প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা স্থায়ীকরণের উদ্যোগ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বাতিল না করে বরং এই পরীক্ষা স্থায়ী কাঠামোতে নেওয়ার লক্ষ্যে বোর্ড গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। আর এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকেরা। তারা বলছেন, গত ১০ বছরে প্রায় ২ কোটি শিশুর শৈশব আমরা নষ্ট করে ফেলেছি। নতুন করে শিশুদের শৈশব নষ্ট করতে চাই না। তাই পঞ্চম শ্রেণিতে চলমান এই সমাপনী পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানান তারা।

দেশে ২০০৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা চালু হয়। পাবলিক পরীক্ষা হিসাবে ঘোষণা না দিলেও অভিন্ন প্রশ্নে সারাদেশে একযোগে এই পরীক্ষা শুরু হয়। ফল প্রকাশও হয় কেন্দ্রীয়ভাবে। শুরু থেকেই এই পরীক্ষা নিয়ে অভিভাবকদের তীব্র আপত্তি ছিল। কিন্তু এই আপত্তি আমলে না নিয়ে এখনো প্রক্রিয়াটি চালু রাখা হয়েছে।

অভিভাবকেরা বলছেন, পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে শুরু হয় এক ধরনের প্রতিযোগিতা। স্কুলের ফল ভালো করার জন্য প্রতি মাসেই পরীক্ষা নেওয়া হয়। বাধ্যতামূলক কোচিং চালু হয়। এই পরীক্ষার কারণে শিশুদের মাঝে নেই আনন্দ-ফুর্তি, মাঠে খেলার সুযোগ থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, তাকে ঘরে বন্দি করে পাঠ্যপুস্তকে আবদ্ধ করে ফেলা হয়েছে। বছরের প্রথম দিন থেকেই তার ধ্যানজ্ঞান হয়ে ওঠে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া।

কিন্তু এই পরীক্ষা বাতিলে মন্ত্রণালয়ের কোনো উদ্যোগ নেই। বরং এই পরীক্ষাকে স্থায়ী কাঠামোতে নেওয়ার জন্য নানা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সারাদেশে ৬৫ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রতি বছর ৩০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। অধিকসংখ্যক পরীক্ষার্থীর চাপ সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকর্তারা। পরীক্ষা সামাল দিতে গিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অন্য সব কাজ স্থবির হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় শিক্ষা বোর্ড গঠন করতে চায় মন্ত্রণালয়। তার আলোকে প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড গঠনের আইন তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে।বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিদরা যে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ সালে প্রণয়ন করেছিলেন, সেটি বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেই। এই নীতি বাস্তবায়ন হলে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা অষ্টম শ্রেণিতে গিয়ে হতো। পঞ্চম শ্রেণির শিশুদের আর চাপের মুখে পড়তে হতো না।

অন্যদিকে যে শিক্ষা আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে তাও শিক্ষানীতি বিরোধী। পঞ্চম শ্রেণির এই পরীক্ষা বহাল রাখার ইঙ্গিত আছে এই আইনে। প্রস্তাবিত আইনে বিদ্যমান চার স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক, দশম শ্রেণি পর্যন্ত মাধ্যমিক এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি উচ্চ মাধ্যমিক স্তর। এর পরে শুরু উচ্চশিক্ষা স্তর।

আমেনা বেগম নামে এক অভিভাবক জানান, তার সন্তান এবার পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে। বছরের শুরু থেকেই নানামুখী চাপ শুরু হয়ে গেছে। স্কুল থেকে প্রতি মাসেই পরীক্ষার আয়োজন করছে। সেই পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য সারাক্ষণ বই নিয়ে থাকতে হচ্ছে। এছাড়া শিশুর মধ্যে পরীক্ষাভীতিও কাজ করছে।

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমার কাছে এটা খুবই অপ্রয়োজনীয় একটা পরীক্ষা মনে হয়। শিশুদের কাছে এটা একটা বোঝার মতো। শিশুরা তোতা পাখির মতো পড়া মুখস্থ করে পরীক্ষার হলে বসছে। এ ধরনের পরীক্ষার কোনো অর্থ নেই। আদর্শিকভাবে আমি এই পরীক্ষার ঘোর বিরোধী।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এই পরীক্ষা চালুর সিদ্ধান্তটিও কোনো গবেষণাপ্রসূত নয়। ঝরে পড়া রোধে এই পরীক্ষা থাকা উচিত সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলেও অভিভাবকেরা এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর