তৃতীয় মেয়াদ ফজলে কবিরকে নিয়োগ দেওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত মনে করেন দুই গভর্নর

হাওর বার্তা ডেস্কঃ তৃতীয় মেয়াদ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরকে  নিয়োগ দেওয়া সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন সাবেক দুই গভর্নর। তাদের একজনের মতে, করোনা সংকটকালে গুরুত্বপূর্ণ পদটিতে নতুন কাউকে নিয়োগ না দেওয়া অবশ্যই ভালো দিক। আরেক সাবেক গভর্নরের মতে, সংকটকালীন এই সময়ে গভর্নরকে এখন রুটিন কাজের বাইরেও কর্মতৎপরতা বাড়াতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক দুই গভর্নর এসব কথা বলেন।

সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, আপদকালীন সময়ে গভর্নর নিয়োগের সার্চ কমিটি গঠন করে নতুন নিয়োগ জন্য সময় ব্যয় হতো। তাই এই করোনাকালীন কঠিন পরিস্থিতিতে নতুন কাউকে না এনে ফজলে কবিরকে তৃতীয় মেয়াদে নিয়োগ দেওয়া সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত।

‘তবে গভর্নরকে এখন রুটিন অনুযায়ী কাজ না করে সংকটকালীন এ পরিস্থিতিতে আগের চেয়ে আরও বেশি কর্মতৎপর হবে’─ যোগ করেন সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন।

তিনি জানিয়েছেন, প্রতিবেশি দেশ ভারত ছাড়া বিশ্বের আর কোনও দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নিয়োগে নিদিষ্ট কোনও বয়সসীমা নেই।

বিদ্যমান বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার সংশোধন করে আবারও ২ বছরের জন্য গভর্নর পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ফজলে কবিরকে। দেশে আইন সংশোধন করে কাউকে গভর্নর পদে নিয়োগ দেয়ার ঘটনা এটাই প্রথম।

গত বুধবার ফজলে কবিরকে পুনরায় নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। আদেশে বলা হয়েছে, ফজলে কবির ২০২২ সালের ৩ জুলাই পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেক সাবেক গভর্নর জানান, সরকারের নীতি নির্ধারকরা ভালো বুঝেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নতুন একজনকে আনলে পলিসি বুঝতে সময় লাগতো।

‘কিন্তু দেশে করোনার মহামারী এবং বন্যার কারণে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হলে দেশের অর্থনীতি থমকে যাবে। তাই বর্তমান গভর্নরকে তৃতীয় মেয়াদে নিয়োগ দিতে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির ন্যায় বয়সসীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকার যথার্থ কাজ করেছে’─ যোগ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এই গভর্নর।

তিনি বলেন, ‘করোনার সংকটের পাশাপাশি বন্যার কারণে ফজলে কবিরের চ্যালেঞ্জ আরো বেড়ে গেছে। বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষক। তাই কৃষিঋণ পেতে যেন কৃষকের অসুবিধা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’

এতদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের বয়স নির্ধারিত ছিল ৬৫ বছর। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার অনুযায়ী ৬৫ বছরের বেশি বয়স হলে এই পদে থাকা যাবে না। কিন্তু গত ৯ জুলাই জাতীয় সংসদের সর্বশেষ অধিবেশনে ২ বছর বাড়িয়ে এই পদে থাকার সময়সীমা ৬৭ বছর করে আইন পাস হয়েছে।

নিয়োগের বিষয়ে হিসাব করে দেখা যায়, ফজলে কবিরকে প্রথম দফায় ৪ বছর, দ্বিতীয় দফায় ৩ মাস ১৩ দিন এবং তৃতীয় দফায় ১ বছর ১১ মাস ১৫ দিনের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ মোট ৬ বছর ৩ মাস গভর্নর হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিচ্ছেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমান পদত্যাগ করেন। সরকার এর পরদিনই ফজলে কবিরকে ৪ বছরের জন্য গভর্নর পদে নিয়োগ দিয়েছিল। তখন তিনি বিদেশে ছিলেন। বিদেশ থেকে ফিরে এসে গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেন ২০ মার্চ। সে হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের ১৯ মার্চ। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩৪ দিন আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি গভর্নর হিসেবে তার মেয়াদ ৩ মাস ১৩ দিনের জন্য বাড়িয়ে দেয় সরকার। চলতি জুলাইয়ে আইন সংশোধন করে তাকে আবারও ২ বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর