কচু চাষ করে লাখপতি কলেজছাত্র

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নদীর ধারে পুতলে কচু, কচু হয় তিন হাত উঁচু’ খনার এ বচনের সঙ্গে অনেকেই পরিচিত। যদিও এখন নদীর সংখ্যা কমেছে। যুগও পরিবর্তন হয়েছে। তাই কচুও এখন তিন হাত ছাড়িয়ে উঁচু হচ্ছে সাত হাত। আর এ কচু চাষে নতুন নতুন স্বপ্ন বুনছেন কৃষকেরা। এমনই এক নবীন কৃষক মো. তারিকুল ইসলাম তারেক। তিনি ডুমুরিয়া-মধুগ্রাম সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র।

পড়াশোনার পাশাপাশি কৃষি কাজে জোর দিয়েছেন এ শিক্ষার্থী। অনলাইনে কচু চাষের বিভিন্ন ভিডিও এবং সংবাদপত্রের বিভিন্ন খবর দেখে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তারেক। পরে খলসী গ্রামের নিজ বাড়ির পাশে পানি কচুর চাষ শুরু করেন নবীন এ কৃষক।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মার্চ থেকে শুরু করেন চাষাবাদ। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে স্থানীয় নিউটনের পানি কচুর চারা তিন টাকা দরে সংগ্রহ করেন। এরপর ২০ মার্চ রোপণ করেন।

বাড়ির পাশে নিজেদের ৩০ শতাংশ জমি অনেকটা পড়ে ছিল। সেই সঙ্গে অন্যের ২০ শতাংশ জমি লিজ নেন। সব মিলিয়ে ৫০ শতাশং জমিতে এখন কচু। প্রতিদিন সেখান থেকে কচুর লতি ওঠে ৩০-৪০ কেজি। সেইসঙ্গে কচুর ফুলও ওঠে। কচু লাগানোর ৫৫-৬০ দিন পর থেকে লতি এবং কচুর ফুল বিক্রি করেন তারেক।

নবীন কৃষক মো. তারিকুল ইসলাম তারেক বলেন, মার্চ থেকে পড়ালেখার চাপ তেমন নেই। বাড়ির পাশে জমিটায় তেমন কিছু হতো না। এখন প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার কচুর ফুল বিক্রি করি। আর লতি প্রতিদিন প্রায় মণ ওঠে। সব মিলিয়ে ওই জমিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। আর আয় হতে পারে আড়াই লাখ টাকার ওপরে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, জেলার সবচেয়ে বেশি পরিমাণ কচু, লতি চাষ হচ্ছে ডুমুরিয়া উপজেলায়। কচুতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন রয়েছে। যা মানবদেহের জন্য খুবই প্রয়োজন। গ্রামের বাড়ির আনাচে-কানাচে ও সড়কের পাশে অনেক জায়গায় কচু জন্মে। মাঝারি নিচু থেকে উঁচু জমি, যেখানে বৃষ্টির পানি সহজেই ধরে রাখা যায় বা জমে থাকে এমন জমি পানি কচু চাষের জন্য উপযোগী।

তিনি বলেন, পলি, দোআঁশ ও এঁটেল মাটি পানি কচু চাষের জন্য উত্তম। চারা রোপণের ৪৫-৭৫ দিনের মধ্যেই কচুর লতি তোলা হয়। একটি গাছ থেকে ১০-১৫ দিন পরপর লতি তোলা যায়। চারা রোপণের ১৪০-১৮০ দিনের মধ্যে পানি কচু সংগ্রহ করা যায়। উপজেলা সদরের পাশে খলসী গ্রামে তারেক অল্প বয়সে এবং পড়ালেখার পাশাপাশি কচু চাষ করে সাড়া ফেলেছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক পঙ্কজ কান্তি মজুমদার বলেন, এখানকার কৃষকেরা সবজির পাশাপাশি কম খরচে বেশি লাভের সবজি কচু, লতি চাষে আগ্রহী হয়েছেন। আধুনিক পদ্ধতিতে কচুর লতি চাষে কৃষকদের পরামর্শ ও উদ্বুদ্ধ করছি।

তিনি বলেন, নিয়মিত কচু খেলে কোলন ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। কচুতে রয়েছে আয়রন। যা রক্ত শূন্যতা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। রয়েছে নানা রকম ভিটামিন যা গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য দারুণ উপকারী। এখন অনেক তরুণই পড়ালেখার পাশাপাশি কৃষি কাজে আগ্রহী হচ্ছেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর