ফেনীতে গ্যাস লুটপাট বৈধ গ্রাহকরা সংকটে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ফেনী শহরের সহদেবপুরের মিত্রা সাহা স্বামী, সন্তান ও শ্বশুরসহ পরিবারের পাঁচ সদস্যের খাবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। বড় ছেলে সকালে স্কুলে যায়। অফিসের কাজে স্বামী রিপন সাহাকেও সকাল সকাল বের হতে হয়। কিন্তু সময়মতো তিনি খাবার তৈরি করতে পারেন না। সকালের নাস্তা, দুপুর ও রাতের খাবার তৈরি করা নিয়ে প্রতিদিন তাকে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়।

গ্যাসের চাপ না থাকায় তিনি চুলা জ্বালাতে পারছেন না। এ চিত্র শুধু দু-একটি বাসাবাড়ির নয়, জেলার প্রায় প্রতিটি বাড়ির চিত্র একই রকম। অথচ জেলার সর্বত্র গ্যাস লুটপাটের মহোৎসব চলছে। বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেম লিমিটেডের আওতাধীন ফেনীতে গ্যাস সংকট নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

জানা গেছে, ফেনী ও কুমিল্লা কার্যালয়ের অসাধু কর্মকর্তা ও কালো তালিকাভুক্ত কিছু ঠিকাদার অবৈধ সংযোগ দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ভুয়া চাহিদাপত্র ও কার্যাদেশ তৈরি করে তারা প্রতিনিয়ত অবৈধ সংযোগ দিচ্ছে। এতে সরকার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। অপরদিকে, অপরিকল্পিতভাবে গ্যাস সংযোগ দেয়ায় লাইনে গ্যাসের চাপ থাকছে না। ফলে তীব্র গ্যাস সংকটে চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। অফিসে বছরের পর বছর হাজারও আবেদন ঝুলে থাকলেও গ্যাস সংযোগ দেয়া হচ্ছে না।

বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেম লিমিটেড সূত্র জানায়, ২০১৬ সাল থেকে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গ্যাস সংযোগ দেয়া বন্ধ রয়েছে। তবুও ফেনী শহরের পশ্চিম রামপুর, সোনাপুর, উত্তর সহদেবপুর, ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া এলাকায় ঠিকাদার ও অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে চোরাই পথে নতুন অবৈধ সংযোগ দেয়া হচ্ছে। জেলায় প্রায় ৫০ হাজার অবৈধ সংযোগ রয়েছে। এসব এলাকা ভাগ করে ভুয়া রশিদ দিয়ে ফিটাররা (মাঠকর্মী) গ্যাস বিল উত্তোলন করছে।

অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে না, যাচ্ছে অসাধু কর্মকর্তাদের পকেটে। অনেক ঠিকাদার ব্যাংকের সিল ও স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতি করে ডিমান্ড নোট ও চুক্তিপত্রের টাকাও আত্মসাৎ করছে। এতে করে বড় অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। আবার বাসাবাড়িতে দুই থেকে চারটি লাইনের অনুমোদন থাকলেও একাধিক চুলা জ্বালানো হচ্ছে। এ কারণে গ্যাসের চাপ না থাকায় বৈধ গ্রাহকরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। মাঝেমধ্যে কর্তৃপক্ষ লোক দেখানো কিছু কিছু অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে।

শহরের পেট্রোবাংলা এলাকার বাড়ি মালিক জসিম উদ্দিন জানান, তার সাততলা বাড়িতে ২৯টি পরিবার ভাড়া থাকে। সবার বাসায় গ্যাস সংযোগ থাকা সত্ত্বেও দিনের বেশির ভাগ সময় চুলা জ্বলে না। ভাড়াটিয়ারা গ্যাসের বিল দিয়েও চুলা জ্বালাতে পারে না। গৃহিণী মিতা সরকার জানান, ভোর ৪টার দিকে গ্যাস চলে যায় এবং রাত ১০টার পর আসে। গ্যাস সংযোগ থাকা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে সিলিন্ডার ব্যবহার করতে হয়। প্রতি মাসে অতিরিক্ত টাকাও ব্যয় করতে হয়।

বাখরাবাদ কর্তৃপক্ষ জানায়, জেলায় প্রায় ৩২ হাজার আবাসিক ও ব্যবসায়িক গ্রাহক রয়েছেন। অসাধু ঠিকাদারদের তালিকা করে ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অবৈধ গ্যাস সংযোগের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের কেউ জড়িত থাকলে তাকে ছাড় দেয়া হবে না। পাশাপাশি গ্যাসের তীব্র সংকটের কথা মাথায় রেখে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে অভিযান চালানো হবে বলে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। কবে নাগাদ গ্যাস সংকটের অবসান হবে সে ব্যাপারে বলতে পারেনি ফেনী বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কর্তৃপক্ষ।

বাখরাবাদ ডিস্ট্রিবিউশনের ফেনীর ব্যবস্থাপক মো. শাহাব উদ্দিন যুগান্তরকে জানান, কয়েক মাসে জেলার বিভিন্ন এলাকায় কয়েক হাজার ফুট অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ফেনী শহরের পশ্চিম রামপুরে প্রায় দুই হাজার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে মন্ত্রণালয়ের আদেশ থাকলেও পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট না পাওয়ায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বিলম্ব হচ্ছে। কালো তালিকাভুক্ত ঠিকাদারদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জেলায় কি পরিমাণ অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে তার পরিসংখ্যানও দিতে পারেনি বাখরাবাদ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর