ক্রীড়াক্ষেত্রে মেয়েরা সাফল্যে এগিয়ে প্রাপ্তিতে পিছিয়ে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে সাফল্যের তুলনা করলে দেখা যাবে প্রায় সবক্ষেত্রেই এগিয়ে রয়েছে নারীরা। অথচ সেই তুলনায় যখনই তাদের প্রাপ্তির খাতা খুঁজতে যাওয়া হয়, সবক্ষেত্রেই দেখা যায় বৈষম্যের শিকার নারী ক্রীড়াবিদরা। বেতন ভাতা থেকে শুরু করে নানা বিষয়ে বাধা তাদের ক্ষেত্রে একটি স্বাভাবিক বিষয়। তবে সব বাধা অতিক্রম করেই এগিয়ে যাচ্ছেন নারীরা, ছিনিয়ে আনছেন বিজয়ের মুকুট।

ক্রিকেট, ফুটবল থেকে শুরু করে অন্যান্য অনেক ক্রীড়া ইভেন্টেই বারবার লাল সবুজের পতাকাকে বিশ্ব দরবারে সম্মানের সঙ্গে তুলে ধরেছেন বাংলার নারী ক্রীড়াবিদরা। অথচ তবুও তাদের দিকে যেনো তাকানোর কেউ নেই। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেটই এর বড় উদাহরণ।

পুরুষ ক্রিকেটে প্রচারণা থেকে শুরু করে দর্শক ও পৃষ্ঠপোষকদের আগ্রহ সবই বেশি। এ কারণে অভিন্ন খেলা হলেও নারী দল পুরুষদের তুলনায় যৎসামান্য সম্মানী পান। এছাড়া ঘরোয়া ক্রিকেটেও তারা যেনো চূড়ান্ত অবহেলার শিকার। অনুশীলন থেকে শুরু করে অন্যান্য ব্যাপারেও কম সুবিধা পেয়ে থাকেন এদেশের নারী ক্রিকেটাররা।

এত প্রতিকূলতার মাঝেও দমে নেই নারী ক্রিকেট দল। তাদের হাত ধরেই প্রথমবারের মত আন্তর্জাতিক কোনো শিরোপা এসেছে বাংলাদেশে। ভারতকে হারিয়ে এশিয়া কাপের সেই শিরোপা অর্জন ছাড়াও আইসিসি নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে টানা দুইবার (২০১৮, ২০১৯) চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সালমা বাহিনী। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার অলিম্পিকখ্যাত এসএ গেমসে গতবারই প্রথমবারের মতো অন্তর্ভূক্ত হয় নারী ক্রিকেট। বলা বাহুল্য, সেই আসরেই চ্যাম্পিয়ন হিসেবে বাংলাদেশের নাম লেখান নারী ক্রিকেটাররা।

ক্রিকেটের পর বর্তমানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় জনপ্রিয় খেলা ফুটবল। সেখানেও প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন নারীরা। পুরুষ দল যেখানে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পেতে হিমশিম খায় সেখানে ২০১৮ সালের সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা।

এছাড়া ২০১৯ সালের বঙ্গমাতা আন্তর্জাতিক অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবলে যুগ্মভাবে, ২০১৮ সালের জকি কাপ ও ২০১৬ এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন আয়োজিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা লাভ করে বাংলাদেশ নারী দল।

অ্যাথলেটিকসের ক্ষেত্রে মেয়েরা যেন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে। ২০১৯ সালের এসএ গেমসে আরচ্যারীতে দশটি ইভেন্টের সবগুলোতেই সোনা জিতে বিরল রেকর্ড করে বাংলাদেশ। এর পেছনে বড় অবদান ছিল নারী তীরন্দাজদের। সেবার দলগত ইভেন্টে সোনা জয়ের ক্ষেত্রে নারীর সমান থাকলেও ব্যক্তিগত ইভেন্টে এগিয়ে ছিল তারাই। নারীরা ব্যক্তিগত ইভেন্টে ছয়টি স্বর্ণপদক লাভ করলেও পুরুষরা পাঁচটির বেশি সোনা আনতে পারেননি।

কোনো আন্তর্জাতিক গেমসে একদিনে সর্বোচ্চ সাতটি স্বর্ণ জিতেছে বাংলাদেশ। এমন সাফল্যও এসেছে নারীদের হাত ধরেই। ভারোত্তোলনে মাবিয়া আক্তার সীমান্ত একদিনে দুটি স্বর্ণপদক লাভ করেন। এমন সাফল্য নেই বাংলাদেশের আর কোনো ক্রীড়াবিদের। এছাড়া এসএ গেমসের এই আসরে ১৯টি স্বর্ণপদক লাভ করে বাংলাদেশ। যার ১১টি এসেছে নারী অ্যাথলেটদের হাত ধরে।

এর আগে ২০১৬ সালের এসএ গেমসে বাংলাদেশ যে চারটি স্বর্ণপদক জয় করেছিল তার তিনটিই নিয়ে আসেন মেয়েরা।

বাংলাদেশের হয়ে ফিফা নারী রেফারি হিসেবে কাজ করছেন সাবেক নারী ফুটবলার জয়া চাকমা ও সালমা ইসলাম মনি। এছাড়া বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো পুরুষ ফুটবল দলের নারী কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ২৬ বছর বয়সী বাগেরহাটের মেয়ে মিরোনা। এভারেস্ট জয়ের মতো কঠিন ও সম্মানজনক অর্জনেও পুরুষদের সমান সাফল্য রয়েছে বাংলাদেশের মেয়েদের।

এত সাফল্যের পরও প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা পান না এদেশের নারীরা। তবে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করছে তারা। ভবিষ্যতে আরো সাফল্য পাবে নারীরা, সেই সঙ্গে কমে আসবে বৈষম্য এমন প্রত্যাশা নিয়ে ডেইলি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সবাইকে বিশ্ব নারী দিবসের শুভেচ্ছা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর