চট্টগ্রাম সিটিসহ সব নির্বাচন স্থগিত

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনসহ জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের সব ধরনের নির্বাচন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শনিবার নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত কমিশনের ৬২তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ঢাকা-১০সহ তিনটি সংসদীয় আসনে ভোটগ্রহণ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে ইসি এমন সিদ্ধান্ত নিল।

কমিশন সভার পর নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর সব ধরনের নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণা দেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকা-১০ আসনে ভোট কম পড়ার কারণ হচ্ছে ইভিএমে জাল ভোট দেয়া যায় না। কম ভোট পড়ার কারণে ইসি বিব্রত নয়। এর আগে শনিবার সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে কমিশনের সভা অনুষ্ঠিত হয়। দুই ঘণ্টাব্যাপী ওই সভায় নির্বাচন কমিশনার, ইসির সিনিয়র সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, করোনাভাইরাস সারা বিশ্বে ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। যদিও বাংলাদেশে সীমিত পর্যায়ে ছড়িয়েছে, মহামারী আকারে ছড়ায়নি। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এ কারণে ২৯ মার্চ অনুষ্ঠেয় চসিক, বগুড়া-১ ও যশোর-৬সহ সব নির্বাচন পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।

তিনি বলেন, পরিস্থিতি আমাদের পর্যবেক্ষণে থাকবে। স্বাস্থ্য বিভাগ যখন করোনা ঝুঁকিমুক্ত বলবে, তখন কমিশন নতুন তারিখ ঘোষণা করবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারও চাপে নির্বাচন স্থগিত করা হয়নি। যখন প্রয়োজন মনে হয়েছে, তখন ভোট স্থগিত করা হয়েছে।

২৯ মার্চের আরও যেসব নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- ৯টি পৌরসভার বিভিন্ন পদের উপনির্বাচন, পাঁচ জেলায় জেলা পরিষদের ৫টি পদের উপনির্বাচন এবং ৯৩টি ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন পদের নির্বাচন। তবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের নাম গেজেটে প্রকাশ করা হবে।

করোনার কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যেও শনিবার তিনটি সংসদীয় আসনে ভোটগ্রহণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, নির্বাচন এমন পর্যায়ে ছিল যে শুধু ভোট গ্রহণটাই বাকি ছিল। এ কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করেও ভোট পেছানো হয়নি। সব কেন্দ্রে পর্যাপ্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও টিসু ছিল।

স্থগিত নির্বাচনগুলো কোন পর্যায় থেকে শুরু হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, যে পর্যায় থেকে স্থগিত হয়েছে, সেখান থেকেই শুরু হবে। এসব নির্বাচনে নতুন কেউ প্রার্থী হতে পারবেন না। নির্বাচন স্থগিত করায় আইনি জটিলতা হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেন, সংবিধানে সংসদ নির্বাচন মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিন আগে করার বিধান আছে। তবে দৈবদুর্বিপাক হলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার ক্ষমতা সিইসিকে দেয়া আছে। সবমিলে ১৮০ দিন বা ৬ মাস সময় পাব। আশা করি, এতদিন করোনার আতঙ্ক থাকবে না। যথাসময়ে নির্বাচনের পরবর্তী তারিখ ঘোষণা করা যাবে।

সংসদীয় সীমানা নির্ধারণ আইন : ইসির সিনিয়র সচিব জানান, কমিশন সভায় জাতীয় সংসদের সীমানা নির্ধারণ আইনের খসড়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। খসড়ার ভাষাগত কিছু ত্রুটি আছে। পরবর্তী সভায় এটি নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া নির্বাচন কমিশনারদের প্রাধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে কমিটি কাজ করবে।

মাঝপথে বন্ধ হল কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, শনিবার সকাল ৯টা থেকে (চসিক) নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। এটি বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলার কথা থাকলেও নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণায় এক ঘণ্টা আগেই বিকাল ৪টায় বন্ধ করে দেয়া হয়। চসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে প্রশিক্ষণার্থীদের অভিযোগ, প্রশিক্ষণে স্যানিটাইজারসহ কোনো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সরঞ্জামের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। সবাই একই মেশিনে আঙুলের ছাপ দিয়েছে।

শুক্রবার থেকে নগরীর কয়েকটি স্কুলে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের এ প্রশিক্ষণ শুরু হয়। এবার করোনা সচেতনতায় মনোযোগ দিতে চান প্রার্থীরা : চসিক নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় নগরবাসীর মধ্যে স্বস্তি নেমে এসেছে। চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা কমিশনের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। একই সঙ্গে মেয়র প্রার্থীরাও সাধুবাদ জানিয়েছেন। তারা এখন গণসংযোগের পরিবর্তে করোনা সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালাবেন বলে জানান।

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী শনিবার যুগান্তরকে বলেন, আমি আগেও বলেছি মানুষের জানমালের নিরাপত্তা আগে। এখন যেহেতু করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে, তাই নির্বাচন কমিশন নির্বাচন স্থগিত করেছে। এখন করোনা ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রত্যেকের উচিত কিছু কাজ করা।

নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনও। তিনি যুগান্তরকে বলেন, দেরিতে হলেও নির্বাচন কমিশনের শুভ বুদ্ধির উদয় হয়েছে। এজন্য সাধুবাদ জানাই। করোনা যেভাবে বাড়ছে, তাতে এ মুহূর্তে রাজনীতি নয়। মতাদর্শ, দলমত ও রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে এটাকে মোকাবেলা করতে হবে। আমরা এখন এ নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করব।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর