বিরল সোনালি বাঘের দেখা মিলল করোনাকালে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আমাদের চারপাশে রয়েছে নানা বৃক্ষরাজি আর প্রাণীকূল। বিভিন্ন প্রজাতি এবং সবুজায়ন একে অপরের সঙ্গে সহাবস্থান করে। তবে অনেক কিছুই আজ হারিয়ে গেছে পৃথিবী থেকে। অতিরিক্ত জনসংখ্যার জায়গা দিতে গিয়ে বন উজার হয়েছে। সেই সঙ্গে আবাসস্থল ও খাদ্যাভাবে কমেছে বন্য প্রাণীর সংখ্যা।

তবে করোনা মহামারি চলাকালীন পৃথিবীতে কমেছে দূষণ, বেড়েছে বনাঞ্চল ও বন্য প্রাণীর সংখ্যা। হঠাৎ করে যেন প্রকৃতির প্রতি আমাদের আকর্ষণ বেড়ে যায়। এর ফলে ইন্টারনেটে প্রতিদিনই নিত্যনতুন বিষয়বস্তু উঠে আসছে। ফটোগ্রাফারদের জন্যই মূরত এসব বিরল প্রজাতির প্রাণীদের দেখা মিলছে। সোনালি বাঘ

সোনালি বাঘ

সম্প্রতি বিখ্যাত বন্যপ্রাণী ফটোগ্রাফার শাজ জং এক কালো চিতাকে ফ্রেমবন্দী করেন। এই কালো চিতার দেখা তিনি পেয়েছিলেন কর্ণাটকের কাবিনি বনে। কালো চিতাবাঘের সেই সুন্দর ছবি বেশ ভাইরাল হয়েছে। এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় আরো একটি বিরল বাঘের ছবি ঘুরছে।

এবারেরটি বাঘটি কুচকুচে কালো নয় বরং চকচকে সোনালি রঙের। এর সৌন্দর্যও মনোমুগ্ধকর বটে! এই প্রজাতির বাঘ ট্যাবি টাইগার বা স্ট্রবেরি বাঘ নামেও পরিচিত। এই বাঘের দেখা মিলেছে, আসামের কাজিরাঙ্গায়। এটিই ভারতের একমাত্র গোল্ডেন টাইগার। দুর্লভ সোনালি বাঘ

দুর্লভ সোনালি বাঘ

সোনালি বাঘ হলো বিশেষত রয়েল বেঙ্গল টাইগার এর একটি মিউট্যান্ট। এর শরীরে লাল এবং বাদামী ডোরাসহ একটি ফ্যাকাসে সোনালি রং আছে। এই বৈশিষ্ট্যের জন্যই একে বেঙ্গল টাইগার থেকে আলাদা করেছে, যেগুলোর লাল-কালো ডোরা রয়েছে।

বিশেষ জিন মিউটেশনের কারণে এদের গায়ের লোম কমলা না হয়ে হয় সোনালি। এরা কোনো আলাদা প্রজাতি বা উপপ্রজাতি নয়। এরা সাদা বাঘ এর মতো বেঙ্গল টাইগারের একটি বর্ণশংকর। এটি এখন তেমন দেখা যায় না বললেই চলে। তবে ধারণা করা হয়, একসময় সুন্দরবনে এদের বিচরণ ছিল। বনে বাঘ

বনে বাঘ

পুরো বিশ্বে সোনালি বাঘের সংখ্যা ৩০টিরও কম। বাংলা বাঘ ও সাইবেরিয়ার বাঘের মধ্যেও এই পরিব্যক্তির কথা জানা গেছে। বিংশ শতকের শুরুর দিকে এই বাঘ বনে পাওয়া যেত বলে জানা যায়। শেষ বন্য সোনালি বাঘকে মহিশুরের বনে শিকার করা হয়েছিল। এই বাঘগুলো ডোরাহীন বা প্রায় ডোরাহীন হয়। বিশেষত পেটের দিকে ডোরা থাকেই না এদের।

ভীম নামে এক পোষা বাঘকে সোনালি বাঘের পুর্বপুরুষ মনে করা হয়। যেটি সাদা বাঘ এর মতো বেঙ্গল টাইগার এর একটি বর্ণশংকর। যেহেতু এরা বেঙ্গল টাইগার এর পরিব্যক্তি, তাই এদের আকার বেঙ্গল টাইগার এর মতোই হয়। পুরুষদের ওজন ১৭০ থেকে ২৫৮ কেজি আর স্ত্রীদের ওজন ১০০ থেকে ১৫০ কেজি পর্যন্ত হয়। এদের খাবার অন্যান্য বাঘদের মতোই। বিরল প্রজাতির বাঘ

বিরল প্রজাতির বাঘ

এরা মাংসাশী প্রাণী। হরিণ, জেব্রা, মহিষ, শূকর, গরু, ছাগল, কুকুর এদের প্রিয় খাবার। দিনে পাঁচ থেকে ১৫ কেজি পর্যন্ত মাংস খেতে পারে একেকটি সোনালি বাঘ। তবে পুরুষ অনেক বাঘ ৩০ কেজি পর্যন্তও খাবার খেতে পারে। বুনো অবস্থায় এখন আর সোনালি বাঘ পাওয়া যায় না।

পৃথিবীর বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় এ বাঘ দেখতে পাওয়া যায়। এরই একটি বাংলাদেশের সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানায় রয়েছে। উত্তর আমেরিকার অনেক চিড়িয়াখানায় সোনালি বাঘের দেখা মিলবে। বিশেষত বাফেলো চিড়িয়াখানায় সোনালি বাঘ আছে। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার ড্রিম ওয়ার্ল্ডে এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে দেখা মিলবে এই বাঘের।

বনে বেড়াচ্ছে বাঘ

বনে বেড়াচ্ছে বাঘ

যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও বেলজিয়ামের কয়েকটি চিড়িয়াখানায় রয়েছে বিরল ও বিলুপ্ত প্রায় এই সোনালি বাঘ। তবে বিলুপ্ত আর জনপ্রিয় বন্য প্রাণীর মধ্যে বাঘ অন্যতম। আমাদের দেশসহ সারাবিশ্বেই চলছে বাঘ সংরক্ষণের চেষ্টা।

এজন্য অনেক দেশে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম বন। আবার চিড়িয়াখানার মধ্যেও এদের অবাধ বিচরণ, প্রজননেরও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বাঘ বেশ বুদ্ধিমান আর হিংস্র প্রাণী। এমনিতে শান্ত থাকলেও প্রায়ই মারমুখী হয় এরা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর