রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত শিশু পার্ক বদলে যাচ্ছে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত শিশু পার্কের অবয়ব বদলে যাচ্ছে। নতুন আঙ্গিকে সবুজের সমারোহে থাকবে শিশু-কিশোররা। বিভিন্ন প্রজাতির গাছগাছালির ছায়ায় দারুণ সময় কাটবে ছোটদের। চারদিকে রাখা হচ্ছে সবুজ ঘাসের গালিচা। প্রবেশপথ হবে স্বয়ংক্রিয়। পার্কের মাঝখানে দেখা যাবে সুদৃশ্য ফোয়ারা। এটিকে ঘিরে ফুটে থাকবে নানান ফুল।

পুরনো খেলার সরঞ্জাম সরিয়ে যুক্ত করা হবে আধুনিক কিছু রাইড। নতুন রাইডের মধ্যে উল্লেখযোগ্য – মিউজিক বোট, টি কাপ, সুপার সুইং, এয়ার বাইসাইকেল, জেলিফিশ, ক্যারোসেল, ক্লাইম্বিং কার, গার্ডেন সারাউন্ডিং ট্রেন, গ্রেট আর্থকোয়াক, ফোরডি ডার্ক রাইড, স্পেস শাটল, মাইন কোস্টার, ড্যান্সিং পার্টি ইত্যাদি।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। পার্কে শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত কাজ করছেন। মাটির নিচে পার্কিং গড়ার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পার্কের পাশে আধুনিক মসজিদের নির্মাণ প্রায় শেষ পর্যায়ে।

বদলে যাচ্ছে শিশু পার্কজানা গেছে, ‘ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং শিশু পার্ক আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয় মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়। এজন্য ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ ৩০ হাজার টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব গণপূর্ত অধিদফতরের।

শিশু পার্ক আধুনিকায়নের দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ইতোমধ্যে পার্কটি বন্ধ করে পুরনো রাইড অপসারণ করেছে এই সংস্থা। প্রকল্পের মোট বরাদ্দ থেকে শিশু পার্কের জন্য রাখা হয় ৭৩ কোটি ২০ লাখ টাকা।

বদলে যাচ্ছে শিশু পার্ককিন্তু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ দেওয়া অর্থ নিয়ে পার্কের আধুনিকায়ন সম্ভব নয় বলে জানায় সিটি করপোরেশন। এ কারণে অনিশ্চিয়তা দেখা দিলে কিছুটা জটিলতার সৃষ্টি হয়। ২০১৮’র জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পার্কের সংস্কার সম্পন্ন করার কথা থাকলেও জটিলতার কারণে সম্ভব হয়নি।

সবশেষ গত ৯ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ডিএসসিসি’র বৈঠকে শিশু পার্কে নতুন রাইড সংযোজনের জন্য আলাদা প্রকল্প নিতে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। এজন্য সরকারের জিওবি তহবিল থেকে অর্থ দেওয়া হবে। বাড়তি মেয়াদে নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে নতুনভাবে পার্কটি সাজিয়ে তোলা যাবে বলে জানিয়েছে ডিএসসিসি।

সংস্কারের পর শিশু পার্কের চিত্র হবে এমনশিশু পার্কের উন্নয়নে ২০১৬ সালের ২৯ জুন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ডিএসসিসির পক্ষ থেকে একটি প্রকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়। এতে উত্থাপিত বিষয়গুলো থেকে টাওয়ার চ্যালেঞ্জার, টুইন টাওয়ার, রোলার কোস্টার, স্কাই হুইল ও ভাইকিং বাদ দিয়ে পুনরায় প্রকল্প জমা দিতে বলা হয়। এরপর অনুমোদনের আগে ১৫৩ কোটি টাকার প্রকল্প জমা দেয় ডিএসসিসি। ২০১৮ সালের ৯ জানুয়ারি এটি অনুমোদন পায়।

কিন্তু পার্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মুভি থিয়েটার, রাইডসের প্ল্যাটফর্ম, ট্রান্সফর্মার, সাবস্টেশন, টিকিট কাউন্টার, শেল্টার শেড, অফিস ভবন, পাবলিক টয়লেট, স্টোররুম, সিকিউরিটি রুম, গ্রাউন্ডফিল্ড ডেভেলপমেন্ট, প্লান্টেশন, বিউটিফিকেশন, স্যানিটারি এবং ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া হয়। এতে বরাদ্দ রাখা হয় ৭৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। এ কারণে পরিকল্পনা অনুযায়ী শিশু পার্কের সংস্কার করতে পারেনি ডিএসসিসি।

সংস্কারের পর শিশু পার্কের চিত্র হবে এমনএদিকে পার্কের মাটির নিচে পার্কিং নির্মাণ কাজশুরু করার ফলে বর্তমানে থাকা অফিস বিল্ডিং, শেল্টার ও রাইড, ফুড কর্নার, টয়লেট, সীমানা প্রাচীর, প্রবেশ গেট, বাইরের গেট ও টিকেট কাউন্টার, গার্ডেন গ্রিল, ঝর্না, আন্ডার গ্রাউন্ড ইলেকট্রিক লাইন, প্ল্যান্টেশন ওবিউটিফিকেশন, ওয়াটার রিজার্ভট্যাংক, পানির লাইন, ড্রেনেজ সিস্টেম, ওয়াকওয়ে, বাম্পার কার রাইডস, ট্রালিন বেড রাইডস, ক্যাবল কার রাইডস, ইনডোর গেম, ভাইকিং রাইড, ড্রেনেজ সিস্টেম ওসিকিউরিটি সিস্টেম অপসারণ ও ভেঙে ফেলায় সেগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

চলমান প্রকল্পে সেই রাইডগুলো অন্তর্ভুক্ত করার জন্য গত বছরের ৭ মে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়। পার্কের জন্য বরাদ্দ দেওয়া অর্থে পার্কের প্রকল্প পরামর্শকসহ নতুন রাইড সরবরাহ করতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে সর্বনিম্ন দর পড়ে ৩১০ কোটি ৩ লাখ ৭০ হাজার ৬৭৭ টাকা, যা বরাদ্দ অর্থের কয়েকগুণ বেশি। ফলে এই অর্থ সংশোধিত প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করে নতুনভাবে প্রকল্প নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। প্রকল্পে আরও ১৮টি নতুন রাইড সংযোজনের সিদ্ধান্ত হয়।

সংস্কারের পর শিশু পার্ক ওপর থেকে দেখলে এমন লাগবেদক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক সার্কেল) ও প্রকল্পের সিটি করপোরেশন অংশের পরিচালক আনিছুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিশু পার্ককে বিশ্বমানের করে সাজাতে চাই আমরা। এতে সব ধরনের রাইড স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এজন্য মন্ত্রণালয় আমাদের একটি প্রকল্প গ্রহণের জন্য বলেছে। আমরা তা করছি। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে শিশু পার্কের অবয়ব বদলে যাবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর