দেশের সবচেয়ে বড় ‘হাজিরা খাতা’ এখন বেরোবিতে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) উপাচার্য ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ’র ক্যাম্পাসে  উপস্থিতি-অনুপস্থিতি বিষয়ক ‘হাজিরা খাতা’ টানানো হয়েছে। হাজিরা খাতাটি ক্যাম্পাসের শেখ রাসেল মিডিয়া চত্ত্বরে ঝুলছে বেশ কয়েকদিন থেকে। এর দৈর্ঘ্য-৬ এবং প্রস্থ-৪ ফুট। দুটি বাঁশের খুঁটির উপর ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে হাজিরা খাতাটি। এরকম আরো একটি হাজিরা খাতা টানানো হয়েছে ক্যাম্পাসের দুই নম্বর প্রবেশ পথে। দুটি হাজিরা খাতা একই রকম এবং একই দিন টানানো হয়েছে। একটি হাজিরা খাতা চুরির পর নতুন করে আবারো এই দু’টি হাজিরা খাতা স্থাপন করা হয়েছে। রবিবার (৮ মার্চ) বেলা দুইটায় শিক্ষকদের সংগঠন ‘অধিকার সুরক্ষা পরিষদ’ এই বোর্ড স্থাপন করেছে।

ধারণা করা হচ্ছে, এটিই দেশের সবচেয়ে বড় হাজিরা খাতা। দেশের অফিস-আদালত থেকে শুরু করে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানেই হাজিরা খাতার প্রচলন রয়েছে। তবে, এর চাইতে বড় হাজিরা খাতা দেশের আর কোথাও নেই বলে মনে করা হচ্ছে।

‘হাজিরা খাতা’ শীর্ষক বোর্ড দু’টিতে লেখা রয়েছে ‘বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর হাজিরা খাতা।’ এছাড়া, উপাচার্য ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ ক্যাম্পাসে যোগদানের পর কতদিন উপস্থিত ছিলেন এবং কতদিন অনুপস্থিত ছিলেন প্রভৃতি বিষয় সমূহ তুলে ধরা হয়েছে। বোর্ডটিতে দেখা যায়, বিশ^বিদ্যালয়ে যোগদানের মোট ৯৯৮দিনের মধ্যে অনুপস্থিতই ছিলেন ৭৭০ দিন এবং উপস্থিত ছিলেন মাত্র ২২৮দিন।

শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, উপাচার্যকে নিয়োগ দেওয়ার সময় শর্তেই উল্লেখ করা হয়েছিল তাকে ক্যাম্পাসে উপস্থিত থেকে ক্যাম্পাস পরিচালনা করতে হবে। তিনি তার নিয়োগের শর্তই লঙ্ঘন করেছেন। তার একাডেমিক এবং প্রশাসনিক দুর্নীতির বড় কারণ তার অনুপস্থিতি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৪ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের সময় রাষ্ট্রপতি প্রদত্ত নিয়োগ পত্রে তাঁকে ক্যাম্পাসের প্রধান নির্বাহী হিসেবে সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু তিনি এই নির্দেশ উপেক্ষা করে ঢাকায় বসেই ক্যাম্পাস পরিচালনা করেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট, সিন্ডিকেট মিটিংসহ গুরুত্বপূর্ণ সভা সমূহ ঢাকায় অনুষ্ঠিত করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ একাধিকবার এ বিষয়ে তাঁর কাছে লিখিত এবং মৌখিকভাবে জানালেও তিনি কোন তোয়াক্কা করেননি। ফলে, শিক্ষকগণ তাঁর এই কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাতে অভিনব এই কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করেন।

শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. গাজী মাজহারুল আনোয়ার বলেন, দিনের পর দিন উপাচার্য ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থাকবেন এটা মেনে নেওয়া যায়না। সে কারণে আমরা এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।

এদিকে, অধিকার সুরক্ষা পরিষদের এসব কর্মকাণ্ডকে ‘ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার পায়তারা’ আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদ করেন ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ’র সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সংগঠন নব-প্রজন্ম শিক্ষক পরিষদ।

এর আগে, গত মাসের ২০ তারিখ এ হাজিরা খাতা প্রথম স্থাপন করা হয়। এরপর ২ মার্চ দিবাগত রাতে বোর্ডটি চুরি হয়। অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিব বিষয়টি রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত জানান এবং তাজহাট থানায় একটি জিডি করেন। বোর্ডটি না পাওয়ার কারণে নতুন দুটি বোর্ড টাঙানো হয়েছে বলে অধিকার সুরক্ষা পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক ও ম্যানেজম্যান্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান বলেন, ‘ উপাচার্যের অনেকগুলো অনিয়ম দুর্নীতির মধ্যে বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্যের অনুপস্থিতি। উপাচার্য কি পরিমাণ অনুপস্থিত থাকলে তাকে উপস্থিত রাখার জন্য একটি বোর্ড স্থাপন করা যায়! আমরা চাই উপাচার্য নিয়মিত ক্যাম্পাসে উপস্থিত থেকে ক্যাম্পাস পরিচালনা করুক।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮০ জনেরও বেশী শিক্ষক রয়েছে। কিন্তু হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া অধিকার সুরক্ষা পরিষদের এসব কর্মসূচিতে কেইউ আসেনি। কারণ, অধিকাংশ শিক্ষকগণ পড়াশোনা, গবেষণা এবং একাডেমিক কাজকেই কাজ বলে মনে করেছেন, এসবকে নয়। তবে আমরা বাক-স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। এজন্য সবাইকে মতামত প্রকাশের সুযোগ দিয়েছি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর