শ্রমিকদের সংকট উত্তরণে প্রধানমন্ত্রীর তিন প্রস্তাব

হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় শ্রমিকদের সংকট উত্তরণে তিনটি প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এগুলো হল- এক. এ সংকটে বিদেশের বাজারে অভিবাসী শ্রমিকদের চাকরি বহাল রাখতে হবে; দুই. প্রতিষ্ঠান বন্ধের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ ও অন্য সব সুবিধা পুরোপুরি দেয়ার পাশাপাশি শ্রমিকদের সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে; এবং তিন. মহামারীর পরে অর্থনীতিকে সক্রিয় করতে এসব শ্রমিককে পুনরায় নিয়োগ দিতে হবে।

বুধবার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আইএলও আয়োজিত ‘গ্লোবাল লিডারস ডে’ ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে দেয়া ভিডিওবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, করোনা মহামারীতে বিভিন্ন দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

তিনি বলেন, করোনা মোকাবেলায় এখনই সব দেশ, আন্তর্জাতিক সংস্থা, নাগরিক সমাজ, সংস্থা এবং বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণে একটি জোরালো এবং সুসমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। জি-৭, জি-২০ ও আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলোর সহায়তায় এ সংকট উত্তরণে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে সব ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাপী এ বিপর্যয় এখন বিশ্বায়ন ও যোগাযোগের মূল ভিত্তিকে হুমকির মুখে ফেলেছে। যা আমরা সুদীর্ঘ সময় ধরে অনেক যত্নে গড়ে তুলেছি। করোনা এখন আর শুধু স্বাস্থ্য সমস্যা নয় বরং একটি পূর্ণাঙ্গ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকটে পরিণত হয়েছে। অন্যসব সংকটের মতো, এলডিসি এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো এ মহামারীর কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হচ্ছে।

তিনি বলেন, দেশি ও বৈদেশিক সরবরাহ চেইনগুলো মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। আমরা কয়েক বিলিয়ন ডলারের রফতানি আদেশ হারিয়েছি, আমাদের অনেক শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে এবং লাখ লাখ শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। বাংলাদেশের ক্ষুদ্রশিল্প বেশিরভাগ বাজার হারিয়েছে। সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ায় কৃষি ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনা সংকট শুরুর সঙ্গে সঙ্গে দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের জন্য ১২.১ বিলিয়ন ডলার প্রণোদনা প্যাকেজ এবং পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন অংশের জন্য সহায়তা ঘোষণা করা হয়েছে।

এ সহায়তা প্যাকেজ আমাদের জিডিপির ৩.৭ শতাংশের সমান। রফতানি শিল্পে আমাদের শ্রমিকদের সহায়তা দিতে মজুরি দেয়ার জন্য প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তার সরকার পোশাক শ্রমিকদের মজুরি প্রায় ৫০০ শতাংশ এবং অন্য সব খাতের শ্রমিকদের মজুরি গড়ে ৩৬০ শতাংশ বাড়িয়েছে। তিনি বলেন, এ মহামারী চলাকালে দৈনিক আয় হারানো ৫০ মিলিয়নের বেশি লোককে আমরা সরাসরি নগদ অর্থ এবং অন্য সব সুবিধা দিয়েছি।

বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মীদের ব্যাপক হারে চাকরি হারানো এবং এর ফলে রেমিটেন্স হ্রাস পাওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এসডিজি অর্জনে রেমিটেন্স একটি মূল উপাদান হওয়ায় এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।

তিনি আরও বলেন, চাকরিবিহীন শ্রমিকদের প্রত্যাবাসন এক বিশাল চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাংক ভবিষ্যদ্বাণী করেছে- আমরা ২০ শতাংশের বেশি রেমিটেন্স আয় হারাব। এ পরিস্থিতিতে আমরা আইএলওর শতবর্ষের ঘোষণার কথা স্মরণ করতে পারি। যেখানে আমরা সবাই প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, জনসংখ্যা স্থানান্তর, জলবায়ু পরিবর্তন ও বিশ্বায়নের মাধ্যমে বিশ্বকে রূপান্তরিত করার প্রয়াসকে স্বীকৃতি দিয়েছিলাম।

তিনি বলেন, আমাদের চারপাশে যা কিছু ঘটছে, তা দেখে মনে হচ্ছে সবার জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুত এককভাবে পূরণ করা কঠিন হবে। তবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি-, আমরা একযোগে এটি করতে পারব।

আইএলওর মহাপরিচালক গাই রাইডার অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানোম গেব্রেয়েসাস এবং সুইজারল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলংকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, আয়ারল্যান্ড, ফিজি, থাইল্যান্ড, নেপাল, সামোয়া, পাকিস্তান, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান, এবং ডব্লিউটিওর ডিজি ও আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর