মনে হয় দেশের সেরা সন্ত্রাসীকে ধরতে গেছে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে ধরে নিয়ে মধ্যরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ড দেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দাখিল করা রিট আবেদনের ওপর আজ সোমবার আদেশ দেবেন হাইকোর্ট। ভ্রাম্যমাণ আদালতের আদেশের কপি এবং সাংবাদিক রিগ্যানের বিরুদ্ধে অভিযানসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য ও নথি চেয়েছেন আদালত। ওই সব তথ্য আজ দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষকে। আদালত বলেছেন, এখন ডিজিটাল যুগ। অনুলিপি দিতে না পারলেও মূল কপি স্ক্যান করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে মুহূর্তেই সব পাঠানো সম্ভব।

বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল রবিবার এ বিষয়ে আদেশ দেন। জনস্বার্থে বাংলা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক হারুন উর রশিদের করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই আদেশ দেন আদালত। অভিযান পরিচালনার বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের কাছে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া হয়েছে।

আদালতে রিট আবেদনকারীপক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল দেবাশীষ ভট্টাচার্য।

একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মধ্যরাতে অভিযান পরিচালনা করা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে আদালত বলেন, পত্রিকায় দেখলাম ৪০ জন লোক নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। বিশাল ব্যাপার। মনে হয় যেন দেশের সেরা সন্ত্রাসীকে ধরতে গেছে। একজন সাংবাদিকের বাড়িতে এত লোক নিয়ে গেছে? এত বড় অভিযান? নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ অভিযান ছিল। তাই সে অভিযানে কী অর্জিত হয়েছে তা জানান।

আদালত সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে দেওয়া সাজা ও দণ্ডের আদেশের অনুলিপি, অভিযান কারা পরিচালনা করেছে—ভ্রাম্যমাণ আদালত, নাকি টাস্কফোর্স, রাতে অভিযান পরিচালনার বিষয়ে আইন অনুসারে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে কি না, অভিযান পরিচালনার কারণ এবং আইন অনুসারে ঘটনা কার সামনে কখন সংঘটিত হলো, তা জানাতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নথি দাখিল করতে বলা হয়েছে।

গতকাল শুনানি শেষে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন সাংবাদিকদের বলেন, দেশের কিছু জেলা প্রশাসক মোগল সম্রাটের মতো আচরণ করছেন। তিনি বলেন, সরকারের কাছ থেকে বেতন নিয়ে তাঁরা (কিছু ডিসি) সরকারকে বিপদে ফেলার জন্যই ষড়যন্ত্র করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তখন প্রধানমন্ত্রীর কাজকে কিছু আমলা প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত করছেন।

টাস্কফোর্সের নামে আরিফুল ইসলামকে অবৈধ সাজা ও আটক করা কেন সংবিধান পরিপন্থী হবে না, আরিফুল ইসলামকে কেন ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না, সে বিষয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়েছে রিট আবেদনে। এ ছাড়া কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক, সিনিয়র সহকারী কমিশনার, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে তাঁদের ভূমিকার ব্যাখ্যা দিতে আদালতে সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

গতকাল শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, ‘আইনের চোখে সবাই সমান। আইনে সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত কারো বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করা নিয়ে বিধি-নিষেধ রয়েছে। তবে আইনে বিশেষ কারণে অভিযান পরিচালনারও সুযোগ রাখা হয়েছে। সেখানে কী কী প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে, তা আইনে বলা আছে। তাই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মধ্যরাতে অভিযান পরিচালনার সময় আইনে নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে কি না, তা জানাতে হবে।

এর আগে রিট আবেদনকারীর এখতিয়ার ও আইনগত অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আদালত। রিট আবেদনকারীর আইনজীবীর কাছে রিগ্যানকে সাজা দেওয়ার আদেশের কপি দেখতে চাওয়া হয়। কিন্তু আইনজীবীরা তা দেখাতে পারেননি। আইনজীবী বলেন, সাজার আদেশের কপি পেতে কয়েক দিন সময় লাগে। ওই সময় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. বশির আহমেদ আদালতকে বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছ থেকে এত তাড়াতাড়ি আদেশের কপি পাওয়া যায় না।

শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল দেবাশীষ ভট্টাচার্য রিট আবেদনের বিরোধিতা করে বলেন, এটি ফৌজদারি অপরাধ। এর বিরুদ্ধে রিট আবেদন করার সুযোগ নেই।

গত শুক্রবার মধ্যরাতে কুড়িগ্রামে নিজ বাড়ির দরজা ভেঙে রিগ্যানকে ধরে নিয়ে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ড দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

রিগ্যানের বাড়িতে ‘আধাবোতল মদ ও দেড় শ গ্রাম গাঁজা’ পাওয়ার অভিযোগ দেখিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাঁকে এক বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। রিগ্যানের পরিবারের দাবি, পুকুর সংস্কার এবং জেলা প্রশাসকের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন ক্ষিপ্ত হয়ে রিগ্যানকে ফাঁসিয়েছেন। ওই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর