ফাঁকা নেই আইসিইউ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দুই দিন আগেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক করোনা পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেছেন, দেশে এখনো প্রায় অর্ধেক আইসিইউ খালি আছে। ইত্তেফাকের পক্ষ থেকে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আসলে করোনার রোগীদের জন্য নির্ধারিত কোনো আইসিইউ কোথাও খালি নেই। সাধারণ রোগীদের জন্য বরাদ্দ করা আইসিইউর মধ্যে কিছু খালি আছে। সেখানে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের ভর্তি করা হয় না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু সরকারের পক্ষে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও করোনার চিকিত্সায় এগিয়ে আসতে হবে। তবে সেটা সরকারি নীতিমালার মধ্যে থেকেই যেন তারা কাজ করেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ ইত্তেফাককে বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও কোভিড রোগীদের চিকিত্সা দেওয়া হচ্ছে। তাদের বলা হয়েছে, নীতিমালা মেনেই চিকিত্সা দিতে হবে।

গতকাল রবিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, করোনা রোগীদের জন্য বরাদ্দ করা ১৪টি আইসিইউ বেডের একটিও খালি নেই। ঢাকা মেডিক্যালে মোট ৪৮টি আইসিইউ বেড আছে। এর মধ্যে করোনা রোগীদের জন্য ১৪টি, গাইনিসহ সাধারণ রোগের অপারেশনের জন্য ১০টি এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের জন্য ২৪টি আইসিইউ বেড রয়েছে। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকা মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ জানালেন, এই মুহূর্তেই অন্তত আরো ৩০ থেকে ৪০ জন রোগীকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা দরকার। কিন্তু সিট খালি না থাকায় তাদের সেখানে স্থানান্তর করা যাচ্ছে না। এখানে আইসিইউ খালি থাকার প্রশ্নই ওঠে না।

গত শনিবার থেকে সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য চিকিত্সা শুরু হয়েছে। ২০০ বেড দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও এক সপ্তাহের মধ্যে আরো ৫০টি বেড বাড়ানোর কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এখানে ১০টি আইসিইউ বেড আছে, যেগুলোতে ননকোভিড রোগীদের চিকিত্সা চলছে। একটিও ফাঁকা নেই। তবে কোভিড রোগীদের জন্য এখনো আইসিইউ বেড বরাদ্দ করা হয়নি। কয়েকটি বেড স্থাপনের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে এখানে হাই ফ্লো অক্সিজেনের ব্যবস্থা আছে। এটা করোনা রোগীদের জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার। সারা পৃথিবীতেই হাই ফ্লো অক্সিজেন দিয়ে কোভিড রোগীদের চিকিত্সা হচ্ছে।

গতকাল বেসরকারি আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে একটিও আইসিইউ বেড ফাঁকা নেই। কর্তৃপক্ষ এই প্রতিবেদককে জানিয়েছে, যে কটি আইসিইউ বেড আছে, তা দিয়ে রোগীদের সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। সব রোগীকে ঠিকভাবে চিকিত্সা দিতে গেলে আরো আইসিইউ বেড দরকার।

সারা পৃথিবীতেই সরকারি নীতিমালা মেনে বেসরকারি হাসপাতালগুলো করোনা রোগীদের চিকিত্সা দিচ্ছে। বাংলাদেশেও কিছু বেসরকারি হাসপাতাল ইতিমধ্যে এগিয়ে এসেছে। তবে যাদের সক্ষমতা বেশি, তারা খুব বেশি রোগী নিচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের একার পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সাপোর্ট লাগবেই। তারা আন্তরিকভাবে কাজ না করলে মৃত্যু বেড়ে যেতে পারে।

বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনোসিস সেন্টার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া ইত্তেফাককে বলেন, ‘সরকারের পাশাপাশি আমরা বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকও সাপোর্ট দিচ্ছি। অধিকাংশ হাসপাতাল ও ক্লিনিকে কোভিড রোগীদের চিকিত্সা হচ্ছে। এই রোগের চিকিত্সায় যেহেতু বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়, তাই হাসপাতালগুলো নিজেরা গুছিয়েই রোগীদের ভর্তি করতে শুরু করেছে।’

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর