নিকলীতে আসামির বাড়ি লুটপাট ভিটায় পুকুর খনন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জের নিকলীতে একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পূর্ব বিরোধের জেরে নিরপরাধ ব্যক্তিদের মামলায় আসামি করে বসতবাড়িতে নারকীয় হামলা ও লুটের উৎসব করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। এমনকি বাড়িঘর ভেঙে এস্কেভেটর দিয়ে ভিটায় পুকুর খনন করা হয়েছে। নিকলী উপজেলার জারইতলা ইউনিয়নের আঠারোবাড়ীয়া গ্রামে এই হামলা, ভাঙচুর, জবরদখল ও লুটপাটের শিকার হওয়া অন্তত ১৫টি পরিবার তিন মাসেও বাড়ি ফিরতে পারেনি। সহায়-সম্পদ ও সর্বস্ব হারানো পরিবারগুলো বাড়িছাড়া অবস্থায় এখন বিভিন্ন এলাকায় ফেরারি ও মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আঠারোবাড়ীয়া গ্রামের মৃত আমির হোসেনের ছেলে ইশাদ আলী (৫০) গত ১৮ই এপ্রিল দুপুরে পার্শ্ববর্তী বাজিতপুর উপজেলার সরারচর বাজার থেকে অটোরিকশা করে বাড়ি ফিরছিলেন। দুপুর দেড়টার দিকে সরারচর রেলগেইট সংলগ্ন সড়কে একই গ্রামের আহাম্মদ আলীর ছেলে সৈয়দ আলী (৩২) অটোরিকশাটি আটকে ইশাদ আলীকে কুপিয়ে হত্যা করে। পরদিন ১৯শে এপ্রিল নিহতের ছোট ভাই মো. সিরাজ মিয়া বাদী হয়ে বাজিতপুর থানায় মামলা (নং-৩) দায়ের করেন। প্রকাশ্য দিবালোকে সৈয়দ আলী একা নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটালেও মামলায় আসামি করা হয় ১৬ জনকে। এর মধ্যে প্রধান আসামি করা হয় দৈনিক বাংলাদেশের খবর পত্রিকার বাজিতপুর প্রতিনিধি জামশেদ আলীকে।

একইভাবে পূর্ব বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করতে আসামি করা হয় নিরপরাধ আরো ১৪ জনকে। কেবল মামলার আসামিই নয় আসামিদের ঘরে ঘরে চালানো হয় হামলা। অস্ত্রের মুখে তাদের পরিবারকে জিম্মি করে সবকিছু ভাঙচুর করা হয়। রামদা, বল্লম, হাতুড়ি, শাবল দিয়ে ভেঙে ফেলা হয় মামলার ৫নং আসামি কফিল উদ্দিনের নবনির্মিত হাফবিল্ডিং ঘর। এ সময় অন্তত ২০টি বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। একই সঙ্গে গরু-বাছুর, আসবাবপত্র, ধান-চাল, হাঁড়িপাতিল, স্বর্ণালঙ্কার, নগদ টাকা ও কাপড়চোপড় লুট করে নিয়ে যায়। এমনকি পরিবারের শিক্ষার্থীদের স্কুলের সার্টিফিকেট, জমির দলিলপত্র এবং বই-খাতা পর্যন্ত তছনছ করে ফেলে। ভুক্তভোগীরা যে রান্নাবান্না করে খাবে, তারও কোনো ব্যবস্থা রাখেনি হামলাকারীরা। এ ছাড়া মামলার প্রধান আসামি প্রতিবাদী সাংবাদিক জামশেদ আলীদের বাড়িঘর ভেঙে ও গাছপালা কেটে ভিটায় এস্কেভেটর দিয়ে পুকুর খনন করে ফেলা হয়েছে। আদালত সূত্র জানিয়েছে, ইশাদ হত্যাকাণ্ডের ২৪ দিন পর গত ১০ই মে পুলিশ মামলার ২ ও ৩ নং আসামি আহাম্মদ আলী ও তার ছেলে সৈয়দ আলীকে ঢাকার মুগদা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন ১১ই মে কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় সৈয়দ আলী। জবানবন্দিতে সৈয়দ আলী একাই এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানায়। স্বীকারোক্তিতে সে আরো জানায়, ইশাদ আলী তার ফুপা। বছরখানেক আগে সৈয়দ আলীর মাকে ইশাদ আলী বেইজ্জতি (ধর্ষণ) করে। তখন বিষয়টি জানার পরই ইশাদ আলীকে আঘাত করার পরিকল্পনা করে সৈয়দ আলী। ইশাদ আলীর একটি হাত অথবা পা কেটে ফেলার টার্গেট করে সে। গত ১৮ই এপ্রিল দুপুরে সুযোগ পেয়ে অটোরিকশাযাত্রী ইশাদ আলীর ওপর দা নিয়ে চড়াও হয় সৈয়দ আলী। ইশাদ আলীর হাত ও উরুতে দা দিয়ে দুইটি কোপ দেয় সে। তবে তাকে মেরে ফেলার জন্য সে কোপ দেয়নি, পঙ্গু করার জন্য কুপিয়েছে।

পুলিশ জানায়, আসামি সৈয়দ আলীর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি দা সরারচরের মিরাপুর গ্রাম থেকে উদ্ধার ও জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এদিকে প্রতিবাদী সাংবাদিকসহ নিরপরাধ ১৫ জনকে মামলার আসামি করে হয়রানি, তাদের বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট এবং বাড়িঘর ভেঙে ভিটায় পুকুর খনন করলেও বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন আমলে নিচ্ছে না।

মামলার আসামি সাংবাদিক জামশেদ আলী জানান, এলাকায় নানা অনাচারের প্রতিবাদ, মাদকবিরোধী ভূমিকা ও দুর্নীতিবাজ জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায় পরিকল্পিতভাবে তাকে মিথ্যা হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে। এর প্রতিকার চেয়ে তিনি পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও কিশোরগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। মামলার ৬ নং আসামি নূর ইসলাম একজন দিনমজুর। তিনি মুঠোফোনে বলেন, সাজানো মামলায় লুটের উদ্দেশ্যে চক্রান্তকারীরা আমাদের ভাই-ভাতিজা সহ অনেককে ফাঁসিয়েছে। আমার সবকিছু লুটে নিয়ে গেছে। বছরের খোরাকি, জমির পাকা ধান এমনকি গরুটি পর্যন্ত খেয়ে ফেলেছে।

বাজিতপুর থানার ভাগলপুর পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ ও হত্যা মামলার তদন্তকারী অফিসার ইন্সপেক্টর মো. শাহাবউদ্দিন জানান, সৈয়দ আলী একাই হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে বলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ ও আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে স্বীকার করেছে। আঠারোবাড়ীয়া গ্রামে হামলা, ভাঙচুর-লুটপাটের বিষয়ে নিকলী থানার ওসি মো. সামছুল আলম সিদ্দিকী বলেন, ভাঙচুর-লুটপাটের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু অদ্যাবধি এ ব্যাপারে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর