জনপ্রিয় হচ্ছে পার্চিং পদ্ধতির ধান চাষ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পার্চিং পদ্ধতিতে ইরি-বোরো ধান চাষ। আবাদকৃত জমির ধানক্ষেতের ক্ষতিকর পোকা দমনের ওই প্রাকৃতিক পদ্ধতির নাম ‘পার্চিং’।

স্থানীয় কৃষকদের কাছে এ পদ্ধতি দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। এতে কৃষকরা কীটনাশক প্রয়োগ না করেও মাজরা পোকা ও পাতামোড়ানো পোকা দমন করছে। কীটনাশক ব্যবহার কমানোর ফলে উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এ পদ্ধতির দিকে স্থানীয় কৃষকরা ঝুঁকছেন।

উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, পার্চিং মানে আবাদকৃত ধান জমিতে ডালপালা পুঁতে দেয়া। ফসলের জমিতে ডাল, কঞ্চি, বাঁশের খুঁটি এগুলো পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করায় পাখি ক্ষতিকারক পোকার মথ, বাচ্চা, ডিম খেয়ে পোকা দমন করে। মূলত ফিঙে, শালিক, বুলবুলি, শ্যামা, দোয়েল, সাত ভায়রা জাতীয় পাখি পার্চিংয়ে বসে পোকা ধরে খায়। ফসলের পোকা দমনের এ পদ্ধতি বলতে গেলে  পরিবেশ বান্ধব। ফসল রোপণের পরপরই পার্চিং স্থাপন করতে হয়। ফসলের সর্বোচ্চ উচ্চতা থেকে কমপক্ষে এক ফুট উচ্চতায় পার্চিং করা উচিত বলে তারা জানান।

পৌর শহরসহ উপজেলার ৫টি ইউপিতে চলতি মৌসুমে  প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা  হয়েছে। শতভাগ পার্চিয়ের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। বর্তমানে ৬০ শতাংশ বোরো জমিতে পার্চিং হয়ে গেছে। দিন দিন পার্চিং পদ্ধতি উপজেলার কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে। আগে স্থানীয় কৃষকরা ধান লাগানোর পর জমিতে পার্চিং করতে চাইতেন না। ফলে তাদের জমিতে ফলন ও কম হতো। বর্তমানে এ পদ্ধতি কৃষকদের খুবই উপকারে আসছে আগের চাইতে ফলন ও বাড়ছে।

সরেজমিনে পৌর শহরের তারাগন, দেবগ্রাম, উপজেলার মোগড়া, মনিয়ন্দ ধরখার এলাকার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, চলতি মৌসুমের বোরো জমিতে স্থানীয় কৃষকরা বাঁশের আগা, কঞ্চি, গাছের ডাল প্রভৃতি পুঁতে দিয়েছেন। অনেকে এখনো ডাল পুঁতছেন। অনেক জমির আলের পাশে এবং জমির মাঝখানে সারিবদ্ধভাবে ধনচে লাগানো হয়েছে। এসব পার্চিংয়ে ফিঙে, শালিক প্রভৃতি পাখি বসে থাকতেও দেখা যায়।

মোগড়া এলাকার কৃষক মো. সুরুজ মিয়া জানায়, চলতি মৌসুমে তিনি ৩ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন। আবাদকৃত বেশি ভাগ  জমির মধ্যে তিনি বাঁশের কঞ্চি ও গাছের ডাল পুঁতে রেখেছেন। সেখানে পাখি এসে বসছে। ধান জমির ক্ষতিকর পোকামাকড় ধরে খাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, গত কয়েক বছর ধরে তিনি এ পদ্ধতিতে ধান চাষ করছেন। এ পদ্ধতিতে ধান চাষের পর থেকে প্রয়োজনে কম কীটনাশক ব্যবহার করে ধান উৎপাদন করছেন তিনি।

কৃষক মো. জামাল মিয়া  বলেন, পোকামাকড়ের হাত থেকে ধানের গাছ রক্ষা করতে চারা লাগানোর পর থেকেই তিনি গাছের ডাল ও কঞ্চি পুঁতে রেখেছেন। পাখিগুলো ক্ষতিকর পোকামাকড় ধরে খাচ্ছে। এ পদ্ধতিতে ধান চাষ করে উৎপাদনের খরচও কমছে। এছাড়া ধানের ফলনও ভালো হচ্ছে  বলে তিনি জানান। অন্য বছর যেখানে তাকে তিন-চার দফা কীটনাশক ব্যবহার করতে হতো, এ বছর মাত্র একবার তিনি কীটনাশক ব্যবহার করেছেন।

জামাল মিয়ার মতো উপজেলার বেশির ভাগ কৃষক পাখি বসার উপযোগী বাঁশের আগা, কঞ্চি, গাছের ডাল প্রভৃতি পুঁতে বোরো জমিতে ক্ষতিকর পোকা দমন করছেন। অনেক জমিতে মাঝেমধ্যে লাগিয়েছেন ধঞ্চে গাছ। এতে কৃষকেরা উপকার পাচ্ছেন। কীটনাশক কম লাগায় কৃষকেরা খুশি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা আক্তার বলেন, ক্ষতিকর পোকা দমনে পার্চিং পদ্ধতি খুব কার্যকর। এই পদ্ধতি কাজে লাগালে কীটনাশকের ব্যবহার কমে যায়। সেসঙ্গে কৃষকের উৎপাদন খরচ ও কম হয়। বালাইনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখা যায়। প্রতিবছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে পার্চিং পদ্ধতির চাষ। এ বছর এখন পর্যন্ত ৬০ শতাংশ জমি পার্চিংয়ের আওতায় এসেছে। আশা করছি স্বল্প সময়ের মধ্যে সেটা শতভাগ হয়ে যাবে।

 

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর