করোনা, প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ ও একজন বিজন শীল

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাঝে মাঝেই সত্যি আমাদের বিস্মিত করেন। কীভাবে তিনি দেশের এত কিছু নিজ হাতে সামলান! প্রধানমন্ত্রী নিজেই উদ্যোগ নিয়ে করোনার দ্রুত ও সহজ টেস্ট পদ্ধতি আবিষ্কারক বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীলের সঙ্গে কথা বলার জন্য আজ ( ২২.৩.২০২০) তাকে ডেকেছেন। ড. বিজন কুমার শীল নোভেল (কোভিড-১৯) পরীক্ষার যে দ্রুত পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন সেটা বাস্তবায়নের জন্য রিএজেন্ট আমদানির অনুমোদন দেওয়ার ব্যবস্থাও প্রধানমন্ত্রী নিজ উদ্যোগ নিয়েই করে দেন মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে।

ড. বিজন কুমার শীলের বর্তমান কর্মস্থল গণস্বাস্থ্য ১৮ তারিখে এই আবেদন করেছিল। একটি মহল কিছু বাধা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছিল যাতে রিএজেন্টটি আমদানি না হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নিজে বিষয়টির প্রতি নজর রেখে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ওই রিএজেন্ট আমদানির অনুমতির সব ব্যবস্থা করেন। এবং শুধু এই অনুমতি দিয়েই তিনি বসে থাকেননি। বাংলাদেশের মাথার ওপর যখন করোনার মহাদুর্যোগ চেপে বসতে যাচ্ছে, এই দুর্যোগ মোকাবিলায় ড. বিজনকে আরও কত বেশি কাজে লাগানো যায় সেজন্য তিনি তাকে ডেকেছেন। এই মহাদুর্যোগের সময় এ ধরনের প্রতিটি বিষয় ধরে ধরে এগিয়ে বিপদ মোকাবিলায় এ যে কত বড় পদক্ষেপ তা ভবিষ্যৎ বলে দেবে।

ড. বিজন কুমার শীল শুধু একজন বিজ্ঞানী নন, তিনি শতভাগ দেশপ্রেমিক। সাধারণ ঘর থেকে উঠে আসা এই মানুষটি বারবার দেশকে কিছু না কিছু দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু একটি স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে পেরে উঠছেন না। ড. বিজন কুমার শীল নব্বইয়ের দশকে ব্ল্যাক গোটের ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেন। সেটা বাংলাদেশ প্যাটেন্ট করতে পারলে বাংলাদেশ চা রপ্তানি করে যে অর্থ পায় তার থেকে দ্বিগুণ আয় করতে পারত। ড. বিজন চেষ্টা করেছিলেন তার সাধ্যমতো। নিজের পেশার বাইরে গিয়ে রাজনৈতিক যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে সেদিন ড. বিজনের আবিষ্কারের মালিক যাতে বাংলাদেশ হতে পারে তার কিছুটা চেষ্টা করেছিলাম। শেষ পর্যন্ত ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক চক্রের কাজে পরাজিত হন। এর পর বিভিন্ন শত্রুর অত্যাচারে ড. বিজনকে দেশ ছেড়ে সিঙ্গাপুরে চলে যেতে হয়। বিজন সমস্ত বিপদ মাথায় নিয়ে দেশেই থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার এবং তার সন্তানের জীবনের কথা চিন্তা করে আমাদের মতো অনেকেই অনেকটা জোর করে ড.বিজন কুমার শীলকে সিঙ্গাপুরে চলে যেতে রাজি করাই। সেদিন ড. বিজন চোখের পানি ফেলে এই দেশ ত্যাগ করেছিলেন। ড. বিজন যখন দেশ ত্যাগ করেন ততক্ষণে তিনি ডেঙ্গুর কুইক টেস্টও আবিষ্কার করেছিলেন। তারপরে তো সিঙ্গাপুরে গিয়ে তিনি সার্সের (বর্তমানের করোনা কিন্তু সার্সেরই পরের ভাইরাস এটা সার্স-২) কুইক টেস্ট আবিষ্কার করেন, যা চীন প্যাটেন্ট করে। যা হোক কেন সেদিন বিজনকে চলে যেতে হয়েছিল আর তার আবিষ্কারগুলো কেন এ দেশ ব্যবহার করতে পারল না তা সত্যিই এক রহস্য উপন্যাসের মতো। জীবনে হয়তো কোনো এক সময়ে সে বিষয়ে বিস্তারিত বই লিখব। আজকের এই মহাদুর্যোগে আমাদের প্রধানমন্ত্রী যে ড. বিজনকে নিজ উদ্যোগে খুঁজে নিয়ে কাজে লাগাতে যাচ্ছেন এটা জেনে শুধু আনন্দিত নয় আশান্বিতও হচ্ছি এই ভেবে যে, এই মহাদুর্যোগে ড. বিজন যেন প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় মানুষের কাজে লাগতে পারেন।

ড. বিজন যে করোনা নিশ্চিতকরণের সহজ পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন তার বৈজ্ঞানিক দিক ব্যাখ্যা করে লেখার ব্যক্তি আমি নই। আর সে বিষয়টি এখানে প্রয়োজনও নেই। কারণ ড. বিজন যেহেতু সিঙ্গাপুরে বসে সার্সের কুইক টেস্ট আবিষ্কার করেন এবং চীন ও সিঙ্গাপুরসহ অনেক দেশ সেটা কাজে লাগায় তাই তার এই করোনা বা সার্স ২-এর কুইক টেস্টের ওপর আস্থা রাখতে কোনো দ্বিধা থাকার কথা নয়। শুধু ভয় ছিল ব্যবসায়ীদের প্রতিরোধের মুখে ড. বিজন তার আবিষ্কার নিয়ে টিকতে পারবেন কিনা? কারণ ব্যবসায়ীরা এই ধরনের দুর্যোগের মধ্যে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা খোঁজেন। ২০১৯-এর ডেঙ্গু টেস্টের ব্যবসা মনে হয় দেশবাসীর স্মৃতি থেকে এখনো যাইনি। তাই করোনা যখন ভয়াবহ রূপ নিয়ে এগিয়ে আসছে এ সময়ে ব্যবসায়ীরাও তাদের অর্থ খুঁজছে। কারণ যখনই রাজপথে রক্ত থাকে তখন ব্যবসায়ীদের অর্থ খোঁজার সব থেকে বড় সময়। বিজনের এই কুইক ও সহজ পদ্ধতির টেস্ট ওই ব্যবসা করতে দেবে না। বরং সাধারণ ল্যাবে সহজে এবং খুবই কম খরচে এই টেস্ট করা সম্ভব হবে।

আর এবার এই মহাদুর্যোগে দেশবাসী ড. বিজনের এই আবিষ্কারের সুফল পাবেই। কারণ এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই তাকে কাজে লাগাতে এগিয়ে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী যখন ড. বিজন কুমার শীলকে ডেকেছেন তখন দেশবাসী নিশ্চয়ই আশা করতে পারে তাকে আর শুধু গণস্বাস্থ্যের ছোট ল্যাবে আটকে থাকতে হবে না। বরং তিনি যাতে ব্যাপকভাবে দেশের জন্য কাজ করতে পারেন এই দুর্যোগের সময় সে ব্যবস্থাই প্রধানমন্ত্রী তাকে করে দেবেন। তা ছাড়া সরকার তার পেছনে দাঁড়ালে হয়তো তার এই পদ্ধতির টেস্টের খরচ দুইশ থেকে নেমে একশতেও আসতে পারে। সর্বোপরি ড. বিজন শীলও সুযোগ পাবেন বৃহত্তর পরিসরে কাজ করার, যা এই মুহূর্তে সব থেকে দরকার। অন্যদিকে ড. বিজন কুমার শীল গত ফেব্রুয়ারি মাসে করোনার চিকিৎসার জন্য যে হাইপারইমুনি থেরাপির কথা বলেছিলেন, সেটা মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আমেরিকা অনুসরণ করছে। আমাদের চিকিৎসকরাও যাতে এ পথে এগোতে পারেন সেখানেও প্রধানমন্ত্রীর আশীর্বাদে ড. বিজন যদি কাজ করতে পারেন সেটাও এই জনভারক্লিষ্ট দেশটির জন্য অনেক বড় পাওয়া। কারণ আমাদের মতো এই জনঘনত্বের দেশে করোনা কত ভয়াবহ তা মনে হয় এতদিনে আর নতুন করে লেখার কিছু নেই। এ সময়ে সহজ টেস্ট পদ্ধতি এবং এই চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে বিজ্ঞানী বিজন শীল এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায় সফল হোক এই আশাই করি। কারণ এ মুহূর্তে ডাক্তার, নার্স এবং সর্বোপরি বিজ্ঞানীরাই আমাদের শেষ ভরসাস্থল।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর