নির্বাচনে অযোগ্য হচ্ছেন খালেদা-তারেকসহ দুইশ নেতা

২০১৯ সালে অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির চেয়ারপারসন  বেগম খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দুই শতাধিক সাবেক সংসদ সদস্য নির্বাচনে অযোগ্য হচ্ছেন।
এদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া এরই মধ্যে জোরদার করা হয়েছে।   নাশকতাসহ মানুষ পুড়িয়ে হত্যার দায়ে বিএনপি ও জামায়াতের এক একজন নেতার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত অভিযোগপত্র দিয়ে মামলা শেষ করার তাগিদও দেয়া হয়েছে পুলিশকে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ জানুয়ারি থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত সারাদেশে নাশকতার অভিযোগে এক হাজার ৭৭৫টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১৭৪টি মামলার চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। ঢাকা মহানগরে এখনও ২৯৫টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগরে ১০৭টি, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ১১ জেলায় ৩৫৬টি, রাজশাহী রেঞ্জে ২১০টি, ঢাকা রেঞ্জে ২০৩টি, বরিশাল রেঞ্জে ৭৪টি, সিলেট রেঞ্জে ৬৩টি, রংপুর রেঞ্জে ৬৯টি, খুলনা রেঞ্জে ৭৬টি, রেলওয়ে থানায় ৩৩টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।
এসব মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় থেকে স্থানীয় অধিকাংশ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া ২০১৩ সালের নাশকতার ৫৪০টি  ও ২০১৪ সালের ১৭১টি মামলা এখনো  তদন্তাধীন রয়েছে যা দ্রুত শেষ করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন জেলার এসপি ও মেট্রোপলিটন ডিসিদের কাছে মামলা দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিয়ে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চট্টগ্রাম রেঞ্জে চিঠি পৌঁছেছে গত ২৪ এপ্রিল।
একইভাবে মামলার তদন্ত কার্যক্রম তদারক করতে ওসিদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উচ্চপর্যায়ে এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয় এবং এতে  বিশেষ করে নাশকতার মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করতে সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দেয়া হয়েছে।
গত ৬ এপ্রিল পুলিশ সদর দপ্তরের অনুষ্ঠিত ত্রৈমাসিক অপরাধ সভায় মামলার তদন্তের দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন আইজিপি এ কেএম শহীদুল হক।
সম্প্রতি সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকের পর অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ প্রসঙ্গে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যারা পেট্রলবোমা এবং গাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে তাদের বিচার হবেই। কোনো ধরনের ছাড় দেয়া হবে না।
নাশকতায় যেসব মামলার তদন্ত এখনও শেষ হয়নি তা দ্রুত শেষ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।শিগগিরই অনেক মামলার তদন্ত শেষ হবে। এতে কোন দলের নেতার নাম পড়ল তা দেখার বিষয় নয়।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আসলে বিএনপির নেতারা যে অপরাধ করেছেন এর সাজা তাদের পেতেই হবে। তা থেকে কোনো রক্ষা নেই।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অযোগ্য করতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, বিএনপির নেতারা অপরাধ করলে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে বিচার হবে। তবে কাকে যোগ্য বা অযোগ্যে এবং কার কী সাজা হবে তা আদালত নির্ধারণ করবে। এটাতো আমরা বলে দিতে পারি না।  তিনি আরো বলেন, বিএনপি যে পরিমাণ অপরাধ ও দেশের ক্ষতি করেছে এতে তাদের ক্ষমা করা যায় না।
আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতারা অযোগ্য হচ্ছেন এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির লে. জে. (অব.) মাহাবুবুর রহমান  বলেন, আসলে বর্তমান সরকার তো জনগণের ভোটের সরকার নয়। তাই তারা যখন যেটা চাইবেন তখন সেটাই করতে পারেন। বিএনপির চেয়ারপারসনসহ শীর্ষ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে তারা মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এখন সরকার বলছে এ অপরাধে তাদের (বিএনপির) বিচার করা হবে। আসলে কে ঘটনা ঘটালো তা সারাদেশের জনগণ জানে। আমার মনে হয় সরকার জনগণের রায়কে ভয় পেয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেবে।
তিনি আরো বলেন, সরকার আগামীতে যতই নতুন নতুন সিদ্ধান্ত  নেবে বিএনপির কর্মী ও জনগণ এর প্রতিবাদে  জেগে উঠবে। বিএনপির ওপর  জনগণের আস্থা আছে। সরকার মিথ্যার ওপর বসবাস করছে। এসব মিথ্যার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ জনগণ খুব শিগগির গড়ে তুলবে।
Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর