হাওর বার্তা ডেস্কঃ অনেকেরই ধারণা, নারীদের সব সৌন্দর্য থাকে ঘন কালো লম্বা চুলে। সুন্দর চুল ছাড়া একজন নারীর সৌন্দর্যের বর্ণনা পরিপূর্ণতা পায় না। তবে স্বাভাবিক এই ধারণাটিকে মিথ্যা প্রমাণ করে বিশ্বে নতুন এক নজির গড়লেন মৌসুমি হুদা।

চুলহীন এক অসাধারণ নারী তিনি। আজ যার সাহসিকতা উদাহরণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে হাজারো হতাশায় ভোগা মানুষদের জন্য। জীবনে হাজারো চেষ্টা করে সফলতার বদলে ব্যর্থ হয়ে যন্ত্রণায় ভুগছেন অনেকেই। বিশেষ করে এখনকার যুব সমাজ নানান হতাশায় ভুগে জীবন ও ক্যরিয়ার ধ্বংস করছে। তাদের জন্য মৌসুমি হুদার মত একজন অসাধারণ নারীর গল্প প্রেরণা যোগায়।

যিনি নিজের দুর্বলতাকে স্বকীয়তায় পরিণত করেছেন। ডেইলি বাংলাদেশের আজকের আয়োজনে থাকছে মৌসুমী হুদার সেই অসাধ্যকে সাধ্য করার গল্প। চলুন জেনে নেয়া যাক-

মৌসুমী হুদামৌসুমীহুদারাজশাহীর মেয়ে মৌসুমী হুদা। তিনি একজন মডেল, পাশাপাশি চাকরি করেন। সঙ্গে তিনি একজন গৃহিণীও।

ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় টাইফয়েডের কারণে সব চুল ঝরে যায় মৌসুমীর। সেখান থেকেই শুরু তার জীবনের খারাপ সময়। শত গঞ্জনা শুনেই এসএসসি পাশ করেন তিন। যখন তিনি কলেজে যান তখন, আশেপাশের প্রতিবেশীরা তাকে নিয়ে নানান কথা বলতে শুরু করে। ‘মেয়ে বড় হয়ে যাচ্ছে, মেয়ের বিয়ে দিচ্ছো না? মেয়ের তো এরকম সমস্যা’। নিত্যনতুন এসব কথার শিকার হতে থাকেন তিনি।

মৌসুমীর বিয়ের জন্য তখন আশেপাশের প্রতিবেশীরা ডিভোর্সি ছেলে, মাথায় সমস্যা আছে এরকম পাত্র খুঁজে আনতো। কারণ মেয়ের চুল নাই। রাস্তাঘাটে মানুষ তাকে দেখে হাসতো। একেক নাম দিয়ে রাগাতো। একসময় তিনি অনেক হীনমন্যতায় ভুগতে শুরু করেন। চাকরি করতেন, তবুও হতাশায় ভুগতেন।

এর কারণ হচ্ছে তার বাবা-মা মন খারাপ করে থাকতেন। বিশেষ করে তার বাবা। তার বাবা প্রতি রাতে এসে মাথার কাছে বসে কাঁদতেন। এই বলে যে, ‘সবার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আমার মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না’।

মৌসুমী হুদামৌসুমী হুদাধীরে ধীরে তিনি সবার কাছে কেমন অপ্রিয় হয়ে উঠতে লাগলেন। তাকে কেউ  দুই চোখে দেখতে পারে না, এমনই কিছু একটা প্রকাশ করতেন। একসময় এসব চাপ থেকে বাঁচতে ২০১৫ সালে রাজশাহী থেকে ঢাকায় চলে আসেন মৌসুমী। বন্ধুদের সহায়তায় ভর্তি হন মডেলিং ক্লাসে।

মৌসুমী বলেন, খুবই নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা করতাম সব সময়। আমার দ্বারা হবে না, আমি কাজ করতে পারবো না। কারণ বেশিরভাগই চুলের ফ্যাশন ছিল। এ নিয়ে আমার অনেক কষ্ট হয়েছে।

প্রথম এক থেকে দেড় বছর র্যাম্পে পরচুলা পরেই হেঁটেছিলেন তিনি, তাও খুবই কম। মাসে অন্যদের দশটা কাজ হলে তার হতো একটা।

তিনি বলেন, প্রথমে মানুষ আমাকে কাজ দিত না আমার চুলের জন্য। এখন বলে তোমাকে পরচুলা ছাড়াই কাজ করাবো।

২০১৬ সালের শেষের দিকে প্রথম পরচুলা ছাড়া র্যাম্পে হাঁটেন মৌসুমী। সেদিন তিনি অনেক ভয়ে ছিলেন, অবস্থা এমন যে জ্বর চলে এসেছিল। তারপরও সেদিন ১০৩ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে স্টেজে হেঁটেছিলেন তিনি।

মৌসুমী হুদামৌসুমী হুদাতিনবলেন, আমার মাথায় ট্যাটু করে দেয়া হয়েছিল। সবাই আমাকে উৎসাহ দিয়েছিল যে, মৌসুমী তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে, স্টেজে অনেক সুন্দরভাবে হেঁটে আসো।

এখন পর্যন্ত একশর মতো অনুষ্ঠানে মডেল হিসেবে হেঁটেছেন মৌসুমী।

তিনি আরো বলেন, আমি একসময় ভাবতাম আমার চুল নেই। কেউ কাজ দেবে না, কিছুই করতে পারবো না। এখন সেই ধারণা মিথ্যায় পরিণত হয়েছে। অনেকে কালো বলে মন খারাপ করে। তা ঠিক নয়, আমি যখন ছোট ছিলাম সবাই আমাকে দেখে কেমন যেন করতো। এখন তারাই আমার সঙ্গে এসে ছবি তোলে।

তাই যাদের যেটা দূর্বলতা ওটাই তাদের তুলে ধরা উচিত শক্তি হিসেবে। নিজেকে নিজে অনুপ্রাণিত করা উচিত সবার আগে। ইচ্ছা ও চেষ্টা দুটোই তীব্র করা উচিত। তবেই দেখা মিলবে সফলতার। মৌসুমী হুদা আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণার একটি অসাধারণ গল্প।

সূত্র: বিবিসি

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর