এন্ড্রু কিশোরের মরদেহ হিমঘরে, অপেক্ষা দুই সন্তানের

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর আর নেই। তার মৃত্যুতে শোবিজ অঙ্গন থমকে গেছে, নেমেছে শোকের ছায়া। সোমবার (৬ জুলাই) রাজশাহীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

বর্তমানে শিল্পীর মরদেহ নগরীর লক্ষীপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের হিমঘরে নেওয়া হয়েছে। বাবাকে শেষবারের মতো দেখতে সূদুর অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফিরছেন দুই সন্তান সঙ্গা ও সপ্তক। তারা দেশে ফিরলেই মায়ের পাশে সমাহিত করা হবে এই প্লেব্যাক সম্রাটকে।

জানা গেছে, এন্ড্রু কিশোরের দুই সন্তান ছেলে সপ্তক (২৪) ও সঙ্গা (২৬) অস্ট্রেলিয়াতে লেখাপড়া করেন। সঙ্গার লেখাপড়া প্রায়ই শেষের দিকে। আর শিল্পীর স্ত্রী লিপিকা এন্ড্রু পেশায় একজন চিকিৎসক। তিনি রাজশাহীতেই বসবাস করেন।

প্রয়াত শিল্পীর বন্ধু ড. দীপকেন্দ্র নাথ দাস গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়া থেকে তার দুই সন্তান ফিরলে তাকে সমাহিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর ততক্ষণ পর্যন্ত তার মরদেহ হিমঘরেই রাখা হবে। ওর শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী মায়ের পাশেই তাকে সমাহিত করা হবে।

১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন বাংলা গানের যুবরাজ খ্যাত শিল্পী এন্ড্রু কিশোর। এরপর শৈশব, কৈশর তার প্রিয় জন্মভূমিতেই কেটেছে। মূলত ছোটবেলা থেকে সঙ্গীতের প্রতি আকর্ষণ ছিলো তার। আর সেকারণে আব্দুল আজিজ বাচ্চুর কাছ থেকে সঙ্গীতের পাঠ নেন তিনি।

নিজের ক্যারিয়ার গড়তে একসময় ঢাকাতে চলে আসেন এন্ড্রু কিশোর। এরপর ১৯৭৭ সালে আলম খানের সুরে ‘মেইল ট্রেন’ সিনেমার ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নে যে তাঁর কেউ’ শীর্ষক গান দিয়ে চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক যাত্রা শুরু করেন তিনি। তবে দর্শক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল ১৯৭৯ সালে এ জে মিন্টুর ‘প্রতীজ্ঞা’ সিনেমার ‘এক চোর যায় চলে’ গানিটি দিয়ে। তারপর আর পেছনে ফিরে দেখতে হয়নি তাকে। একের পর এক গেয়ে গেছেন অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় ও কালজয়ী গান।

বলতে গেলে নব্বই দশকের গোড়ার দিকে চলচ্চিত্রের গানে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিলো তার। সেসময় রিয়াজ অভিনীত ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’ সিনেমার ‘পড়েনা চোখের পলক’ গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। এছাড়াও তার কন্ঠে গাওয়া উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে, ‘হায়রে মানুষ রঙের ফানুস’, ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান’, ‘আমার বুকের মধ্যে খানে’ সহ অসংখ্য গান।

বেশ কিছুদিন অসুস্থ থাকার পর এন্ড্রু কিশোরের শরীরে ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ে। উন্নত চিকিৎসার জন্য গেল বছরের ৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুর যান তিনি। সেখানে দেশটির জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হয় শিল্পীর।

পরে শারিরীক অবস্থার উন্নতি হলে গত মাসের ১১ জুন নিজ দেশে ফিরেন এই সঙ্গীতশিল্পী। দেশের ফিরেই পরের দিন রাজশাহীতে যান তিনি। সেখানে বোন ডা. শিখা বিশ্বাস ও বোনজামাই ডা. প্যাট্রিক বিপুল বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আর সেখানেই জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এন্ড্রু কিশোর।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর