দলবল নিয়ে হোটেলও দখল করেছিলেন শাহেদ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আলোচিত রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহেদ করিমের বিরুদ্ধে উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের হোটেল মিলিনার মালিক আনোয়ার হোসেন সোমবার (২০ জুলাই) একটি মামলা করেছেন।  এর আগে তিনি অভিযোগপত্র জমা দেন র‌্যাব, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের কাছে। গত বছরের নভেম্বরে শাহেদ অংশীদারির ভিত্তিতে হোটেল পরিচালনার কথা বলে হোটেলটি দখল করে নেন।
মঙ্গলবার (২১ জুলাই) মিলিনার মালিক আনোয়ার হোসেনের বরাত দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে দেশের প্রথম সারির একটি জাতীয় পত্রিকা।
মিলিনার মালিক আনোয়ার হোসেন জানান, এ হোটেল দখল নিয়ে শাহেদ তার নামে তিনটি মামলা করেন। সর্বশেষ সাহেদ হোটেলটিকে নিজের সম্পদ দেখিয়ে সাড়ে আট কোটি টাকার ঋণ নেয়ার জন্য কাগজপত্র প্রস্তুত করেছিলেন। এর মধ্যেই ৬ জুলাই র‌্যাব উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায়। এরপর ১৫ জুলাই সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে শাহেব র‍্যাবের হাতে আটক হয়।
আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, তিনি দীর্ঘসময় জাপানে কাটিয়েছেন। দেশে ফিরে তিনি একটি আটতলা বাড়ি নির্মাণ করেন উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর সড়কে। হোটেল মিলিনা ২০১১ সালে চালু করেন তিনি। হোটেল পরিচালনার জন্য তিনি বিনিয়োগকারী খুঁজছিলেন।
কাজী সাইফুল বারী নামে এক ব্যক্তি গত বছর নভেম্বরের দিকে নিজেকে রিজেন্ট গ্রুপের প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে শাহেদের সঙ্গে দেখা করান। সেখানে তিনি বলেন, তাদের উড়োজাহাজের ব্যবসা আছে। সেখান থেকে যত অতিথি, পাইলট, কেবিন ক্রুরা আছেন তারা সবাই আপনার হোটেলে উঠবে এবং হোটেল জমজমাট চলবে।
এ প্রস্তাব দেয়ার পর তিনি বিষয়টি নিয়ে ভাবার জন্য সময় চান। কিন্তু শাহেদ তাড়াতাড়ি করার জন্য তাকে ২১ নভেম্বর রিজেন্ট সদর দপ্তরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। সেখানে তিনি বলেন, প্রতি মাসে হোটেল থেকে ৮ লাখ টাকা ভাড়া ও ৬০ শতাংশ লাভ দিতে হবে। সেখানে রিজেন্ট গ্রুপের কর্মীরা তাকে বলেন, ভাড়া সাড়ে ৭ লাখ টাকা ও ৫৫ শতাংশ লাভ দেবে।
শাহেদের কক্ষে ঢোকার আগে ওই কর্মীরা আনোয়ারকে এ শর্তে রাজি হতে বলেন। শাহেদের তাড়া থাকাই আনোয়ার হোসেন সেদিনই চুক্তিতে সই করেন। এবং ওই দিন শাহেদ তার দলবল নিয়ে মিলিনায় যান এবং সেদিন সব হিসাব-নিকাশ বুঝিয়ে দেয়ার কথা বলে হোটেল দখলে নেন।
এদিকে করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে চুক্তিতে রিজেন্টের উত্তরা ও মিরপুর শাখা ছাড়াও হোটেল মিলিনা দেয়ার কথা বলেছিলেন শাহেদ। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহারের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে যে নির্ধারিত হোটেলের তালিকা দেয়া হয়েছিল সেখানে হোটেল মিলিনার নামও উঠে এসেছিল। হোটেল মিলিনা থেকে খাবার এলেও তাদের সেখানে থাকার ব্যবস্থা ছিল না বলে জানান রিজেন্ট হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকেরা।
গত ৬ জুলাই করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দেয়ার অভিযোগে র‍্যাব উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায়। এরপর রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখা সিলগালা করে দেয়া হয়। ৭ জুলাই করোনা পরীক্ষা না করেই সার্টিফিকেট প্রদানসহ বিভিন্ন অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করে র‌্যাব।
মামলায় রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহেদ করিমকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয় এজাহারে। এরপর থেকেই পালিয়ে ছিলেন শাহেদ। ১৫ জুলাই ভোরে সাতক্ষীরার সীমান্তের দেবহাটা থানার সাকড় বাজারের পাশে অবস্থিত লবঙ্গপতি এলাকা থেকে রিজেন্ট হাসপাতালের শাহেদকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। পরে সেখানে থেকে তাৎক্ষণিক হেলিকপ্টারে করে ঢাকা নিয়ে আসা হয়। এরপরে ১৬ জুলাই শাহেদকে ১০ দিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত।
Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর