চিকিৎসা পেতে পদে পদে ভোগান্তি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে সাধারণ কিংবা কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসা পেতে পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। পরীক্ষার আগেই হার্টের সমস্যাজনিত রোগীকে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে করোনা ইউনিট রেড জোনে।

সম্প্রতি বেসরকারি হাসপাতালের পজিটিভ রিপোর্ট নিয়ে আসা এক রোগীকে রেড জোনে পাঠানো হয়। পরে চমেকের পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ এলে ও রোগীকে সুস্থ হিসেবে (ছাড়পত্র দিয়ে) বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রামে চিকিৎসায় এমন বিশৃঙ্খল ব্যবস্থার কারণে বেড়ে চলছে করোনা সংক্রমণ। সংক্রমণের ৩ মাস ৫ দিনের (৯৫ দিন) মাথায় চট্টগ্রামে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে।

জানা যায়, শারীরিক অসুস্থতার কারণে পতেঙ্গা থানার ধুমপাড়া এলাকার বাসিন্দা বিবি জরিনাকে (৫০) ১ জুলাই রাতে স্বজনরা চমেক হাসপাতালে ভর্তি করান। পরদিন ডাক্তারের কথামতো সাড়ে ৬ হাজার টাকা খরচ করে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। নেয়া হয় করোনার পরীক্ষার নমুনাও। শুক্রবার করোনার রিপোর্ট ছাড়াই অন্যান্য রিপোর্ট নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যান স্বজনরা।

এ সময় চিকিৎসক জানান, করোনার রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কিছুই বলা যাবে না। উপায় না দেখে ওইদিনই বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার শেভরণে সাড়ে ৪ হাজার টাকায় করোনা পরীক্ষা করান স্বজনরা।

রোববার বিকালে শেভরণের করোনা রিপোর্টে বিবি জরিনার পজিটিভ ধরা পড়ে। তাৎক্ষণিক হাসপাতালের ফ্লু কর্নারে থাকা জরিনাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় করোনা ইউনিট রেড জোনে। মজার ব্যাপার হল ওইদিন রাতেই চমেকের রিপোর্টে বিবি জরিনার নেগেটিভ ফল আসে। পরে সোমবার দুপুরে সুস্থ হিসেবে বিবি জরিনাকে ছাড়পত্র দেয়া হয়।

বিবি জরিনার মেয়ে রিফা আক্তার অভিযোগ করেন, বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বাড়তি টাকা খরচ করেও করোনার সঠিক রিপোর্ট মিলছে না। অন্যদিকে থানা পুলিশ আমাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। আমরা কোন দিকে যাব? সীতাকুণ্ড থানার বড় দারোগার হাট এলাকার বাসিন্দা কামরুল হোসাইন জানান, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগে আক্রান্ত অসুস্থ মামাকে নিয়ে রোববার তিনি নগরীর জাকির হোসেন রোডের বেসরকারি ডায়াবেটিস হাসপাতালে যান।

আইসিইউ সুবিধা নেই জানিয়ে তাদের সেখান থেকে ফেরত দেয়া হয়। পরে তারা যান চমেক হাসপাতালে। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক প্রথমে তার মাকে হাসপাতালের ১২ নম্বর হৃদরোগ বিভাগে পাঠান। সেখান থেকে পাঠিয়ে দেয়া হয় ১৪ নম্বর মেডিসিন ওয়ার্ডে।

কিন্তু মেডিসিন ওয়ার্ডেও মেলেনি চিকিৎসা। সেখান থেকে আবার পাঠানো হয় জরুরি বিভাগে। পরে করোনা সাসপেকটেড হিসেবে নেয়া হয় ফ্লু কর্নারে। এর কিছুক্ষণ পর নেয়া হয় করোনা ইউনিট রেড জোনে। এরপর রোগীর করোনা শনাক্ত হয়েছে কিনা জানতে আবারও পাঠানো হয় ফ্লু কর্নারে। বর্তমানে তিনি ফ্লু কর্নারে চিকিৎসাধীন।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে প্রথম রোগী শনাক্ত হয় ৩ এপ্রিল। সেই থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত নগরী ও জেলায় মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৭২ জন। পরে মে মাসের ৩১ দিনে শনাক্ত হয় আরও ২ হাজার ৭৪৭ জন রোগী।

একইভাবে জুনে শনাক্ত হন আরও ৫ হাজার ৬৬১ জন। এছাড়া চলতি জুলাইয়ের প্রথম ৭ দিনেই শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৯৯৭ জনের। এ নিয়ে চট্টগ্রামে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ৪৭৭ জনে দাঁড়িয়েছে। চট্টগ্রাম জেলায় আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৯৮ জন মারা গেছেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতলের ফ্লু কর্নার ও অবজারভেশন সেলের প্রধান ডা. মো. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, করোনা চিকিৎসায় রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করলে রোগী বাঁচানো সম্ভব হবে না। তাই অনেক সময় রোগীর অবস্থা দেখে এবং হিস্ট্রি জেনে ক্লিনিক্যাল জাজমেন্ট করেন চিকিৎসক। তবে রোগীকে নিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে নেয়া- আনা অপ্রত্যাশিত। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর