বন্দরে কারখানার বর্জ্যে সেচ প্রকল্পের ড্রেন বন্ধ কৃষকের সর্বনাশ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী কুড়িপাড়া ইস্পাহানি এলাকায় গড়ে ওঠা তুলা তৈরি কারখানার বর্জ্য জমে বন্ধ হয়ে গেছে কৃষি জমিতে পানি সরবরাহে সরকারি অর্থায়নে নির্মিত সেচ প্রকল্পের ড্রেন। কৃষি জমিতে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা না থাকায় নারায়ণগঞ্জ বন্দরের ধামগড় ইউপির বটতলা, আমৈর কড়ইবাড়ী ও কান্দাপাড়াসহ প্রায় এক হাজার বিঘা কৃষি জমি অনাবাদে পড়ে রয়েছে। ইরি ধানের উপযোগী জমিতে এখন ঘাস। পানির অভাবে কৃষি জমিতে ধান উৎপাদনে ব্যর্থ এবং ১২  মাস নগদ টাকায় চাল কিনে খেতে হবে এ পরিস্থিতি সম্মুখীনে দিশাহারা নিরীহ কৃষক পরিবার। সরকারিভাবে উপজেলা কৃষি অফিস এ মৌসুমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়ে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে কৃষকরা। সরজমিন ঘুরে আমৈর গ্রামের কৃষক হাজী বেলায়েত হোসেন, আবদুর রশিদ মাস্টার, মোখলেছুর রহমান কথা বলে জানা গেছে, বটতলা, আমৈর কড়ইবাড়ী ও কান্দাপাড়া বিলে কৃষি জমিতে বাবা দাদা ও পূর্ব পুরুষগণ ইরি ধান চাষ করতো। কিন্তু এ বছর ধান চাষ করা হচ্ছে না পানির অভাবে। অনাবাদে পড়ে আছে ভাবতে অবাক লাগে।

ইরি ধানের চাষাবাদে চালের চাহিদা মিটাতেন। চাল কেনার বাড়তি কোনো চিন্তা ছিল না। নিজেদের সারা বছর খেয়ে বছর শেষে অন্যত্র চাল বিক্রি করে ওই টাকায় পরের বছর কৃষি কাজে খরচ করা হতো। শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী কুড়িপাড়া এলাকায় ইরি ধান সেচ প্রকল্পের ড্রেন বন্ধ করে যত্রতত্র অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে তুলার কারখানা ও গোডাউন। এসব তুলা কারখানা ও গোডাউনের বর্জ্য ও উচ্ছিষ্ট ফেলে পানি সেচের ড্রেন বন্ধ হয়ে গিয়ে কৃষি জমিতে ইরি ধানের চাষসহ মৌসুমী সবজি চাষের ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে পানির সেচ স্কিম পরিচালনা করতে বহু ঝামেলা অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ে লোকসানে পড়তে হচ্ছে সেচ প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছেন। সরকারিভাবে উপজেলা কৃষি অফিস প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেয়ায় স্থায়ীভাবে কৃষি চাষাবাদ বন্ধ হয়ে কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়ে।
বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ রশীদ জানান, কৃষির বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হবে। বিষয়টি লিখিত আকারে জানালে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।
এ বিষয়ে ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত। ইউএনও স্যারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এটি প্রক্রিয়াধীন আছে ও অচিরেই এ সমস্যার সমাধান করা হবে।
নাসিক কাউন্সিলর কামরুজ্জামান বাবুল জানান, আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে পানি সেচের লাইন কয়েকবার পরিষ্কার করেছি। কিন্তু তুলার গোডাউনের বর্জ্য ফেলায় সেচের লাইন পুনরায় বন্ধ হয়ে গেছে। বন্দর ইউএনও লিখিতভাবে বিষয়টি অবহিত করেছি। তখন সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে বলে তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেন। বন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারহানা সুলতানা জানান, নির্দিষ্ট সময়ে কৃষকরা বিষয়টি জানায়নি বিধায় সময়মতো ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। আমরা সরজমিন খোঁজ নিয়েছি এবং বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। সমাধানের বিষয়ে আমরা আশাবাদী। বন্দর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শুক্লা সরকার জানান, আমি ও কৃষি কর্মকর্তা ওই এলাকায় কৃষি জমি পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। কিন্তু সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে কেউ সহায়তা করেনি। সবকিছু ঠিক আছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছিল। কৃষি জমিতে যদি চাষাবাদের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে সময়মতো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই আমরা অবশ্যই বিষয়টি খতিয়ে দেখি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর