কাজা নামাজ পড়া উত্তম নাকি বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া উত্তম

ইসলাম ধর্মে নামাজকে ফরজ করা হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা তাই নিয়তিম নামাজ আদায় করে থাকেন। কিন্তু অনেক সময় সঠিক সময়ে নামাজ আদায় হয়ে উঠে না। সঠিক সময়ে নামাজ না পড়লে তা কাজা হয়ে যায়। নামাজ ছুটে গেলে কিংবা দীর্ঘকাল অবহেলাবশত নামাজ না পড়লে পরবর্তীতে এর কাযা আদায় করতে হবে। এ বিষয়টি সহীহ হাদীস, আছারে সাহাবা ও ইজমায়ে উম্মত দ্বারা প্রমাণিত। হাদীস শরীফে এসেছে- যে ব্যক্তি নামাযের কথা ভুলে যায় কিংবা নামায না পড়ে ঘুমিয়ে থাকে তার কাফফারা হল, যখন নামাযের কথা স্মরণ হবে তখন তা আদায় করা। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৯৭৬) উক্ত হাদীসে نسي শব্দটি লক্ষ্যণীয়। আরবী ভাষায় এটি যেমনিভাবে ‘ভুলে যাওয়ার অর্থে ব্যবহৃত হয় তদ্রূপ কোনো কাজ অবহেলা করে ছেড়ে দেওয়ার অর্থেও ব্যবহৃত হয়। ( দেখুন : আলইসিতিযকার ১/৩০০) অতএব কাযা আদায়ের বিধানটি শুধু ঘুম ও বিস্মৃতি এই দুই অবস্থার সাথে সীমাবদ্ধ করা যাবে না। বরং অবহেলাবশত ছেড়ে দিলেও কাযা জরুরি। অন্য বর্ণনায় এসেছে, যখন তোমাদের কেউ নামাযের সময় ঘুমিয়ে থাকে বা নামায থেকে গাফেল থাকে তাহলে যখন তার বোধোদয় হবে তখন সে যেন তা আদায় করে নেয়। কেননা আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, আমাকে স্মরণ হলে নামায আদায় কর। (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৬৮৪, ৩১৬) কুয়েতের ইসলামী বিষয় ও ওয়াকফ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত ইফতা বোর্ডের সম্মিলিত ফাতাওয়াও এটিই। (দেখুন : মাজমুয়াতুল ফাতাওয়া আশশারইয়্যাহ ১/২০৪) সুতরাং উমরী কাযা ভিত্তিহীন, কাযা আদায় না করে শুধু তাওবাই যথেষ্ট-প্রশ্নের এসব কথা সহীহ নয়। তদ্রূপ একথাও সহীহ নয় যে, উমরী কাযায় সময় ব্যয় না করে নফল ও তাহাজ্জুদ আদায় করা উচিত। এর স্বপক্ষে যে দলীল পেশ করা হয়েছে তাও ঠিক নয়। কারণ সুনানে আবু দাউদে প্রশ্নোক্ত হাদীসটির মূল পাঠ হল- কেয়ামতের দিন মানুষের সর্বপ্রথম যে আমলের হিসাব নেওয়া হবে তা হল নামায। আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদেরকে বলবেন, তোমরা আমার বান্দার ফরয নাময দেখো। সে পূর্ণরূপে তা আদায় করেছে, নাকি তা আদায়ে কোনো ত্রুটি করেছে? যদি পূর্ণরূপে আদায় করে থাকে তবে তার জন্য পূর্ণ নামাযের ছওয়াব লেখা হবে। আর আদায়ে কোনো ত্রুটি করে থাকলে আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদেরকে বলবেন, দেখ, আমার বান্দার নফল নামায আছে কি না? যদি থাকে তবে এর দ্বারা তার ফরয নামায আদায়ে যে ত্রুটি হয়েছে তা পূর্ণ করে দাও। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৮৬৪) উক্ত হাদীসে ‘কারো ফরয নামায কম পড়ে গেলে নফল দ্বারা তা পূর্ণ করা হবে’-যেমনটি প্রশ্নে উল্লেখ হয়েছে-এ কথা নেই; রবং এতে রয়েছে, আদায়কৃত নামাযে ত্রুটির বিষয়। (ফয়যুল কাদীর ৩/৮৭; ইতহাফু সাদাতিল মুত্তাকীন ৩/১১; আলফাতহুর রববানী ১/১৮২

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর