সেই জাহাজের রুমবন্দি ৫০০ যাত্রী মুক্ত

হাওর বার্তা ডেস্কঃ যাত্রীরা প্রমোদ ভ্রমণ করতে উঠেছিলেন জাহাজটিতে। এখন সেখানে শুধু বিষাদের ছায়া। ঘোরাফেরা তো নয়ই, কারও সঙ্গে দেখাও করা যায় না, শুধু রুমের মধ্যেই বন্দি। সেই অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছেন প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসের সুস্থ ৫শ’ যাত্রী।

কোয়ারেন্টাইন করে রাখা ডায়মন্ড প্রিন্সেস জাহাজের সুস্থ যাত্রীরা ১৭ দিন পর মুক্ত হয়েছেন। করোনা ভাইরাস পরীক্ষায় ফল নেগেটিভ এসেছে এমন ৫০০ যাত্রী বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) জাহাজ ছাড়ার অনুমতি পেয়েছেন।

গত ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে জাহাজটিতে কোয়ারেন্টাইন (রোগ সংক্রমণের আশঙ্কায় পৃথক রাখা) করে রাখা হয় ৩ হাজার ৭০০ যাত্রীকে। যারা ৫৬টি দেশের নাগরিক। জাহাজ থেকে হংকংয়ে নেমে যাওয়া এক যাত্রীর শরীরে করোনা ভাইরাস ধরা পড়ার পর জাহাজটিকে জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়।

এরপর জাহাজে একের পর এক ব্যক্তি আক্রান্ত হতে থাকেন। চীনের বাইরে এই জাহাজে সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। জাহাজটিতে কমপক্ষে ৫৪২ জন ভাইরাস আক্রান্ত রয়েছেন।

জানা গেছে, জানালাবিহীন কেবিনে আটকে থাকতে থাকতে একঘেয়েমিতে ভুগেছেন অনেকে। জাহাজে ছয় বছরের ছেলেকে নিয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন ইয়ার্ডলি অং নামে এক যাত্রী। পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসার পর তিনি আবেগ-আপ্লুত হয়ে টুইটারে লেখেন, ‘নেগেটিভ! আমি, ছেলে, স্বামী, মা এবং বাবা! ধন্যবাদ ঈশ্বর আমাদের রক্ষা করার জন্য…এত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছি এখন।’

যাদের পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে, তাদের কর্মকর্তাদের তরফ থেকে একটি সনদ দেওয়া হচ্ছে। তবে সবাই ইয়ার্ডলির মতো ভাগ্যবান নয়। ব্রিটিশ যাত্রী ডেভিড আবেল এবং তার স্ত্রী স্যালির পজিটিভ এসেছে পরীক্ষার ফল।

ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ৩৮০ জন নাগরিকের অধিকাংশকেই গত সোমবার বিশেষ একটি বিমানে করে নিয়ে গেছে। এর মধ্যে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন ৪০ জন মার্কিন নাগরিক। তাদের জাপানেই চিকিত্সা দেওয়া হচ্ছে। গত মঙ্গলবার কানাডা জানিয়েছে, তারাও একটি বিমান ভাড়া করেছে। জাহাজে ২৫৬ জন কানাডার নাগরিক রয়েছেন, যাদের মধ্যে ৩২ জন প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

দক্ষিণ কোরিয়াও একটি বিশেষ বিমান পাঠাচ্ছে তাদের চারজন নাগরিককে নিয়ে যেতে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া এবং ব্রিটেনও তাদের নাগরিকদের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। এদিকে ভারতও ওই জাহাজে থাকা ভারতীয় ক্রুদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

এদিকে করোনা ভাইরাসে বেড়েই চলেছে মৃত্যু সংখ্যা। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) কেন্দ্রস্থল হুবাই প্রদেশে আরও ১০৮ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে চীনে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২১১২ জনে। বিশ্বব্যাপী এ সংখ্যা অন্তত ২১২০ জন।

করোনার থাবা থেকে বাঁচতে চুল কেটে ফেলতে হয়েছে চীনের নার্সদের। এতে দুটি উপকার হবে বলে মনে করেন তারা। প্রথমত, চুলের মাধ্যমে প্রাণঘাতী জীবাণুর সংক্রমণ এড়ানো যাবে। দ্বিতীয়ত, হাসপাতালে ঢোকার পর যে সুরক্ষাবর্ম তাদের পরতে হয়, তা বদল করাও অনেক সহজসাধ্য এবং কম সময়ের মধ্যে হবে। জরুরি সেবায় নিযুক্ত কর্মীরা এতই ব্যস্ত যে দিনে মাত্র একবার খাবার খাচ্ছেন।

ইতিমধ্যে কয়েকশ’ জাপানি সৈন্য জাহাজে উঠে পুরোদমে স্যানিটাইজেশনের কাজ শুরু করেছে। বিশেষ করে যেসব যাত্রী আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গেছেন, তাদের ছেড়ে যাওয়া কক্ষগুলো জীবাণুমুক্ত করার কাজ করছে সৈন্যরা।

জাপানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ১৯ তারিখ থেকে শুরু করে ২১ তারিখের মধ্যে জাহাজ থেকে যাত্রীদের নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সমস্ত যাত্রী ও ক্রুকে আলাদা করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ যাত্রী নেমে যাওয়ার পর জাহাজের হাজারেরও বেশি ক্রুকে আরও কিছুদিন কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর