তারকাদের ইমেজের পরোয়া করে না করোনা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঘরের আলো নিভিয়ে মোবাইলের আলো, মোমবাতি বা টর্চলাইট জ্বালানোর কর্মসূচির কথা মনে আছে! অথবা বাড়ির ছাদে বা বারান্দা দাঁড়িয়ে ঘণ্টা বা থালা-বাসন বাজানো। হ্যাঁ, করোনা সচেতনতা তৈরিতে সরকারি এই সব কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন ভারতীয় তারকারা। কিন্তু করোনা তো ব্র্যান্ড ইমেজ মানে না। তাই অসতর্ক তারকারা নিজেরাই আক্রান্ত হলেন।

অবশ্য এমনও হয়েছে সচেতনতা ছড়ানোর নামে কুসংস্কারকে পাত্তা দেওয়ার অভিযোগ উঠে অমিতাভসহ অনেকের বিরুদ্ধে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তারা বিদ্রূপের শিকার হন।

এতদিন সেলিব্রিটিদের পরিচারক বা বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীদের আক্রান্ত করলেও এবার একদম বেডরুমে হানা দিয়েছে এই ভাইরাস।

করোনা নিয়ে প্রচারণায় ভারতের সবচেয়ে বড় মুখ অমিতাভ বচ্চন। শনিবার টুইট আক্রান্ত হওয়ার কথা জানান তিনি। আক্রান্ত ছেলে অভিষেক, পুত্রবধূ ঐশ্বরিয়া, নাতনি আরাধ্যাও। ওই রাতে করোনা-পজিটিভ বলে টুইট করেছেন মডেল-অভিনেত্রী র‌্যাচেল হোয়াইট। কলকাতার কোয়েল মল্লিক, তার বাবা-মা ও স্বামী নিসপাল সিংহের করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর জানা যায় শুক্রবার। আক্রান্ত হয়েছে অনুপম খেরের পরিবারের প্রায় সবাই। অথচ অভিনেতা সরকারি যে কোনো প্রচারণায় ছিলেন সরব।

করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে উপসর্গহীন বহনকারীর দৃষ্টান্ত দিনে দিনে বেড়েছে। কোয়েল, তার বাবা ও মায়ের উদাহরণটি তেমনই। সে ক্ষেত্রে রিপোর্ট হাতে না আসা পর্যন্ত রোগীর পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। কিন্তু সেলিব্রিটিরা যেভাবে করোনার বিরুদ্ধে সতর্কতামূলক প্রচার চালিয়েছেন, ব্যক্তিজীবনে কি তারা তা পালন করছেন?

করোনার একদম শুরুর দিনগুলোর কথা ভাবুন। লন্ডন থেকে ফিরে কোয়ারেন্টাইনে না গিয়ে শ’ তিনেক লোককে নিয়ে পার্টি করে কী কাণ্ডই না ঘটালেন কণিকা কাপুর। নিজে তো আক্রান্ত হলেন, পুরো লখনউ ছড়ালেন আতঙ্ক।

সম্প্রতি নেটফ্লিক্স ছবি ‘বুলবুল’-এর ‘সাকসেস পার্টি’ বাড়িতে দিয়েছিলেন পাওলি দাম। যদিও সেখানে তার পরিবারের লোকজনই বেশি ছিলেন। ইন্ডাস্ট্রির দু-তিনজনই ওই পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন। এ দিকে এক বন্ধুর জন্মদিন সেলিব্রেশনের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়েছেন রুদ্রনীল ঘোষ। মাস্ক বা ফেসশিল্ড থাকলেও এই জমায়েত কি করার কথা?

মাস দুয়েক আগে স্বামী ঋষি কাপুরকে হারিয়েছেন অভিনেত্রী নীতু সিং। সম্প্রতি তার জন্মদিন হলো ঘটা করে। পরিবারের পাশাপাশি ঘনিষ্ঠ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন সেই অনুষ্ঠানে। প্রকাশিত ছবিতে কোনো সতর্কতার বালাই ছিল না। অবশ্য সেই দিকে না গিয়ে ভারতীয় মিডিয়া ছুটে ছিল করণ জোহর কেন হাসিখুশি- এ প্রশ্নে!

ওয়েব সিরিজ ‘মিসম্যাচ সিজন থ্রি’-এর শুট শেষ হওয়ার পর মুখ্য অভিনেতারা একসঙ্গে পার্টি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই সিরিজের জন্যই র‌্যাচেল মুম্বাই থেকে এসেছিলেন কলকাতায়। এরপর তুলনামূলক আক্রান্ত এলাকা ডায়মন্ড হারবারে শুটিং করেন তারা। অবশ্য পার্টি করেছিলেন কি-না এমন প্রশ্ন সংবাদমাধ্যমের কাছে এড়িয়ে যান তিনি। শোনা যাচ্ছে, ওই পার্টিতে থাকা কয়েকজনের মাঝে মৃদৃ লক্ষণ দেখা গেছে।

এবার আসা যাক, অমিতাভের বাংলো জলসায়। এ অভিনেতা কার্যত লিভারের একটি অংশ ছাড়াই কয়েক দশক ধরে বেঁচে আছেন। নিয়মিত যেতে হয় হাসপাতালে, সাম্প্রতিক সময়ে তা বেড়েছেও। করোনার মাঝে তিনি বাড়ি থাকলেও ছেলে অভিষেক বচ্চন ঠিকই বেরিয়েছেন ডাবিংয়ের কাজে!

তবে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর সেলিব্রিটিরা স্বাস্থ্যকর্মী, পৌরসভা, প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন, তার প্রশংসা করেছে ভারতীয় মিডিয়া। এ ক্ষেত্রে অমিতাভের কথাই সর্বাগ্রে বলা যায়। তার সংস্পর্শে গত দশ দিনে যারা এসেছেন, সবাইকেই টেস্ট করানোর আহ্বান জানিয়েছেন অভিনেতা। করণ জোহর, বনি কাপুর বা আমির খানের মতো ব্যক্তিরা করোনা আক্রান্ত হওয়া কর্মচারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এ ছাড়া নানান ধরনের তহবিল সংগ্রহে তারকাদের তৎপরতার খবর আগেই শিরোনামে এসেছে। তবে মানতে হবে তারকাদের বাড়িতে করোনার হানা মহামারী ঠেকানোর ভারতীয় চেষ্টার যে ব্র্যান্ড ইমেজ— তার ক্ষতি বৈকি!

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর