কিশোরগঞ্জের হাওরে ধান চাষে অনাবাদি হাজার হাজার হেক্টর জমি লোকসান

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জের হাওরে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি অনাবাদি অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এর প্রধান কারণ, ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া এবং গত কয়েক বছর ধরে বোরো চাষে অব্যাহত লোকসান। ফলে বোরো আবাদে আগ্রহ হারাচ্ছেন এই অঞ্চলের কৃষকরা। এজন্য চলতি বোরো মৌসুমে অনেক জমি অনাবাদি পড়ে রয়েছে।

সুনামগঞ্জের হাওরে এখনো থই থই পানি। কবে পানি নামবে। কবে শুরু হবে বোরো আবাদ—শঙ্কিত কৃষক। সম্প্রতি শনির হাওরের পশ্চিম পাড়ের বেড়িবাঁধে l প্রথম আলোকিশোরগঞ্জের ১৩টি উপজেলার ৯টিতেই রয়েছে হাওর। এসব এলাকার একমাত্র ফসল বোরো ধান। গত বছরও হাওরে মাঠের পর মাঠ জুড়ে ছিল ধান আর ধান। এবছরে যতদূর চোখ যায় অনাবদি জমি চোখে পড়ে। গত কয়েক বছরে আগাম বন্যা ও শিলা বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ অঞ্চলের কৃষক। গত বছর বাম্পার ফলনের পরও ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। আর এ লোকসানের কারণে হাজার হেক্টর জমি পতিত রয়েছে এ অঞ্চলে।

Image result for হাওরে অনাবাদি হাজার হাজার হেক্টর জমি ছবিকৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী,  চলতি বছর ১ লাখ ৬৭ হাজার ৬৭৬ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে চাষ হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার  হেক্টর জমিতে। যদিও সরকারি হিসাবের সঙ্গে একমত নন কৃষকরা। তারা বলছেন, হাওরে অন্তত ২৫-৩০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়নি।

Image result for হাওরে অনাবাদি হাজার হাজার হেক্টর জমি ছবিইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি গ্রামের কৃষক সুরুজ মিয়া বলেন, এক কাঠা জমিতে ধান চাষ করতে যে খরচহয় ফসল বিক্রি করে তা ওঠে না। উল্টো লোকসান গুণতে হয়। ঋণ করে চাষাবাদ করেও টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হয় না। তাই এবার চাষ হয়নি। লাভ না পেলে ধান চাষ করা সম্ভব নয়। সরকার যদি এ ব্যাপারে এগিয়ে না আসে তাহলে আমাদের পক্ষে বোরো আবাদ করা সম্ভব হবে না।

Image result for হাওরে বোরো চাষ নিয়ে শঙ্কা ছবিএকই গ্রামের রমজান আলী বলেন, এ বছর কিছু জমিতে বোরো আবাদ করলেও টাকার অভাবে বাকি জমিগুলোয় চাষাবাদ করতে পারেননি। কারণ প্রতিবছরই বন্যায় অনেক ক্ষয়-ক্ষতি হয়ে থাকে। তাছাড়া ধান চাষ করেও লাভের মুখ দেখা যায় না। সারের দাম ও তেলের দাম থাকে বেশি। প্রতিবছর লোকসান হতে হতে এখন আর আগের মতো জমি চাষ করতে পারি না। অনেকেই ঋণ খেলাপি হয়ে জমি বিক্রি চেষ্টা করেছে, কিন্তু জমি কেনারও লোক পাওয়া যাচ্ছে না।

প্রতিবছর বোরো চাষ করার খরচ জোগাতে ব্যাংক, এনজিও ও মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নেন কৃষকরা। ধান চাষে লোকসান হওয়ায় ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে অনেকেই বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় চলে গেছেন। আবার অনেকে জমি বিক্রি করেও ঋণ পরিশোধ করেছেন। তাই খাওয়ার জন্য অল্প জমি চাষ করে বেশির ভাগ জমিই অনাবাদি রেখেছেন অনেকে।

 

মিঠামইন উপজেলার ঢাকী ইউনিয়নের আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘আমাদের গ্রামের প্রায় ৩৫টি পরিবার বিভিন্ন ঋণের কারণে শহরে চলে গেছে। তাই তাদের বিভিন্ন জমি এখন অনাবাদি পড়ে আছে। আর আমার নিজের প্রায় দুই লাখ টাকা কৃষি ঋণ থাকায় এ বছর অনেক জমি অনাবাদি রয়েছে। গত বছর লোকসান গুণতে হয়েছে, তাই এ বছর সব জমিতে চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না।

Image result for হাওরে অনাবাদি হাজার হাজার হেক্টর জমি ছবিকিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণের বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আশোক পারভেজ বলেন,  ‘ইতোমধ্যে ধানের উৎপাদন ব্যয় কমানোর জন্য কাজ করা হচ্ছে। এ জেলার অধিকাংশ উপজেলা হাওরবেষ্টিত। তাই এখানে প্রতিবছরই প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিকটন বোরো চাষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে আসছে। কিন্তু গত কয়েকবছর বিভিন্ন কারণে এ এলাকার কৃষকরা ধানের সঠিক মূল্য পাচ্ছে না। তাই কৃষকরা যাতে লাভবান হয় তার জন্য বিকল্প ফসল হিসেবে ভুট্টা, সরিষা ও সূর্যমুখী আবাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর