বাড়ছে আউশের আবাদ, লক্ষ্যমাত্রা ৩৬ লাখ মে.টন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গত ৫ বছরের মধ্যে দেশে চলতি মৌসুমে সবচেয়ে বেশি আউশ ধানের আবাদ হয়েছে।  সরকারের কৃষিবান্ধব বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে বোরোর মতো আউশেরও বাম্পার উৎপাদন আশা করছে কৃষি মন্ত্রণালয়।  আর ফলন ভালো হলে আউশ উৎপাদনে এবার বিগত বছরগুলোকে পেছনে ফেলবে বৃষ্টি নির্ভর ধানের এ জাত।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, করোনার কারণে বাংলাদেশের কৃষকরাও বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়েছেন।  তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সময়োপযোগী উদ্যোগের ফলে এর মধ্যেও লক্ষ্যমাত্রার বেশি বোরো ধান সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে।  যা থেকে আউশের আবাদ বাম্পার হওয়ার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্যমাত্রার ১৩ লাখ ২৯ হাজার ৬০০ হেক্টরের বিপরীতে চলতি মৌসুমে ১৩ লাখ ৩৬ হাজার ৫৬৬ হেক্টর জমিতে আউশ ধান আবাদ হয়েছে।  এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৬ লাখ ৪৪ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন।  ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১১ লাখ ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধান আবাদ হয়।  ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ১০ লাখ ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধান আবাদ হয়।  ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ৯ লাখ ১২ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধান আবাদ হয়।  ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ৬ লাখ ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধান আবাদ হয়।  ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ৫ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধান আবাদ হয়।  অর্থাৱ প্রতি অর্থবছরেই বেড়েছে আউশের আবাদ।

ভূগর্ভস্থ পানির অপচয় রোধ করে বৃষ্টির পানিকে কাজে লাগিয়ে আউশ আবাদকে জনপ্রিয় করতে কৃষি মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছেন।  এর ফলে আউশ আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।  এছাড়া বিগত কয়েক বছর সরকারি প্রণোদনায় বিনামূল্যে আউশ ধানের বীজ ও সার কৃষকদের মধ্যে বিতরণ, উচ্চ ফলনশীল জাতের আউশ ধানের বীজের প্রাপ্যতা নিশ্চিত হওয়া এবং মাঠ পর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা ও নিবিড় মনিটরিংয়ের ফলে সেচসাশ্রয়ী আউশের আবাদে কৃষকরা ব্যাপক সাড়া দিয়েছেন।  যার সুফল পাচ্ছে পুরো দেশ।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, আউশ আবাদ বৃদ্ধির জন্য চলতি বছর ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৮৩৪ জন কৃষককে সরকারি সহায়তা হিসাবে কৃষি উপকরণ দেওয়া হয়েছে।  মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা করোনার দুর্যোগের মধ্যেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কৃষকের পাশে থেকে আউশ আবাদে উদ্বুদ্ধ ও সহায়তা করেছেন।

রংপুরের পীরগঞ্জের মিঠিপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা কৃষক মো. হায়দার আলী বলেন, আউশ আবাদ বৃদ্ধির জন্য সরকারি সহায়তা হিসাবে ধানসহ বিভিন্ন উপকরণ পাওয়া গেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ আলী তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে বলেন, ২০১৭-১৮ মৌসুমে হেক্টর প্রতি চাল উৎপাদন হয়েছিল ২.৯৮ মেট্রিক টন।  ২০১৮-১৯ মৌসুমে তা বেড়ে হয় ৩.০৪ মেট্রিক টন।  এ বছর হেক্টর প্রতি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৩.০৭ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হলে রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলা থেকে আউশ মৌসুমে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৫২৮ মেট্রিক টন চাল উৎপাদিত হবে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ হাজার ৫৯ মেট্রিক টন বেশি।

তিনি বলেন, রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় চলতি মৌসুমে ৬৩ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমিতে আউশ ধান আবাদ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার ১৫ হেক্টর বেশি।  গত ২০ বছরের মধ্যে এবার রংপুর অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে আউশ ধান আবাদ হয়েছে।

কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, করোনা দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে খাদ্য সংকট মোকাবিলায় সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে চলতি আউশ মৌসুমেও বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।  তাতে এবার বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে আউশ ধান উৎপাদনের দিক থেকে রেকর্ড হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর