নারী-শিশুর স্বাস্থ্যসেবায় সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তার মধ্যে গ্রামাঞ্চলে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। নারী ও শিশুস্বাস্থ্য রক্ষায় দেশজুড়ে এটি বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখছে।

একজন যোগ্য এবং সচেতন মা একটি সুস্থ ও শিক্ষিত জাতি উপহার দিতে পারেন। সুতরাং একজন শিশুর আগামী দিনের ভবিষ্যৎ তার মায়ের স্বাস্থ্য পরিচর্যার সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। মা যদি শারীরিকভাবে সুস্থ এবং সবল না থাকেন তাহলে গর্ভকালীন অবস্থা থেকে শুরু করে সন্তান প্রসবপরবর্তী শিশু প্রতিপালন সবই বিপন্ন হয়ে পড়ে। তাই মা ও শিশু স্বাস্থ্য উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। খবর বাসস’র

বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের অগ্রযাত্রায়। নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নানা প্রকল্পকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। মাতৃত্বকালীন ছুটি বাড়ানো থেকে শুরু করে গর্ভকালীন সময়ে ভাতা প্রদান এবং শিশুর বিশেষ সেবাপ্রদানে নানা রকম আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

নারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির একটি বিশেষ বিপজ্জনক পর্যায় স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া। একদম প্রথম অবস্থায় এ রোগ চিহ্নিত করা গেলে নিরাময় হতে তেমন সময় লাগে না।

মহিলা সমিতির সংগঠক ডা. মারুফী খান জানান, বাংলাদেশ মহিলা সমিতির উদ্যোগে প্রত্যন্ত অঞ্চল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গোকর্ণে ২০১১ সালে স্বাস্থ্য সচেতনতার আওতায় পিছিয়ে পড়া গোকর্ণ নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য পুষ্টির জন্য হরিদাসী উইম্যান এন চাইল্ড কেয়ার অ্যান্ড নিউট্রিশন সেন্টার চালু করা হয়। এর উদ্দেশ্য হতদরিদ্র, অসচেতন, অশিক্ষিত নারী ও শিশুদের পর্যাপ্ত পুষ্টির ওপর বিশেষভাবে নজর দিয়ে তাদের মূল স্রোতে ফেরানো এবং তাদের পুষ্টি নিশ্চিত করা।

তিনি জানান, এখানে গর্ভবতী মা এবং সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুদের সব ধরনের চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। এই কল্যাণমূলক সেবা কেন্দ্রটি নারী ও শিশুর পুষ্টিকর খাবার এমনকি দুগ্ধপানের মতো প্রয়োজনীয় আহারও সরবরাহ করা হচ্ছে।

এছাড়া সেখানে নিয়মমাফিক গর্ভকালীন মায়ের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানোর সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসাসেবার সুযোগ পাচ্ছেন গ্রামের নারীরা।

ডা. মারুফী বলেন, শুধু প্রাথমিক চিকিৎসাই নয়, নারীদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা যেমন স্তন ক্যান্সার কিংবা জরায়ুর নানা জটিলতা সবকিছুই এখানকার ল্যাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। এছাড়া নিয়মিত সভার মাধ্যমে জরায়ুমুখ ক্যান্সার সম্পর্কে বিশেষ সচেতন করতে ক্ষুদ্র পুস্তিকা বিতরণ করা হয় বলে জানান তিনি।

এদিকে দেশের উত্তরাঞ্চলের সাত জেলায় হতদরিদ্র পরিবারের ছয় লাখ নারী ও শিশুর পুষ্টি এবং স্বাস্থ্য নিরাপদ রাখার জন্য সরকার ‘ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রাম ফর দ্য পুওয়োরেস্ট (আইএসপিপি)’ বা ‘যত্ন ’ নামে প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৩৭৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক দুই হাজার ৩৪০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। বাকি ৩৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা বাংলাদেশ সরকার বহন করছে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পটি দেশের উত্তরাঞ্চলের সাত জেলার ৪৪৩ ইউনিয়নে অন্তঃসত্ত্বা নারীর স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, শিশুর পুষ্টি এবং মনোদৈহিক বিকাশে মা ও শিশুর কল্যাণে যত্ন নামে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় ছয় লাখ মা ও শিশু উপকারভোগী হবেন।

এছাড়া দেশের ২১টি জেলার সুবিধাবঞ্চিত নারী ও শিশুর প্রাথমিক স্বাস্থ্য, প্রজনন স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেবা প্রদান বিষয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে উন্নত এবং সমন্বিত প্রাথমিক স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেবা প্রদান করা এবং সেবা প্রদান ব্যবস্থাকে টেকসই করে তোলা এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ৫০ লাখের বেশি মানুষ প্রাথমিক স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেবা পাবেন।

প্রকল্পের পরিচালক ড. আবুল হোসেন জানান, সমন্বিত প্রাথমিক স্বাস্থ্য, প্রজনন স্বাস্থ্য ও পুষ্টি (পিএইচএন্ডএনএস) সেবা দিতে এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে প্রাথমিক স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসেবার সক্ষমতা বাড়বে। পাশাপাশি শহরের দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীর মাঝে উন্নত ও সমন্বিত প্রাথমিক স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেবাগ্রহীতার সংখ্যা বাড়বে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর