দোষ চাপাচ্ছেন স্বামীর ওপর, সাবরিনার মোবাইলের মেসেজ থেকে পাওয়া গেল যেসব তথ্য

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী নিজেকে পরিচয় দিতেন জেকেজির চেয়ারম্যান হিসেবে। কখনও বলতেন তিনি প্রতিষ্ঠানটির উপদেষ্টা। তিনিই প্রভাব খাটিয়ে অখ্যাত প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে করোনার নমুনা সংগ্রহে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চুক্তি করিয়েছেন। স্বামী আরিফের সঙ্গে মিলে বিনামূল্যে এ নমুনা সংগ্রহের নামে হাজার হাজার মানুষকে দিয়েছেন করোনার ভুয়া রিপোর্ট। হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। টেস্ট ছাড়াই টাকা নিয়ে প্রবাসীদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন মনগড়া পজিটিভ-নেগেটিভ রিপোর্ট।

এমন সব অপকর্ম করে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর সেই চিকিৎসক সাবরিনা এখন দাবি করছেন, তিনি জেকেজির কেউ নন! পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে অপকর্মের সব দোষ চাপাচ্ছেন কারাবন্দি স্বামীর ওপর। হাজার হাজার মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে আদালতে দাঁড়িয়েও কেঁদে কেঁদে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন তিনি। অবশ্য আদালত তাকে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল সোমবার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডা. সাবরিনা করোনার নমুনা সংগ্রহ করে টেস্টের নামে জেকেজি ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার তথ্য স্বীকার করেছেন। তবে নিজের দায় এড়িয়ে দাবি করেছেন, এই ধরনের অনৈতিক কাজ দেখে তিনি প্রতিষ্ঠানটি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তার স্বামী আরিফ নিজস্ব লোকজন দিয়ে টাকার বিনিময়ে ভুয়া রিপোর্ট বানাতেন বলেও দাবি তার। একসময় বলেন, তাকে তিনি ডিভোর্স দিয়েছেন, আবার বলেছেন, ডিভোর্সের প্রক্রিয়া চলছিল।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেছেন, ‘আমি তো সরকারি হাসপাতালে চাকরি করি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চেয়ারম্যান হবো কীভাবে?’ জেকেজিতে স্বেচ্ছাশ্রম দিতেন বলেও দাবি করেছেন সাবরিনা।’

পুলিশ জানায়, ওভাল গ্রুপ লিমিটেডে নামে একটি কোম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠান জেকেজি। এটি একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম। প্রতিষ্ঠানের প্রধান আরিফুল হলেও চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দিতেন সাবরিনা। সাবরিনার মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দিবসের কাজ পেয়ে আসছিল এই ওভাল গ্রুপ

এমনকি গত বছরের অক্টোবরে ঢাকা এক্সপোর আয়োজন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনেও ওভালের চেয়ারম্যান হিসেবে বক্তব্য দিয়েছিলেন সাবরিনা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন অর রশিদ জানান, জেকেজির যেসব সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছেন তারা জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন যে, ডা. সাবরিনাই ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। আগে গ্রেপ্তার একজন আসামি জবানবন্দিতেও বলেছেন, সবকিছুই ডা. সাবরিনা জানতেন। গ্রেপ্তারের পর আরিফুল হক চৌধুরীও জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, তার স্ত্রী সাবরিনার প্রভাবেই করোনা টেস্টের কাজ পেয়েছেন তারা। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাবরিনা দায় এড়িয়ে স্বামীর ওপর দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

ডিসি হারুন বলেন, জেকেজি করোনা নমুনা সংগ্রহের দায়িত্ব পাওয়ার পর ডা. সাবরিনা নিজের মোবাইল থেকে বিভিন্নজনকে ধন্যবাদ জানিয়ে মেসেজ দিয়েছেন। ফলে তিনি কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারেন না। সবকিছুরই তদন্ত চলছে।

পুলিশের অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, জেকেজি বিনামূল্যে করোনার নমুনা সংগ্রহের দায়িত্ব পেয়েছিল। কিন্তু বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকার বিনিময়ে নমুনা সংগ্রহ করত। এজন্য সাবরিনা নিজের মোবাইল থেকে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন কর্মীকে নানা নির্দেশনামূলক মেসেজ দিয়েছিলেন। এমনকি নারায়ণগঞ্জে কাজ করার অনুমতি পেয়ে সেখানে প্রভাবশালী এক ব্যক্তিকে মেসেজ দিয়েও ধন্যবাদ জানান।

ওই কর্মকর্তা বলেন, স্বামী-স্ত্রী মিলেই অপকর্ম চালাচ্ছিলেন। ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে অন্তত আট কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই দু’জন। একটি ঝামেলার কারণে তাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। করোনার ভুয়া টেস্ট থেকে অবৈধ আয়ের ভাগ দু’জনে সমান করে নিতেন। তবে স্বামীর সঙ্গে দূরত্বের পর তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর জেকেজি থেকেও দূরে থাকার চেষ্টা করেন সাবরিনা।

সোমবার পুলিশ তেজগাঁও থানার প্রতারণার মামলায় ডা. সাবরিনাকে আদালতে হাজির করে। তাকে চার দিনের রিমান্ডে চায় পুলিশ। তার পক্ষের আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। আদালত তার জামিন আবেদন বাতিল করে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, করোনা টেস্ট নিয়ে জেকেজির প্রতারণার ঘটনায় তেজগাঁও থানায় দায়ের মামলাটি এতদিন থানা পুলিশই তদন্ত করছিল। তবে গুরুত্ব বিবেচনায় এই মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) ন্যস্ত হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর