আগাম বন্যায় কৃষকের স্বপ্ন পানির নিচে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জামালপুরে মহামারি করোনা পরিস্থিতির মধ্যে যোগ হয়েছে আগাম বন্যা। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র চরের কৃষকেরা। এরইমধ্যে বন্যার পানির নিচে তলিয়ে গেছে তাদের সবজি ক্ষেত, আউশ ধান, পাট, বাদাম, ভুট্টা, মরিচ, বীজতলা।

সরেজমিনে জানা যায়, অনেক স্বপ্ন নিয়ে চরের কৃষকেরা ফসলি জমিতে আগাম মৌসুমি সবজি বেগুন, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, শসা, বাঙ্গি, দুধ কুমর, পটল, ও ঢেঁড়স আবাদ করেছিলেন। কিন্তু বন্যায় তাদের সবকিছু তছনছ হয়ে গেছে।

এদিকে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কিছুটা কমেছে। পানি কয়েক সেন্টিমিটার কমলেও জামালপুর সদরের কয়েকটি ইউপির বিশেষ করে লক্ষ্মীরচর, তুলশীরচর, শরিফপুর ইউপির চর অংশ, রানাগাছা ইউপির চর অংশ, নরুন্দি ও ইটাইল ইউপির চর অংশের নিম্নাঞ্চলের সবজি ক্ষেত এখনো পানির নিচে রয়েছে। এতে নষ্ট হয়ে গেছে শত শত হেক্টর জমিতে চাষ করা বর্ষাকালীন সবজি ক্ষেত। পাশাপাশি নষ্ট হয়ে গেছে আউশ ও আমন ধানের বীজতলা।

বর্তমানে চরের চাষিদের মুখে কোনো হাসি নেই। শুধু জামালপুর সদরই নয়, আগাম বন্যায় জেলার ৫টি উপজেলায় প্রায় ৬ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র জামালপুর সদর উপজেলার চাষ করা আউশ ধান, পাট, রোপা আমন ধানের বীজতলা, মরিচ, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির ক্ষেত এখনো পানির নিচে।

জামালপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, বন্যার পানিতে জেলার পাঁচটি উপজেলার ৬ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। নিমজ্জিত ফসলের মধ্যে পাট ৫ হাজার ৫৯৩ হেক্টর, আউশ ধান ১৭৭ দশমিক ৫ হেক্টর, সবজি ৪৭৮ দশমিক ৫ হেক্টর, রোপা আমন ধানের বীজ তলা ১২৩ হেক্টর, মরিচ ১১ হেক্টর, তিল ১৪ হেক্টর, বাদাম ২ হেক্টর, ভুট্টা ৫ হেক্টর ও কলা ৩ হেক্টর।

লক্ষ্মীরচরের কৃষক ছাবেদ আলী জানান, টানা ৭-৮ দিন ধরে সবজি ক্ষেত পানির নিচে থাকায় সব সবজি ক্ষেত পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এসব সবজির অর্ধেক বাজারে বিক্রি হয়েছে। বাকি আরো এক-দেড় মাস বিক্রি হওয়ার কথা ছিল। বন্যার পানি যতই কমছে সবজি ক্ষেত মরে পচে যাচ্ছে। তাছাড়া আরেকটি ভয় আছে। তা হলো বন্যার কারণে জমিতে পলি ও বালু জমে গেছে। ভরাট হয়ে গেছে। ক্ষেতে যেসব সবজি গাছ দেখা যাচ্ছে তাও মরে যাচ্ছে।

গজারিয়া এলাকার সবজি চাষি হুরমুজ আলী জানান, যে সময় সবজি বিক্রি শুরু হয়েছে ঠিক এমন মুহূর্তে বন্যা এসে তার সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।

চরের কৃষকেরা আরো জানান, গতবারও জুলাই মাসে বন্যা হয়েছিল। তখনো বর্ষাকালীন সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়েছিল। এবারো নষ্ট হলো। এভাবে চললে তো না খেয়ে থাকতে হবে। এসব চরের মানুষ বিভিন্ন সমিতি ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করে থাকেন। বন্যায় তাদের আগাম মৌসুমী ফসল বিশেষ করে করলা, ঢেঁড়স, বরবটি, ঝিঙ্গে, পটল, বেগুন, শসা, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়াসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি আজ পানির নিচে তলিয়ে আছে।

একই তুলশিরচরের কাজেম উদ্দিন বলেন, আমার দেড় বিঘা জমির পটল ক্ষেত সম্পূর্ণ পানিতে তলিয়ে গেছে। কি যে করি বুঝতে পারছি না।

বানিয়া বাজারের লাল চাঁন মিয়া জানান, তার দুই বিঘা জমির মরিচক্ষেত নিশ্চিহ্ন হয়ে আছে। মরিচের ক্ষেতের উপর দিয়ে নৌকা চলাচল করছে। স্রোত যাচ্ছে তীব্র বেগে। মাত্র মরিচ ধরা শুরু হয়েছিলো। এ বছর মরিচ চাষ করে পুরোটাই লোকসান হলো।

জামালপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. নায়েব আলী জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায়
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সাতটি উপজেলায় বন্যাদুর্গতদের মাঝে ত্রাণ ও অর্থ সহায়তা অব্যাহত রয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আমিনুল ইসলাম জানান, জেলার ৬ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে এখনো বলা যাবে না। পানি নেমে গেলে বলা যাবে। যমুনার পানি কমলেও ব্রহ্মপুত্রের পানি অপরিবর্তিত হয়েছে। পানি নেমে গেলে ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা সম্ভব হবে।

ডিসি মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, যমুনা নদীর পানি কমছে। দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুরসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলের মানুষ এরইমধ্যে বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন। জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা জেলার বিভিন্নস্থানে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন। সেসঙ্গে বন্যাদুর্গত এলাকায় সেবা দিতে ৮০টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। তারা সর্বদা মাঠে কাজ করছেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর