গোটা হাসপাতালে জীবন মৃত্যুর যুদ্ধ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস এখন বৈশ্বিক মহামারি। এতে সারাবিশ্বে এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬১৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ১০ হাজার ৪৮ জন। এছাড়া চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮৮ হাজার ৪৩৭ জন। এখন সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা ইউরোপের দেশ ইতালিতে। সেখানে যেন লাশের মিছিল থামছেই না। এমন অবস্থা যে কবরেও লাশের ঠাই হচ্ছে না।
হাসপাতাল কর্মীরা ক্রমাগত হাত নেড়ে পথ থেকে মানুষ সরাচ্ছেন, স্ট্রেচারে করে দ্রুতগতিতে একের পর এক রোগীকে ভেতরে নিয়ে যাচ্ছেন।
সবাই অসম্ভব রকমের ব্যস্ত, ছোটাছুটি করছেন এক রোগী থেকে অন্য রোগীর বিছানায়।
হাসপাতালের ওয়ার্ডে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা বিছানাগুলোতে রোগীরা কষ্টে কাতরাচ্ছেন। কেউ নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ার কথা জানাচ্ছেন, অক্সিজেন খুঁজছেন। কেউ আবার মুখে অক্সিজেন টিউব থাকা সত্ত্বেও বুক চাপড়ে তীব্র যন্ত্রণার কথা বলতে চাইছেন।
আমি বারগেমোর প্রধান একটি হাসপাতালে দাঁড়িয়ে আছি। ইতালিতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত অঞ্চল ল্যাম্বার্ডির সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত শহর বারগেমো এখন যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে।
মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস ও গায়ে হ্যাজমেট স্যুট পরে আমরা হাসপাতালের এক করিডোর থেকে অন্য করিডোরে সংবাদ সংগ্রহের জন্য ছুটছিলাম।
একজনের কাছে জানতে চাইলাম, এটা কোন ওয়ার্ড?’
হাসপাতাল প্রেস উইংয়ের প্রধান ভানা টনিনেইলি উত্তরে বললেন, এটা কোনো ওয়ার্ড না। এটা ওয়েটিং রুম। আমাদেরকে এখন হাসপাতালের সব স্থান ব্যবহার করতে হচ্ছে।
হাসপাতালে কর্মীরা দিনরাত এখানে ভয়াবহ যুদ্ধ করছেন, জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করছেন। সেই যুদ্ধে তারা বারবার পরাজিত হচ্ছেন!
এই একটি হাসপাতালের পরিস্থিতি থেকেই গোটা ইতালির হাসপাতালগুলোর চিত্র অনুমান করা যায়। একেক জন রোগী এসে হাসপাতালে ঢোকার পরপরই দলবেঁধে তার কাছে ছুটে যাচ্ছেন কর্মীরা। দ্রুত স্যালাইন ও অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন, গায়ে মনিটরসহ নানা যন্ত্রপাতি বসাচ্ছেন।
বিপুল যন্ত্রপাতি ও কর্মীদের উদ্বেগ দেখে মনে হয় এটা যেন কোনো নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ), কিন্তু এটা একটা জরুরি বিভাগের প্রবেশ পথ। আইসিইউতে কোনো জায়গা নেই। শারীরিক অবস্থা প্রচণ্ড খারাপ হওয়া সত্ত্বেও নতুন আসা রোগীদেরকে বাইরেই রাখতে হচ্ছে।
অন্য কোনো সময় হলে ওই রোগীদের আইসিউতেই রাখা হতো। কিন্তু, এই হাসপাতালের আইসিউতে জায়গা পেতে হলে কেবল গুরুতর অসুস্থ না, আপনাকে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে থাকতে হবে।
মহামারির সময়ে আমরা এতোটাই খারাপ অবস্থায় আছি যে, গুরুতর অসুস্থতা নিয়েও আইসিইউর বাইরে থাকাটা স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোটা বিশ্বকে এই মহামারি যে কতটা ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে, তা জানানোর জন্য। তারা চাইছে, অনেকেই যারা ইতালি সরকারের আন্তরিকতা, দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন করছেন, তারা এখানকার করুণ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানুক।
হাসপাতাল জুড়ে হার্ট মনিটর, অক্সিজেন পাম্পের শব্দ এক মুহূর্তের জন্যও থামার উপায় নেই। একেক জন রোগীর সারা শরীরে প্লাস্টিক মোড়ানো। চিকিৎসকের কথা রোগী ঠিক মতো শুনতে পাচ্ছেন না। রোগীদের কথাও পৌঁছাচ্ছে না চিকিৎসকের কানে।
এটা মোটেও সাধারণ ফ্লু না। এটা কোনো নিউমোনিয়া না। একইরকম উপসর্গ নিয়ে ভাইরাসটি প্রতিদিন হাজারো মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে।
জরুরি বিভাগের প্রধান ডা. রোবের্তো কোসেটিনি বলেন, ‘এরকম মহামারি আমরা আগে কখনো দেখিনি। হাসপাতালের কেউ কখনো এটা কল্পনাও করেননি যে, এতো রোগী একসঙ্গে সামলাতে হবে।’
প্রসঙ্গত, নতুন করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়ে গেছে ইতালি। দেশটিতে এখন পর্যন্ত মৃতের ৩ হাজার ৪০৫, আক্রান্ত হয়েছেন ৪১ হাজার ৩৫ জন। হাসপাতালগুলোতে প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা, চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।স্কাই নিউজ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর