photojournalist

করোনাভাইরাসে সংক্রমণের ঝুঁকি কাদের বেশি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মহামারিতে পরিণত হওয়া করোনাভাইরাস বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৮ হাজার মানুষের। পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘ওয়ার্ল্ডোমিটার’ এ প্রকাশিত তথ্য মতে,এ পর্যন্ত ১৫৯টি দেশের ১ লাখ ৯৮ হাজার ৪২৬ জন এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। করোনাভাইরাস আসলে কী, আক্রান্ত হওয়ার পর লক্ষণগুলো কীভাবে প্রকাশ পায়, কীভাবে ছড়ায় এবং কারা সংক্রমিত হয়- এ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, ইউজিসি অধ্যাপক, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ।

করোনাভাইরাস কী? 

করোনাভাইরাস আসলে একটি ভাইরাসের গোত্র বা পরিবারের নাম। এই পরিবারের মধ্যে ছয়টি ভাইরাস আগে থেকেই রয়েছে এবং নতুন করোনাভাইরাস অর্থাৎ কোভিড-১৯ সহ করোনাভাইরাস পরিবারে এখন সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাতে। করোনাভাইরাস পরিবারের চারটি ভাইরাসের লক্ষণ সাধারণ সর্দি কাশির মতোই। তবে মার্স এবং সার্চ সবচেয়ে প্রাণঘাতী ছিল।

কোভিড-১৯ কী?

নতুন করোনাভাইরাস দিয়ে সৃষ্ট রোগের নামকরণ করা হয়েছে কোভিড-১৯। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান প্রদেশে এটি প্রথম ধরা পড়ে। এখন পর্যন্ত এটি মার্স এবং সার্চের মতো প্রাণঘাতী নয়।

আক্রান্ত রোগীর লক্ষণ কী?

কোভিড-১৯ এর লক্ষণ অন্যান্য ভাইরাস জ্বরের মতোই। এর প্রাথমিক লক্ষণ হলো জ্বর, ক্লান্তি ভাব, শুষ্ক কাশি। এছাড়া শরীর ব্যথা, নাক বন্ধ, নাক দিয়ে পানি পড়া, গলা-ব্যথা, পাতলা পায়খানাও থাকতে পারে। সময়ের সঙ্গে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে তীব্রতা বাড়ে এবং মৃদু থেকে তীব্র শ্বাস কষ্ট দেখা যায়। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরও কোনো রকম লক্ষণ প্রকাশ পায় না বা দুই একটি লক্ষণ থাকতে পারে।

করোনাভাইরাসের সঙ্গে ফ্লু বা সাধারণ সর্দি-কাশির তফাৎ কী?

করোনাভাইরাসের সঙ্গে ফ্লু বা সাধারণ সর্দি-কাশির উপসর্গে বেশ মিল রয়েছে। কোভিড-১৯ এর প্রধান উপসর্গ জ্বর, কাশি। তবে ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে এসবের পাশাপাশি গলা ব্যথার মতো উপসর্গও থাকে। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলে অনেকের আবার শ্বাসকষ্ট থাকতে পারে, যা ফ্লুতে দেখা যায় না। সাধারণ সর্দি-কাশির সঙ্গে কোভিড-১৯ এর এত মিল থাকায় পরীক্ষা না করে বোঝা মুশকিল।

করোনাভাইরাস কীভাবে ছড়ায়?

কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত কণার মধ্যে এই ভাইরাসটি থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁচি-কাশি দিলে তার তিন ফুটের মধ্যে কেউ থাকলে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। এটি বাতাসে ছড়ায় না। শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত কণা ভারি হওয়ায় এটি বাতাসে ভেসে বেড়াতে পারে না। তাই এটি মাটি, মেঝে বা অন্য কোনো বস্তুর ওপর যখন পড়ে তা দীর্ঘ সময় জীবিত থাকতে পারে। সেখান থেকে স্পর্শের মাধ্যমে অন্য কারোর করোনা সংক্রমণ হতে পারে।

সংক্রমণের ঝুঁকি কাদের বেশি?

যে কারোরই করোনাভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের কম যেমন ডায়াবেটিস, কিডনি বিকল, হৃদরোগী, অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টজনিত রোগে যারা ভুগছেন, বিশেষ করে বৃদ্ধরা, তারা সাধারণত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকেন। ধূমপায়ী পুরুষদের মধ্যে এই ভাইরাসের মারাত্মক প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। ধূমপানের ফলে শ্বাসনালী ও ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কিছুটা কম থাকে বিধায় এরা শ্বাসনালী ও ফুসফুসকে আক্রমণ করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা দানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেশি।

শিশুরা কতটা ঝুঁকিতে?

করোনাভাইরাসে যেকোনো বয়সীরাই আক্রান্ত হতে পারে। শিশুরা এ ভাইরাস থেকে কিছুটা হলেও নিরাপদ রয়েছে। বাবা-মা বা পরিবারের কেউ আক্রান্ত হলে এবং বারবার তাদের সংস্পর্শে এলে শিশুদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তবে শিশুদের মধ্যে যাদের অ্যাজমা রয়েছে বা অন্য কোনো জন্মগত বা দীর্ঘমেয়াদি রোগ আছে, তাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর