সিন্ডিকেটে বেসামাল স্টেপ প্রকল্প

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কারিগরি শিক্ষার মান উন্নয়নে স্কিলস অ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্টের (স্টেপ) কাজে পাহাড়সম অনিয়ম-দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রায় ১৮শ কোটি টাকার এই প্রকল্পে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে সামগ্রী কেনার নামে প্রকল্প কর্মকর্তাসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কিছু কর্মকর্তা ব্যাপক অনিয়ম করেছেন বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। খোদ প্রকল্প পরিচালকের স্ত্রীর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানও এই প্রকল্পের সরবরাহকারী এমনটি প্রমাণিত।

একটি সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারাও প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে অবগত। এর প্রেক্ষিতে প্রকল্পভুক্ত ৩১ জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য কেনা যন্ত্রপাতি সম্পর্কে প্রতিবেদন দিতে ৩৮ কর্মকর্তার সমন্বয়ে ১১টি কমিটি গঠন করা হয়। অনুসন্ধান শেষে কমিটিগুলো প্রতিবেদন তৈরির কাজ করছে বলে জানা গেছে।

কারিগরি শিক্ষার মানোন্নয়নে স্কিলস অ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট (স্টেপ) প্রকল্পের অনুদানের বিষয়ে অনুসন্ধান করে দৈনিক অধিকার। মহৎ এ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকসহ কয়েকজন কর্তাব্যক্তির বিরুদ্ধে চিহ্নিত কিছু সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে আঁতাত করে কোটি কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ মিলেছে।

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের সঙ্গে বাস্তব চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে দেশের কারিগরি শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। তারই প্রেক্ষিতে দেশে কারিগরি শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আধুনিক প্রযুক্তির জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে নানা কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

সূত্র বলছে, দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ মান উন্নয়ন প্রকল্পটিতে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মাধ্যমে ফান্ড প্রদান করে কানাডিয়ান সরকার। আর প্রাথমিক ছয় বছর মেয়াদি (জুলাই ২০১০-জুন ২০১৬) প্রকল্প সফলভাবে শেষ হওয়ার পর এ প্রকল্পটি পরবর্তী তিন বছরের (জুলাই ২০১৬-জুন ২০১৯) জন্য বাড়ানো হয়েছে। এ প্রকল্পে যৌথভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ সরকার, বিশ্বব্যাংক ও কানাডা।

শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে সহযোগী সংস্থাসমূহ মোট ১ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। এর মধ্যে প্রাথমিক ৮৪৯ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের পর প্রকল্পটির বাস্তবায়ন অগ্রগতি সন্তোষজনক হওয়ায় সংস্থাগুলো আরও ৯৩৩ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ করে। কিন্তু প্রকল্প শেষ হতে না হতেই দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তোলে ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠানগুলো।

প্রকল্পটির কর্মকর্তাদের অস্বচ্ছতা নিয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেছেন এসব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানান, অনুদানপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের সকল নিয়ম মেনেই যথাসময়ে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মালামাল সরবরাহ করার পরও প্রকল্প পরিচালকের চাহিদামতো কমিশন না দেওয়ায় নিম্ন দরদাতা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিল আটকে দেওয়া হয়। আবার প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে আর্থিক সখ্যতা থাকায় সময়মতো মানসম্মত মালামাল সরবরাহ না করা সত্ত্বেও বিল পাওয়ার উদাহরণ রয়েছে ভুড়ি ভুড়ি।

আরও জানা গেছে, প্রকল্প পরিচালকের সাথে যে প্রতিষ্ঠানের সুসম্পর্ক আছে তাদের জন্য সব অনিয়মই যেন নিয়ম। পিডির মদদপুষ্ট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অনুদানপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান টেন্ডারের কাগজ তৈরি করে টেন্ডার করলেও প্রয়োজন পড়ে না রিটেন্ডারের। এ কারণে, তারা নিজের ইচ্ছেমতো স্পেসিফিকেশন দিয়ে ডকুমেন্টস তৈরি করে দেওয়ায় কাজ পায় না অন্য সরবরাহকারীরা। ফলে প্রকল্প পরিচালক তার পছন্দের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মালামাল সরবরাহের জন্য আদেশ প্রদানের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা।

পক্ষান্তরে, কোনো অনুদানপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান যদি প্রকল্প পরিচালকের পছন্দের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান দিয়ে টেন্ডার স্পেসিফিকেশন না করে। তবে ঐ প্রতিষ্ঠানকে বারবার রিটেন্ডার করতে বাধ্য করেন প্রকল্প পরিচালক।

সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কোনো সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান যথাসময়ে গুণগত মালামাল সরবরাহ করার পরও তাদের বিল প্রদানে দেখানো হয় বিভিন্ন অজুহাত।

এসব অভিযোগগুলোর সত্যতা অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে আরও কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রকল্পটি নিয়ন্ত্রণ করে মূলত প্রকল্প পরিচালক এবিএম আজাদ। তার সঙ্গে আরও আছেন উপপ্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, প্রোগ্রাম অফিসার এইচ.এম. কবির হোসেনসহ তাদের মদদপুষ্ট কয়েকটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। এ সকল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে মোটা অঙ্কের কমিশন পান স্টেপের এ তিন কর্মকর্তা। মূলত এ প্রতিষ্ঠানগুলো অত্যন্ত নিম্নমানের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে থাকে। কিন্তু এতে করে প্রকল্পের সুফলটি শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছায় না। ক্ষেত্রবিশেষে মালামাল না কিনেই সুযোগ আছে বিল করে নেওয়ার। এ ক্ষেত্রে করতে হয় অন্দরমহলে একটি সুক্ষ্ম আর্থিক সমন্বয়।

এ দিকে, কোনো প্রতিষ্ঠান যদি স্টেপ কর্তৃপক্ষের পছন্দসই প্রতিষ্ঠানকে কাজ না দেয় তাহলে ঐ প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্নভাবে হয়রানিসহ নাজেহাল করা হয়। আগামীতে স্টেপের কোনো প্রকল্প পাবে না বলেও তাদের হুমকি দেন তারা।

প্রকল্প পরিচালকের স্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তাদের সম্পদের পাহাড়- প্রকল্প পরিচালকের স্ত্রী এবং প্রকল্প পরিচালকের অধীনস্থ কয়েকজন কর্মকর্তা গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। নিজস্ব প্রতিষ্ঠান সরবরাহকারী হওয়ার সুবাদে কমিশনের টাকায় প্রকল্প পরিচালকের নামে এবং অধীনস্থ কর্মকর্তাদের নামে-বেনামে ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট ও প্লট কেনার অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্প থেকে লুটপাটকৃত অর্থ দ্বারা পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি পর্যটন কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা এগিয়ে চলেছে বলে অভিযোগ। প্রকল্প পরিচালক ও এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে এসব জমি ক্রয় সংক্রান্ত এবং ব্যবসায়িক চুক্তিনামার দলিলের কপি থেকে এই অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।

জানা গেছে, এসব জমির মালিকানা চুক্তিপত্রে প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী নুরুজ্জামান সাক্ষী হিসেবে সই করলেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সরাসরি অংশীদার হিসেবে প্রকৃত মালিকানায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রকল্প পরিচালক এবিএম আজাদ সাহেবের সহধর্মিণী এবং উপপ্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ নুরুজ্জামান এর সহধর্মিণী, প্রোগ্রাম অফিসার এইচ. এম. কবির হোসেন, মিথুনসহ রাজধানীর মিরপুরের অনুদানপ্রাপ্ত একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিক সোহেলী ইয়াসমীন সম্পৃক্ত রয়েছে। এছাড়াও পার্বত্য চট্রগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা প্রকল্পটির চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর নামেও জমি কেনা হয়েছে, যা কিনা অভ্যন্তরীণ চুক্তিতে জমির আসল মালিকানা প্রকল্প পরিচালকের নামে রয়েছে বলে সত্যতা মিলেছে।

স্টেপ উপপ্রকল্প পরিচালক নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ : প্রকল্প পরিচালক ছাড়াও স্টেপের উপপ্রকল্প পরিচালক হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ নুরুজ্জামানের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। নুরুজ্জামানের সঙ্গে প্রকল্প পরিচালকের সুসম্পর্ক থাকায় যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও উপপ্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে প্রকল্প অফিসের বেতন উত্তোলনের পাশাপাশি পাহাড়ি ভাতা উত্তোলনেরও অভিযোগ রয়েছে। যা সম্পূর্ণ বেআইনি। এছাড়াও প্রকল্প পরিচালক এবং উপপ্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিদেশে শিক্ষকদের ট্রেনিংয়ে পাঠানোর জন্য শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা গ্রহণেরও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোটা না থাকলেও অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হিসেবে দেখিয়ে বিদেশে ট্রেনিংয়ে পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে।

আরও যত অভিযোগ : এস এন ইন্টারন্যাশনাল নামক একটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের জাল কাগজপত্র দিয়ে শুধুমাত্র অনৈতিক অর্থ লেনদেনের কারণে মৃনাল কম্পিউটারের ১৮ লাখ টাকার টেন্ডার অনুমোদন করেছে প্রকল্প পরিচালক। কিন্তু একই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান একই জাল কাগজপত্র দিয়ে ইতঃপূর্বে প্রকল্প অফিসকে শুধুমাত্র ঘুষ না দেওয়ার কারণে জাল কাগজপত্রের ধুয়োতুলে দিনাজপুর টিটিসি সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রায় কোটি টাকার দুইটি প্যাকেজ বাতিল করেছিল প্রকল্প পরিচালক। কিন্তু পরে একই জাল কাগজ দিয়ে অনুমোদন প্রদান থেকে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় এই প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতি সম্পর্কে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, স্টেপকর্তাদের সাথে আঁতাত করে চলা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাপটে স্টেপে অনেকটাই অসহায় অন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান প্রতিনিধিদের নির্যাতনের অভিযোগ : স্টেপ কর্তারা আটকে দেয় চূড়ান্ত বিল আর দোসরীয় সিন্ডিকেট প্রতিষ্ঠানের কর্তারা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে প্রতিষ্ঠান প্রতিনিধিদের। ২০১৯ সালের ৬ জুন ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা ও অফিস সহকারী আগারগাঁয়ে দাপ্তরিক কাজে গেলে প্রকল্প পরিচালকের মদদে ইউনিক বিজনেজ সিস্টেম লিমিটেড নামে একটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন কর্মকর্তা বহিরাগত কিছু মাস্তান নিয়ে শারীরিক লাঞ্ছনা করে। এ ঘটনায় প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর থেকে রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে দায় এড়ানোর চেষ্টা করা হয়। পরে এই বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে।

অনৈতিক দাবি অমান্যে আটকে যায় চূড়ান্ত বিল : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের দাবি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের গাইডলাইন, প্রকল্পের নীতিমালাসহ দেশের প্রচলিত পাবলিক ক্রয় নীতিমালা অনুসরণ এবং যথাসময়ে প্রতিষ্ঠানের আদেশ অনুযায়ী মানসম্মত মালামাল সরবরাহ করার পরও শুধুমাত্র স্টেপের অনৈতিক চাওয়া মেনে না নেওয়ায় তাদের বিল আটকে যায়। চুক্তি বা নিয়ম অনুযায়ী অনুদানপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে টাকা প্রদান করবে স্টেপ কর্তৃপক্ষ। স্টেপ অনুমোদিত সেই কাগজপত্র অনুদানপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া ক্রয়কৃত মালামালের বিল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে অনুদানপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান প্রদান করবে। কিন্তু স্টেপ কর্তৃপক্ষ কাগজপত্র অনুমোদন করার পর অনুদানপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান সরবরাহকারীকে কার্যাদেশ দেওয়ার পর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান যথাসময়ে কার্যাদেশের শর্ত অনুযায়ী মালামাল সরবরাহ করার পরও চূড়ান্ত বিল ছাড়েনি। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি পরিদর্শন টিম এবং প্রকল্প পরিচালকসহ তার একাধিক টিম প্রতিষ্ঠানের মালামাল একাধিকবার পরিদর্শন করেছে। বিষয়টি নিয়েও স্টেপ প্রকল্পের আর্থিক স্বচ্ছতার ব্যাপারে প্রশ্ন উঠেছে।

এই বিষয়ে কার্যাদেশ অনুযায়ী সময়মতো মালামাল সরবরাহ করার পরও বিল না পাওয়ায় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান অনুদানপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের এবং স্টেপ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

কেনাকাটার অনিয়ম তদন্তে ১১টি কমিটি গঠন : নানা অভিযোগের কারণে দেশের ৩১ জেলার পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ক্রয়কৃত মালামাল পরিদর্শন ও প্রতিবেদন দিতে গেল বছরের ২৪ নভেম্বর ১১টি কমিটি করা হয়। ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয় এসব কমিটিকে। তবে এ পর্যন্ত কোনো কমিটিই প্রতিবেদন দেয়নি।

এ দিকে, সংশ্লিষ্টরা বলছেন- যোগসাজশে যেসব প্রতিষ্ঠানে মালামাল কেনা হয়েছে, অনুমোদনের জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে আগে থেকেই মালামাল থাকায় পরিদর্শনে সেখানে কেনাকাটার আসল তথ্য বের হবে না। তাই নতুন মালামাল শুধু দরপত্রের কাগজ দেখে চেনা যাবে না।

আগের মালের ইনভেন্টরি, বিক্রি করে থাকলে তার টেন্ডার ও বিল-ভাউচার ইত্যাদি নিরীক্ষা করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ থাকতে হবে কমিটিতে। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে তা ছিল না।

দেখা গেছে, কোনো কোনো আইটেমের কেনাকাটার প্রাক্কলন হয়েছে আইডিবি ভবনে। এমন ক্ষেত্রে প্রাক্কলনের ৪০ শতাংশ অর্থেই পণ্য পাওয়া গেছে। যে পরিমাণের কেনাকাটা, তার খুঁত বের করতে কমিটিতে বিশেষজ্ঞ দরকার বলে মত সংশ্লিষ্টদের।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে কয়েকটি গণমাধ্যম থেকে স্টেপের প্রকল্প পরিচালক এবং চট্টগ্রামের কমিশনার এবিএম আজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। পরে তিনি বলেন, নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে কাউকে অনুরোধ করেননি তিনি। কেউ চাপ দিয়ে থাকলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে। তার দপ্তর থেকে কে কাকে চাপ দিয়েছে তা সুনির্দিষ্ট করে বলার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, তারা প্রতিষ্ঠানগুলোকে থোক বরাদ্দ দেন। প্রকল্প অফিস কোনো প্রতিষ্ঠানের দরপত্র করেন না।

নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে কাজ না দেওয়ায় বিল আটকে রাখা সম্পর্কে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আপনি ডকুমেন্ট দেন। এরপর আমি কথা বলব। আমাকে তো পিপিআর (সরকারি ক্রয় আইন) অনুসরণ করতে হয়। একটা কেনাকাটার কাজে প্রকল্পের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা জড়িত থাকেন। তারা যখন কোনো বিষয় নেতিবাচক বলেন তখন সেটা আমি দেখি এবং নেতিবাচক হলে তা হ্যাঁ বলার কোনো কারণ নেই। তেমনি ইতিবাচক বললে এবং সে রকম হলে ইতিবাচক বলি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর