কৃষি যান্ত্রিকীকরণে স্থবিরতা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কৃষিতে একদিকে যেমন শ্রমিক সঙ্কট তীব্র হচ্ছে, আরেকদিকে কমছে কৃষি জমি। ক্রমবর্ধমান জনসংখ‌্যার খাদ্য চাহিদা পূরণের পাশাপাশি শ্রম ও সময় সাশ্রয়ের জন্য তাই গুরুত্ব বাড়ছে কৃষি যন্ত্রপাতির।

কৃষি যন্ত্রগুলোকে ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে প্রয়োজন ভর্তূকি সহায়তা। সেই সহায়তা দিতে অর্থমন্ত্রণালয়ের কাছে ৪০০ কোটি টাকা চেয়েছিল কৃষি মন্ত্রণালয়। তবে অনুমোদন মিলেছে মাত্র ১০০ কোটি টাকার কিছু বেশি। তবে এ পরিমাণ অর্থ নিয়ে হতাশা তৈরি হয়েছে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৪০০ কোটি টাকা চেয়ে কৃষিসচিব অর্থসচিব বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। পরবর্তীতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে একটি নীতিমালা চেয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। নীতিমালা না থাকায় পরে কৃষি মন্ত্রণালয় খসড়া নীতিমালা সংযুক্ত করে অর্থ ও মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠায়। সেটি মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন করলে পরবর্তীতে অর্থ মন্ত্রণালয় ১০০ কোটি টাকার কিছু বেশি অর্থ ছাড় করে।

প্রকল্পের মাধ্যমে যে সহায়তা দেওয়া হতো সেটি ২০১৯ সালের জুনে শেষ হয়েছে। কার্যত তখন থেকেই বন্ধ রয়েছে যান্ত্রিকীকরণে ভর্তূকি কার্যক্রম। এরপর গত কয়েক মাস ধরেই সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থা কৃষির যান্ত্রিকীকরণের বিশাল সহায়তা দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিচ্ছেন। এতে কৃষক আবারো আগ্রহী হচ্ছেন যন্ত্র কেনায়।

এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘কৃষি ব্যবস্থাকে যান্ত্রিকীকরণ করতে চায় সরকার। অর্থমন্ত্রণালয় থেকে আলাদা ৪০০ কোটি টাকার থোক বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। অর্থ বরাদ্দের আগ থেকেই মাঠ পর্যায়ে চাহিদা নিরুপন শুরু করেছি। চূড়ান্ত হিসেব স্বল্প সময়ের মধ্যেই পেয়ে যাব। তবে বরাদ্দ যা পেয়েছি তার চেয়ে হয়তো আরো বেশি অর্থের প্রয়োজন হবে। মাঠ পর্যায়ে যে চাহিদা তৈরি হয়েছে সেগুলো মেটানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। কেননা বরাদ্দকৃত অর্থ আমরা খরচ করতে পারলে আরো বেশি বরাদ্দ পাব। ফলে ভর্তূকি সহায়তা নিয়ে কৃষকদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।’

জানা গেছে, দেশে কৃষিতে ট্রাক্টর ব্যবহার হচ্ছে প্রায় ৫০ হাজার এবং পাওয়ার টিলারের ব্যবহার হচ্ছে প্রায় সাত লাখ। এসব যন্ত্রের মাধ্যমে মাটি কর্তনের প্রায় ৯০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে।

ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যবহার হয় কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার। এই যন্ত্রের চাহিদা রয়েছে এক লাখের বেশি। কিন্তু দেশে ব্যবহার হচ্ছে এক হাজারের কম। আর ধানের বীজ বোনার জন্য রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের প্রয়োজন দুই লাখ। অথচ দেশে এ যন্ত্রটির ব্যবহার হচ্ছে এক হাজারেরও কম। শুধু ধান কাটার যন্ত্র রিপারের চাহিদা এক লাখ। অথচ দেশে এ যন্ত্র রয়েছে পাঁচ হাজার। আর ধান বোনার জন্য পিটিও সিডার আছে মাত্র আড়াই হাজার। দেশে এই যন্ত্রের চাহিদা রয়েছে এক লাখ।

একটি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টারের দাম ২৫-৩০ লাখ টাকার মধ্যে। বপন ও কর্তন যন্ত্রের দাম বেশি হওয়ায় কৃষকদের জন্য ক্রয় কষ্টসাধ্য। সরকার ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দিলে কৃষকদের মধ্যে কিছুটা আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সেটি গত নয় মাস ধরে বন্ধ থাকায় বিক্রিতে এক ধরনের ভাটা পড়েছে। কিছু মাঝারি ও হালকা কৃষি যন্ত্রের বিক্রি হলেও বড় কৃষি যন্ত্র বিক্রি প্রায় শূন‌্যের কোঠায় পৌঁছেছে।

এ বিষয়ে দি মেটাল প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী সাদিদ জামিল বলেন, ‘আধুনিক চাষাবাদে উন্নত প্রযুক্তি ও কম্বাইন্ড হারভেস্টরের ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ক্রয়ক্ষমতা না থাকা ও অর্থসহায়তার অভাবে বেশি দামের এসব যন্ত্রপাতি কিনতে পারছেন না কৃষক। সেখানে সরকারের ভর্তূকি সহায়তা কার্যকর করার পাশাপাশি অর্থায়ন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। কেননা এখনও ব্যাংকগুলো সরাসরি কৃষককে ঋণ না দিয়ে কোম্পানিগুলোকে ঋণ দিচ্ছে। সেই ঋণ দিয়েই কৃষক মেশিন ক্রয় করছে। এছাড়া যন্ত্র আমদানি শুল্ক ব্যবস্থা কৃষকের সামর্থের মধ্যে আনার জন্য ভর্তূকি সহায়তা বাড়াতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর