উন্নয়ন প্রকল্পে রিজার্ভ ব্যবহারের চিন্তা করুন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে রিজার্ভের টাকা ব্যবহারের আলোচনা এর আগেও বেশ কয়েকবার হয়েছিল। তবে সেই আলোচনা কার্যকর গতি পায়নি। দেশে বর্তমান রিজার্ভ রেকর্ড তিন হাজার ৬০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। বর্তমান রিজার্ভের টাকা দিয়ে আট মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। তাই রিজার্ভের টাকা উন্নয়ন প্রকল্পে খরচের আলোচনাটা আবার উঠে এল গতকালের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায়। রিজার্ভের টাকা উন্নয়ন প্রকল্পে খরচের বিষয়টি তুলেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল অনুষ্ঠিত একনেক সভায় গণভবন থেকে ভার্চুয়াল সভায় যোগ দিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে রিজার্ভের অর্থ ব্যবহার করা যায় কিনা সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা চিন্তা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের রিজার্ভ ৩৬ বিলিয়ন ডলার। তাই উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ না নিয়ে এই টাকা ব্যবহার করা যায় কিনা সেটা ভাবতে হবে। যেহেতু তিন মাসের আমদানি ব্যয় জমা থাকলে সেটি স্বস্তিদায়ক, সেহেতু আমাদের যে অর্থ জমা আছে তা দিয়ে প্রায় এক বছরের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে টাকা ঋণ হিসেবে নিয়ে ব্যয় করা যায় কিনা সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। একনেক সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, এখনই রিজার্ভের অর্থ ব্যয়ের নির্দেশ দেননি প্রধানমন্ত্রী। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) একটি ধারণা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই অর্থ ব্যয় করলে অর্থনীতিতে কী ধরণের প্রভাব পড়বে এবং এ অর্থ ব্যয় করা যাবে কিনা ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা করতে হবে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে চিন্তা ভাবনা করতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো রিজার্ভের টাকা উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় করা যায়। তবে ঋণ নিতে হবে ডলারে এবং পরিশোধও করতে হবে ডলারেই। তাছাড়া বিদেশ থেকে ঋণ নিলে সুদ কম থাকলেও আমাদেরকে নানা শর্ত মানতে হয়। ফলে প্রকল্পের বাস্তবায়ন দেরি হওয়াসহ নানা জটিলতা থাকে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে এম এ মান্নান বলেন, আমরা নিজেদের টাকা নিজেরাই ব্যবহার করবো, বাম হাতের টাকা ডান হাত ঋণ নেবে। এতে কোন সমস্যা দেখছি না। তবে এ বিষয়ে নিয়ম, কানুন, নীতিমালা ও বিধি ঠিক করবে অর্থ বিভাগ।

এদিকে একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সারা দেশে নতুন করে যেসব সেতু নির্মাণ করা হবে, নদী থেকে সেসব সেতুর উচ্চতা যাতে বেশি হয়। জাহাজ চলাচলে যাতে সেতু কোনো বাঁধা হয়ে না দাঁড়ায়। সম্প্রতি বুড়িগঙ্গায় লঞ্চ দুর্ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ থেকে জাহাজ প্রত্যয় উদ্ধারের জন্য বুড়িগঙ্গার উদ্দেশে রওনা হওয়ার পর পোস্তাগোলা সেতুর সঙ্গে ধাক্কা খায়। সেতুর উচ্চতা কম হওয়ায় উদ্ধারকারী জাহাজ দুর্ঘটনাস্থলে যেতে পারেনি। বিষয়টি গতকাল আলোচনা না হলেও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সামনের দিনগুলোতে যেসব সেতু হবে, সেখানে বর্ষার সময় পানির উচ্চতা কতটুকু হতে পারে এসব দিক মাথায় রেখে সেতুর উচ্চতা রাখতে হবে।

অন্য এক অনুশাসনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, একই নদীতে বেশি বেশি সেতু নির্মাণ করা যাবে না। এতে পরিবেশ, নদীর গতিপথ এবং নদীর গভীরতার ওপর প্রভাব পড়ে। এজন্য এখন থেকে সেতু নির্মাণ সংক্রান্ত প্রকল্পের ক্ষেত্রে ভালোভাবে পরীক্ষার-নিরীক্ষার জন্য এলজিইডি, পরিকল্পনা কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী বলেছেন করোনার কারণে উন্নয়ন বন্ধ থাকবে না। আমরা জেনে বুঝেই প্রকল্প অনুমোদন দিচ্ছি। আশা করছি কোভিড-১৯ দীর্ঘায়িত হবে না। আমরা দ্রুতই মূল ধারায় ফিরে আসবো।

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, গতকালের একনেক সভায় গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পাঁচপীর বাজার-চিলমারী উপজেলা সদরের সঙ্গে সংযোগকারী সড়কে তিস্তা নদীর ওপর এক হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমোদনের সময় বিরক্তি প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, প্রকল্পটি শেষ করতে ১০ বছর সময় লাগার কথা নয়। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, সউদী আরব ও ওপেক ফান্ডের ঋণ প্রক্রিয়াকরণ এবং পরামর্শক নিয়োগে দেরি হওয়ার কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দেরি হয়েছে।

‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপ লাইন নির্মাণসহ মোট নয়টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে খরচ হবে দুই হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এক হাজার ১৫৪ কোটি টাকা, বাস্তবায়নকারি সংস্থার তহবিল থেকে ৪৪০ কোটি বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৯৫০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ঘোড়াশাল তৃতীয় ইউনিট রি-পাওয়ারিং প্রকল্প, রূপগঞ্জ জলসিড়ি আবাসন সংযোগকারী সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, জামালপুর ও শেরপুর জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প এবং চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলাধীন ডাকাতিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর