জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতে সর্বোচ্চ সিজিপিএ হোসনে আরার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সর্বোচ্চ সিজিপিএ একজন শিক্ষার্থীকে মেধার চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছে দেয়। এর পেছনে থাকে কিছু কৌশল, নিজের মতো পড়াশোনা ছাড়াও আরো ভিন্ন কিছু। যেসব কিছু ঐ শিক্ষার্থী পরিচয় করিয়ে দেয় আলাদাভাবে। তেমনই তাদের একজন হোসনে আরা।

২০১৮ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স চতুর্থ বর্ষে গণিতের ফাইনাল পরীক্ষায় সিজিপিএ ৪.০০ পেয়েছিলেন তিনি। তবে সর্বোচ্চ সিজিপিএ পাননি। মাস্টার্সে ঠিকই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সিজিপিএ’র রেকর্ড তার দখলে।

জন্ম ও বেড়ে ওঠা

হোসনে আরার জন্ম কক্সবাজার জেলার মহেশখালীতে। সাত ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোটো তিনি। শৈশব আর কৈশোর কেটেছে সেখানেই। লেখাপড়া শুরু গ্রামের বিদ্যালয়ে। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় মারা যান বাবা। পরিবারের হাল ধরেন বড় ভাইয়েরা। মাধ্যমিকের পাঠ চুকিয়েছেন ইউনুছ খালী নাছির উদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয়ে। ২০১০ সালে এই বিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম জিপিএ-৫ পাওয়া দুজন শিক্ষার্থীর একজন এই হোসনে আরা। এতে বিদ্যালয়ে সবার কাছে রীতিমতো হিরু বনে যান তিনি। এসএসসির পর ভর্তি হন কক্সবাজার সরকারি কলেজে। এইচএসসিতেও নিজেকে চিনিয়েছেন। পেয়েছেন বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ- ৫।

চলার পথে যত বাধা

স্বপ্ন ছিলো ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করবেন। এইচএসসি শেষেই মেডিকেলে ভর্তির কোচিং করবেন। কিন্তু বাঁধ সাধলো পরিবার। সাফ জানিয়ে দেয়া হলো, পড়াশোনার জন্য দূরে কোথাও যাওয়া যাবে না। তাই মেডিকেলে ভর্তি কোচিং আর হলো না। তবে এইচএসসির ফলাফল দেখেই খুশি পরিবার। আর তাই মেডিকেলে ভর্তি কোচিংয়ে আগ্রহ দেখায় পরিবার। তখন মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার আর মাত্র দুমাস বাকি। তবে সুযোগটি হাতছাড়া করলেন না। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করার। কিন্তু ভাগ্য তার সহায় ছিলো না, ব্যর্থ হলেন।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায়ও বাধা হয়ে দাঁড়ালো পরিবার। আবারো সেই একই যুক্তি, বাসা থেকে দূরে গিয়ে স্টাডি করা যাবে না। বাধ্য হয়ে হোসনে আরাও মেনে নিলেন সব। তবে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন এর জবাব লেখাপড়ার মাধ্যমেই দেবেন।

গণিতের প্রেমে পড়া:

মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করতে না পারায় হতাশ হয়ে গিয়েছিলেন হোসনে আরা। অন্যদিকে পরিবারের বাধায় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায়ও অংশগ্রহণ করতে পারেননি। বাধ্য হয়ে ভর্তি হলেন কক্সবাজার সরকারি কলেজে। এই কলেজে বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর মধ্যে আছে শুধু গণিত আর উদ্ভিদবিজ্ঞান। উদ্ভিদবিজ্ঞান ভালো লাগেনি তার। গণিতকেই পছন্দ করলেন। ছোটো থেকেই পোড়াশোনায় মনোযোগী তিনি। সেই মনোযোগিতা ধরে রাখলেন অনার্সেও। অনার্স প্রথম বর্ষের পরীক্ষায়ই বাজিমাত। তার ব্যাচে সেরা হলেন। সেবার তার রেজাল্ট ছিলো সিজিপিএ ৪.০০ এর মধ্যে ৩.৮৩।

আগে গণিতকে আর দশটা নরমাল বিষয়ের মতো মনে হলেও ধীরে ধীরে গণিতের প্রেমে পড়তে শুরু করেন হোসনে আরা। একই সময়ে গণিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে ভালো ফলাফল করা তাসলিমা সিরাজের সান্নিধ্য পান তিনি।

তাসলিমা সিরাজ তখন থেকেই প্রতি বর্ষে পুরো বাংলাদেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সেরা রেজাল্ট করে আসছিলেন। তার অনুপ্রেণায় হোসনে আরাও চেষ্টা করছিলেন আরো ভালো কিছু করার। তার প্রভাব পড়ে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ফলাফলে।

অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে সিজিপিএ ৪.০০ এর মধ্যে ৩.৯৪ পেয়েছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সারাদেশে শ্রেষ্ঠ হন। এর পরের বছর থেকে রেজাল্ট শুধু বেড়েছে বৈকি, কমেনি। সারাদেশে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ধরে রাখেন অনার্স তৃতীয় বর্ষেও। তৃতীয় বর্ষে সিজিপিএ ৪.০০ এর মধ্যে হোসনে আরা অর্জন করেন ৩.৯৭।

সবশেষে অনার্স শেষ বর্ষে ফলাফল দেখে সবার চোখ কপালে ওঠার মতো অবস্থা! সেবার তার সিজিপিএ ছিলো ৪.০০ এর মধ্যে ৪.০০। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এমন রেজাল্ট বলতে গেলে প্রায় অসম্ভবই। তবে সব মিলিয়ে অনার্সে তার সিজিপিএ ৪.০০ এর মধ্যে ৩.৯৪, যা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং তার সেশনে সর্বোচ্চ রেজাল্ট। এছাড়াও তার মাস্টার্সের রেজাল্ট সিজিপিএ ৩.৯৪, যা গণিত বিভাগে মাস্টার্সে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর