ প্রেক্ষাপটে যে বিষয়টি মাথায় রাখা জরুরি তা হল- সরকারি কোনো প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের আগে সেগুলোর স্থান নির্বাচনসহ প্রকল্পটি টেকসই ও বাস্তবসম্মত কিনা তা ভালোভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করা। সরকারিভাবে নির্মিত কোনো অবকাঠামো ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া মানে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়।

পদ্মার ভাঙন আকস্মিক কোনো বিষয় নয়। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ভাঙনপ্রবণ নদী পদ্মার করাল গ্রাসে গত ৫১ বছরে বিলীন হয়েছে ৬৬০ বর্গকিলোমিটার এলাকা। ১৯৭৩ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত পদ্মার ভাঙনের কারণে জমি, ফসল ও স্থাপনার যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার আর্থিক মূল্য প্রায় ১৪ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা।

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ বিষয়ক গবেষণা সংস্থা নাসা গত আগস্টে পদ্মা নদীর গতি-প্রকৃতি ও ভাঙনের ধরন নিয়ে কয়েক বছর আগের দুটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে, পদ্মার ভাঙন ঠেকাতে সুরক্ষার তেমন ব্যবস্থা নেই এবং নদীর তীরে বালুচর রয়েছে, যা দ্রুত ভেঙে যাচ্ছে। দেশের নদী গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের অভিমত হল, বিক্ষিপ্ত কোনো উদ্যোগ নিয়ে পদ্মাসহ অন্যান্য নদ-নদীর ভাঙন প্রতিরোধ করা যাবে না। এজন্য নিতে হবে একটি মহাপরিকল্পনা।

নদী ভাঙনরোধসহ নদী ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বিরুদ্ধে বিস্তর অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। নদীভাঙন রোধসহ বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যবহৃত জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লকের প্রকৃত সংখ্যাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাউবো ব্যাপক অনিয়মের আশ্রয় নেয় বলে অভিযোগ আছে। এসব দুর্নীতি দমন করতে না পারলে নদীভাঙন রোধ ও অন্যান্য কার্যক্রমে কোনো সুফল পাওয়া যাবে না।

জানা গেছে, পদ্মার নিকটবর্তী হওয়ায় প্রতি বছরই বন্যার পানিতে এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকাগুলো ডুবে যেত। গত বছর বিদ্যালয়টি ভাঙনের হুমকির মুখে পড়লে স্থানীয় সংসদ সদস্যের নির্দেশে পাউবো ওই এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে। চলতি বর্ষা মৌসুমেও ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ডাম্পিং চলতে থাকে; কিন্তু দেখাই যাচ্ছে, শেষ রক্ষা হয়নি।

বাংলাদেশকে বলা হয় নদীমাতৃক দেশ। তবে অনেক নদী মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। এজন্য দায়ী আমাদের অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকাণ্ড ও অদূরদর্শিতা। নদী ভাঙন ঠেকাতে হলে দেশের নদ-নদীগুলোকে অবশ্যই মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য দেশের সব নদ-নদী রক্ষার পাশাপাশি অবৈধ দখল ও দূষণমুক্ত করতে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা দরকার।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর