যুবলীগ কারও ভোগের উৎস হবে না পরশ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শাম্‌স পরশ বলেছেন, রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য গণমানুষের কল্যাণে কাজ করা, অসহায়-নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। যুবলীগকে পর্যায়ক্রমে সাধারণ মানুষের আস্থার প্রতীক হিসেবে গড়ে তোলা হবে। মানুষ যাতে যুবলীগের নাম শুনলেই ভয় না পায়; বরং তাদের দুঃখ-কষ্টগুলো যুবলীগের নেতাকর্মীদের কাছে বলার জন্য এগিয়ে আসে, এমন একটি সংগঠন গড়ার জন্য কাজ করছি। বুধবার তার বনানীর বাসভবনে যায়যায়দিনকে দেওয়া একান্ত এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘যুবলীগ কারও ভোগের উৎস হবে না। সংগঠনকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের মডেল হিসেবে গড়ে তোলার কাজ করা হচ্ছে। নিজে সৎ থাকব। কমিটি গঠনসহ সংগঠনের সর্ব পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। মূল জায়গাগুলো ঠিক করতে কাজ করছি। এভাবে কাজ করতে পারলে গণমানুষের প্রিয় সংগঠনে পরিণত হবে যুবলীগ।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত স্বচ্ছ মানুষজনও কিছুদিন আগে যুবলীগে আসতে চাইতেন না। বর্তমানে এই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। অনেক ভালো মানুষ যুবলীগে আসতে চাইছেন। পূর্ণাঙ্গ কমিটির জন্য এরই মধ্যে দেড় হাজারের বেশি জীবন বৃত্তান্ত জমা পড়েছে। এগুলো যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে কমিটি দেওয়া হবে। অপকর্মের সঙ্গে জড়িত কেউই যুবলীগে জায়গা পাবে না বলে জানান তিনি। যায়যায়দিনের পাঠকদের জন্য তার সাক্ষাৎকারটি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:
যাযাদি : আপনি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হয়েও এতদিন রাজনীতির বাইরে ছিলেন কেন?
পরশ : সবার তো রাজনীতি করার দরকার নেই। সবাইকে যে রাজনীতিবিদ হতে হবে এমনও কোনো কথা নেই। ভিন্নভাবে আমি আমার একাডেমিক জীবন উপভোগ করছিলাম, এখনও করি। যুবলীগের চেয়ারম্যান হওয়ার পরও আমার শিক্ষকতা চালিয়ে যাচ্ছি। রাজনীতি করি আর না করি ছোটবেলা থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। রাজনৈতিক হয়রানির শিকার হয়ে মাত্র ৫ বছর বয়সে আমাকে নির্বাসনে যেতে হয়েছে। তাছাড়া ১৯৭১ ও ৭৫, এক-এগারো এবং ২১ আগস্টে আমার পরিবার সরাসরি আক্রান্ত হয়েছে। যার ভুক্তভোগী আমিও। সুতরাং সরাসরি পদ-পদবিতে না থাকলেও আমার জীবনের কোনো সময়ই রাজনীতির বাইরে থাকতে পারিনি।
যাযাদি : আপনি তো পেশায় শিক্ষক, হঠাৎ করে রাজনীতিতে এলেন কেন?
পরশ : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপ্রেরণা ও নির্দেশনায় আমার বাবা অনেক কষ্ট করে যুবলীগ গড়েছিলেন। সেই সংগঠনের সংকটকালে আমি যদি দায়িত্ব নিতে না চাই, তাহলে নিজেকে দোষী মনে হবে। স্বার্থপর মনে হবে। সে  কারণে ভেবেছি, আমি যেহেতু ছাত্র পড়াই; এখানে হয়তোবা আমার কিছু দেওয়ার আছে। নিজের যোগ্যতা দিয়ে বাবার হাতে গড়া সংগঠনের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
যাযাদি : শিক্ষকতা ও রাজনীতি, দু’টো জায়গা কীভাবে উপভোগ করছেন?
পরশ : আমার কাছে সবাই মানুষ। ছাত্ররা আমার সন্তানের মতো। রাজনৈতিক নেতাকার্মী ও সহকর্মীরাও আমার ভাই-বোন, অনেক ক্ষেত্রে সন্তানের মতো। রাজনীতিতে ব্যস্ততা বেশি, মানুষ বেশি। আবার দু’টোকে মিলাতেও পারি। কারণ ওটা ছাত্রদেরকে মোটিভেট করা লাগে। সেখানে হয়তো ৪০-৫০ বা ১০০ বাচ্চাকে আদর্শ বা আলো দেখাতে হয়। আর এখনে অনেক বেশিসংখ্যক মানুষকে আলো দেখাতে হয়। কিন্তু মূল বিষয়টা আলো দেখানো। সবাইকে দিক-নির্দেশনা দেওয়া। যাতে রাস্তাঘাটে যুবলীগের নাম শুনলে মানুষ গালি দিতে না পারে। নেতাকর্মীরা যাতে সম্মান নিয়ে মাথা উঁচু করে চলতে পারে, সেজন্য কাজ করছি।
যাযাদি : যুবলীগের পথভ্রষ্ট নেতাকর্মীদের নিয়ে কি ভাবছেন?
পরশ : অপকর্মের সঙ্গে জড়িত কাউকেই যুবলীগের কোনো পর্যায়ের কমিটিতে রাখা হবে না। এ ব্যাপারে আমি এবং সাধারণ সম্পাদক দু’জনই দৃঢ়।
যাযাদি : পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ কতদূর এগিয়েছেন?
পরশ : পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিন্তু কোনো তারিখ দিতে চাই না। এই কমিটি নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। দেড় হাজারের বেশি জীবনবৃত্তান্ত জমা পড়েছে। এর আগে মনে হয় এত জীবনবৃত্তান্ত জমা পড়েনি। আমি সতর্কতার সাথে কমিটি করছি।
যাযাদি : কেমন কমিটি করবেন?
পরশ : রাজনৈতিক কর্মীদের কথা জানিনা কিন্তু যে কমিটি করছি এতে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে। সেজন্য যাচাই-বাছাইয়ে একটু সময় লাগছে। একটু ভালোভাবে দেখেশুনেই কমিটি করতে চাচ্ছি।
যাযাদি : সাংগঠনিক কাজগুলো কীভাবে করছেন?
পরশ : আমাদের সংগঠনের মূল লক্ষ্যই হবে মানুষের কল্যাণে কাজ করা। দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। আগুনে পোড়া পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছি। নেতাকর্মীদেরকেও মানবতার কল্যাণে কাজ করতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রতিনিধি সভা করেছি। সেখান থেকে নেতাকর্মীদের সাংগঠনিক নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছি।
যাযাদি : তৃণমূলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নিয়ে কি ভাবছেন?
পরশ : খুব শিগগিরই একটি জেলার সম্মেলন হবে। পর্যায়ক্রমে সকল ইউনিটের সম্মেলন করা হবে। যেসব জেলা-উপজেলার কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে সেখানে আহ্বায়ক কমিটি করে তাদেরকে কমিটি গঠনের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হবে।
যাযাদি : যুবলীগ নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী?
পরশ : যুবলীগকে এমন একটি সংগঠন করতে চাই, যেটা নিয়ে মানুষ গর্ব করতে পারে। আমার মূল উদ্দেশ্য হলো ভবিষৎ নেতৃত্ব তৈরি করা। এই সংগঠন কোনো ভোগের উৎস হবে না। এই সংগঠন যাতে মানুষকে দিতে পারে, দেশকে দিতে পারে এমন নেতৃত্ব তৈরি করব। সংগঠন করার মানে হলো সমাজ বা দেশের জন্য কিছু করা। ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য হাসিল কারর কিছু নেই।
যাযাদি : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধ্যনবাদ।
পরশ : আপনাকেও ধন্যবাদ।
ব্যক্তিগত তথ্য :
শেখ ফজলে শামস পরশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে ও যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণির বড় ছেলে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার কালরাতে পরশের বাবা-মাও শহিদ হয়েছিলেন। তার ছোট ভাই ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র।
ধানমন্ডি সরকারি বালক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এমএ ও যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো ইউনিভার্সিটি থেকে দ্বিতীয় বিএ পাস করেন। দেশে ফিরে গত ১৫ বছর ধরে প্রথমে ব্র্যাক ও পরে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে আসছেন।
১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে শেখ ফজলে শামস পরশের বাবা শেখ ফজলুল হক মণি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। তার চাচা শেখ ফজলুল করিম সেলিমও দীর্ঘ সময় চেয়ারম্যান হিসেবে যুবলীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। গত বছরের ২৩ অক্টোবর সংগঠনটির জাতীয় কংগ্রেসে শেখ ফজলে শামস্‌ পরশকে যুবলীগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর